ঢাকা ০২:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

ঠাণ্ডায় জনজীবন বিপর্যস্ত, কয়েক জেলায় বৃষ্টি

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৮:১৫:২৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ৪২২ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মাঘের শুরু থেকেই শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে দেশের বিস্তীর্ণ জনপদ। গত কয়েকদিন ধরে ভালোভাবে দেখাও মিলছে না সূর্যের। হিমালয় থেকে ধেয়ে আসা হিম শীতল বাতাসে জবুথবু জনজীবন। আজও কুয়াশায় ঢেকে আছে দেশের বেশিরভাগ এলাকা। কনকনে শীতে অনেকটাই কাবু জনজীবন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সূর্যের দেখাই মিলছে না অনেক এলকায়। কুয়াশা আর ঠান্ডার সঙ্গে কোথাও কোথাও যুক্ত হয়েছে অসময়ের বৃষ্টি। এতে ঠান্ডার তীব্রতা বেড়েছে কয়েকগুণ। আর এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।

এদিকে আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুরে, ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অঞ্চলে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। আর রাজধানীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া ডিমলা আবহাওয়া অফিসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এক সপ্তাহ ধরে জেলার তাপমাত্রা ৯ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করলেও আজ ঘন কয়াশা না থাকায় সূর্যের দেখা মিলেছে। তবে সূর্যের তেজ না থাকায় হিমশীতল বাতাসে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে।

পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা আবারও ১০ ডিগ্রির নিচে নেমেছে। তৃতীয় দফায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কবলে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। এতে করে টানা শীতে বিপর্যস্ত উত্তরের এই প্রান্তিক জনপদ। এ অঞ্চলের জনজীবনে বইছে দুর্ভোগ, তেমনি কঠিন দারিদ্রতায় জীবনযাপন করছেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা।

বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ভোর ৬টায় একই তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। এ তাপমাত্রা রেকর্ডের মধ্য দিয়ে তৃতীয় দফায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে এ জেলায়।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী শনিবার পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এই বৃষ্টিপাতের কারণে শীতের দাপট বাড়লেও মেঘ কেটে গিয়ে সূর্য়ের তাপ বেড়ে জনজীবনে কিছুটা স্বস্তি ফিরবে।

আবহাওয়া অফিস বলছে, খুলনা, বরিশাল ও রাজশাহী বিভাগে বাড়তে পারে বৃষ্টি। আজ ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও রাজশাহী বিভাগে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলায় ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যশোরে ১৬ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণপশ্চিম অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

অসময়ে আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নেমেছে রাজশাহী মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা ও গোপালগঞ্জে। কনকনে ঠান্ডার সঙ্গে বৃষ্টিতে জেলার জনজীবন অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে। নানা কাজে বাইরে যারা বের হয়েছেন, তারা শীতল বৃষ্টির ফোঁটায় কাবু হয়ে পড়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) সকালে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে রাজশাহীতে। একই সঙ্গে সকাল ৬টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঘন কুয়াশা ও মেঘে আকাশ ঢেকে থাকায় এখনও সূর্যের দেখা মেলেনি। মেঘে আকাশ ঢেকে রয়েছে। মেঘ কেটে গেলে সামনের দিনগুলোতে তাপমাত্রা আরও নিচে নামতে পারে। সারাদেশে চলা সপ্তাহব্যাপী তীব্র শীতে নাকাল জনজীবনের পাশাপাশি ফসলের ক্ষতি নিয়েও কিন্তু উদ্বিগ্ন কৃষকরা।

এরই মধ্যে চুয়াডাঙ্গায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বুধবার (১৭ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টার সময় থেকে জেলায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়া শুরু হয়।

বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) ভোর থেকে চুয়াডাঙ্গা সদর এলাকায়ও দেখা দেয় একই অবস্থা। কিছু সময় মুষলধারে বৃষ্টি হয়। এরপর আবারও কমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়া অব্যাহত রয়েছে।

অন্যদিকে ভোর থেকে বৃষ্টি থাকায় রাস্তাঘাট ছিল ফাঁকা। দু-একজন জরুরি প্রয়োজনে ছাতা মাথায় দিয়ে ঘরের বাইরে বেরিয়েছেন।

এদিকে, সকাল থেকে মাগুরায় মুশলধারে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। হাঁড় কাপানো শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে। সূর্যের দেখা মেলেনি । শীতের তীব্যতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। হিমেল হওেযা শীতের তীব্রতা বাড়িযে দিয়েছে। রাতে বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়েছে আর সকাল থেকে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এ অবস্থায় অনেককেই খড়কুটো জ্বালিয়ে উষ্ণতা নিতে দেখা গেছে। হাসপাতাল গুলোতে বাড়ছে শিশুরোগীদের সংখ্যা।

এরমধ্যে আজ বৃহস্পতিবার (১৮ই জানুয়ারি) সকালেই ফরিদপুর, বাগেরহাট ও ঝিনাইদতেও বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি আর ঠাণ্ডায় বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ।

এদিকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের ছয়টি বিভাগে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১৮ই জানুয়ারি) সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মাঘের শুরুতে ঘন কুয়াশার সঙ্গে হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডায় স্কুলে যাচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। এমন অবস্থায় সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার কারণে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

জেলা শিক্ষা অফিসার শামসুল আলম বলেন, ‘তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামায় মাউশির সিদ্ধান্ত মোতাবেক মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি বা তার ওপরে গেলে আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত জানাব।’

একই সিদ্ধান্তের কথা জানান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. নবেজ উদ্দিন সরকার জানান, বিদ্যালয়গুলোতে বার্তা দেয়া হয়েছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ওপর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

এসব জেলায় সর্দি, কাশি, জ¦র ও নিউমেনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। এক সপ্তাহে শুধু রংপুর মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় ১২ হাজার মানুষ। শীত দুর্যোগ মোকাবেলায় বিভাগ জুড়ে গঠন করা হয়েছে ৭৫ টি মেডিকেল টিম।

দিন-রাতের খুব একটা পার্থক্য নেই যেন উত্তরে। মেঘে ঢাকা আকাশ আর ভারী কুয়াশায় ঢাকা চারপাশ। জীবনের তাগিদে শীত ভেঙে ছুটছেন অনেকে। আক্রান্ত হচ্ছেন নানা রোগে। খরকুটোর আগুনে শীত নিবারণ করতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে মৃত্যু যন্ত্রনায় ছটফট করছেন কেউ কেউ।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে গেল এক সপ্তাহে ৪০ ওয়ার্ডে শীতসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা হয়েছে। এর মধ্যে বার্ণ এন্ড পস্নাস্টিক সার্জারি, মেডিসিন, সার্জারিসহ শিশু ওয়ার্ডে মৃত্যু হার বেশি।

শীতের এ মৌসুমে বিভাগের ৫০ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ৮ জেলা হাসপাতালসহ দু’টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন প্রায় তিন লাখ মানুষ।

সেই সাথে পাবনা, চুয়াডাঙ্গা, বরিশাল ও মৌলভীবাজার জেলাসমূহের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু শৈত্যপ্রবাহ প্রশমিত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

এছাড়া খুলনা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় রাত থেকে হালকা বৃষ্টি হয়েছে। সেই সাথে আজ বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে । এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

রাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ঠাণ্ডায় জনজীবন বিপর্যস্ত, কয়েক জেলায় বৃষ্টি

আপডেট সময় : ০৮:১৫:২৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৪

মাঘের শুরু থেকেই শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে দেশের বিস্তীর্ণ জনপদ। গত কয়েকদিন ধরে ভালোভাবে দেখাও মিলছে না সূর্যের। হিমালয় থেকে ধেয়ে আসা হিম শীতল বাতাসে জবুথবু জনজীবন। আজও কুয়াশায় ঢেকে আছে দেশের বেশিরভাগ এলাকা। কনকনে শীতে অনেকটাই কাবু জনজীবন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সূর্যের দেখাই মিলছে না অনেক এলকায়। কুয়াশা আর ঠান্ডার সঙ্গে কোথাও কোথাও যুক্ত হয়েছে অসময়ের বৃষ্টি। এতে ঠান্ডার তীব্রতা বেড়েছে কয়েকগুণ। আর এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।

এদিকে আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুরে, ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অঞ্চলে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। আর রাজধানীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া ডিমলা আবহাওয়া অফিসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এক সপ্তাহ ধরে জেলার তাপমাত্রা ৯ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করলেও আজ ঘন কয়াশা না থাকায় সূর্যের দেখা মিলেছে। তবে সূর্যের তেজ না থাকায় হিমশীতল বাতাসে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে।

পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা আবারও ১০ ডিগ্রির নিচে নেমেছে। তৃতীয় দফায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কবলে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। এতে করে টানা শীতে বিপর্যস্ত উত্তরের এই প্রান্তিক জনপদ। এ অঞ্চলের জনজীবনে বইছে দুর্ভোগ, তেমনি কঠিন দারিদ্রতায় জীবনযাপন করছেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা।

বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ভোর ৬টায় একই তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। এ তাপমাত্রা রেকর্ডের মধ্য দিয়ে তৃতীয় দফায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে এ জেলায়।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী শনিবার পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এই বৃষ্টিপাতের কারণে শীতের দাপট বাড়লেও মেঘ কেটে গিয়ে সূর্য়ের তাপ বেড়ে জনজীবনে কিছুটা স্বস্তি ফিরবে।

আবহাওয়া অফিস বলছে, খুলনা, বরিশাল ও রাজশাহী বিভাগে বাড়তে পারে বৃষ্টি। আজ ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও রাজশাহী বিভাগে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলায় ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যশোরে ১৬ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণপশ্চিম অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

অসময়ে আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নেমেছে রাজশাহী মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা ও গোপালগঞ্জে। কনকনে ঠান্ডার সঙ্গে বৃষ্টিতে জেলার জনজীবন অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে। নানা কাজে বাইরে যারা বের হয়েছেন, তারা শীতল বৃষ্টির ফোঁটায় কাবু হয়ে পড়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) সকালে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে রাজশাহীতে। একই সঙ্গে সকাল ৬টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঘন কুয়াশা ও মেঘে আকাশ ঢেকে থাকায় এখনও সূর্যের দেখা মেলেনি। মেঘে আকাশ ঢেকে রয়েছে। মেঘ কেটে গেলে সামনের দিনগুলোতে তাপমাত্রা আরও নিচে নামতে পারে। সারাদেশে চলা সপ্তাহব্যাপী তীব্র শীতে নাকাল জনজীবনের পাশাপাশি ফসলের ক্ষতি নিয়েও কিন্তু উদ্বিগ্ন কৃষকরা।

এরই মধ্যে চুয়াডাঙ্গায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বুধবার (১৭ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টার সময় থেকে জেলায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়া শুরু হয়।

বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) ভোর থেকে চুয়াডাঙ্গা সদর এলাকায়ও দেখা দেয় একই অবস্থা। কিছু সময় মুষলধারে বৃষ্টি হয়। এরপর আবারও কমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়া অব্যাহত রয়েছে।

অন্যদিকে ভোর থেকে বৃষ্টি থাকায় রাস্তাঘাট ছিল ফাঁকা। দু-একজন জরুরি প্রয়োজনে ছাতা মাথায় দিয়ে ঘরের বাইরে বেরিয়েছেন।

এদিকে, সকাল থেকে মাগুরায় মুশলধারে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। হাঁড় কাপানো শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে। সূর্যের দেখা মেলেনি । শীতের তীব্যতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। হিমেল হওেযা শীতের তীব্রতা বাড়িযে দিয়েছে। রাতে বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়েছে আর সকাল থেকে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এ অবস্থায় অনেককেই খড়কুটো জ্বালিয়ে উষ্ণতা নিতে দেখা গেছে। হাসপাতাল গুলোতে বাড়ছে শিশুরোগীদের সংখ্যা।

এরমধ্যে আজ বৃহস্পতিবার (১৮ই জানুয়ারি) সকালেই ফরিদপুর, বাগেরহাট ও ঝিনাইদতেও বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি আর ঠাণ্ডায় বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ।

এদিকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের ছয়টি বিভাগে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১৮ই জানুয়ারি) সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মাঘের শুরুতে ঘন কুয়াশার সঙ্গে হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডায় স্কুলে যাচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। এমন অবস্থায় সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার কারণে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

জেলা শিক্ষা অফিসার শামসুল আলম বলেন, ‘তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামায় মাউশির সিদ্ধান্ত মোতাবেক মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি বা তার ওপরে গেলে আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত জানাব।’

একই সিদ্ধান্তের কথা জানান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. নবেজ উদ্দিন সরকার জানান, বিদ্যালয়গুলোতে বার্তা দেয়া হয়েছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ওপর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

এসব জেলায় সর্দি, কাশি, জ¦র ও নিউমেনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। এক সপ্তাহে শুধু রংপুর মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় ১২ হাজার মানুষ। শীত দুর্যোগ মোকাবেলায় বিভাগ জুড়ে গঠন করা হয়েছে ৭৫ টি মেডিকেল টিম।

দিন-রাতের খুব একটা পার্থক্য নেই যেন উত্তরে। মেঘে ঢাকা আকাশ আর ভারী কুয়াশায় ঢাকা চারপাশ। জীবনের তাগিদে শীত ভেঙে ছুটছেন অনেকে। আক্রান্ত হচ্ছেন নানা রোগে। খরকুটোর আগুনে শীত নিবারণ করতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে মৃত্যু যন্ত্রনায় ছটফট করছেন কেউ কেউ।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে গেল এক সপ্তাহে ৪০ ওয়ার্ডে শীতসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা হয়েছে। এর মধ্যে বার্ণ এন্ড পস্নাস্টিক সার্জারি, মেডিসিন, সার্জারিসহ শিশু ওয়ার্ডে মৃত্যু হার বেশি।

শীতের এ মৌসুমে বিভাগের ৫০ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ৮ জেলা হাসপাতালসহ দু’টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন প্রায় তিন লাখ মানুষ।

সেই সাথে পাবনা, চুয়াডাঙ্গা, বরিশাল ও মৌলভীবাজার জেলাসমূহের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু শৈত্যপ্রবাহ প্রশমিত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

এছাড়া খুলনা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় রাত থেকে হালকা বৃষ্টি হয়েছে। সেই সাথে আজ বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে । এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

রাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।