ভয়াবহ তুষারঝড় এবং তীব্র শীতে বিপর্যস্ত আমেরিকা, যুক্তরাজ্য জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশ। গত দুই সপ্তাহে বৈরি আবহাওয়ায় আমেরিকার ১৩টি রাজ্যে কমপক্ষে ৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। কর্মকর্তারা এবং মার্কিন মিডিয়া শুক্রবার জানিয়েছে, দেশের বিশাল অংশ নতুন করে শৈত্য ঝড়ের মোকাবেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
হিমশীতল তাপমাত্রা, তুষারপাত এবং ঘন বরফে আচ্ছাদিত সড়কপথে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটেছে। বিমান চলাচল বাতিল, স্কুল বন্ধ এবং হাজার হাজার মানুষ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। লাখ লাখ আমেরিকান নতুন করে বৈরী আবহাওয়া সতর্কতার অধীনে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় টেনেসি অঙ্গরাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগ ১৪ জনের আবহাওয়া-সম্পর্কিত মৃত্যু নিশ্চিত করেছে। বৈরি আবহাওয়ায় গত দুই সপ্তাহের মধ্যে ১৩টি রাজ্যে অন্তত ৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিউইয়র্ক, মিশিগানসহ বাল্টিমোর থেকে মধ্য নিউ জার্সি এবং ফিলাডেলফিয়ার বেশ কিছু শহরে ভারি তুষারপাতের কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে স্কুল।
পুলিশ জানিয়েছে, সৌদি আরবের মক্কায় ওমরা পালন করে দেশে ফেরা পাঁচজন মহিলা মঙ্গলবার পেনসিলভানিয়া মহাসড়কে একটি ট্র্যাক্টর-ট্রেলারের সাথে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।
গভর্নর অ্যান্ডি বেসিয়ার শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, কেন্টাকিতে আবহাওয়া সংক্রান্ত কারণে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে।
পোর্টল্যান্ড দমকল বিভাগ জানিয়েছে, ওরেগনে বুধবার তুষার ঝড়ের সময় পার্কিং করা গাড়িতে একটি সক্রিয় বিদ্যুতের লাইন পড়ে গেলে তিনজন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান।
একটি ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট পাওয়ার আউটেস ইউএস জানায়, শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তুষার ঝড়ে ওরেগনের ৭৫ হাজার গ্রাহককে বিদ্যুৎবিহীন রেখেছিল এবং রাজ্যের গভর্নর রাজ্যটিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন।
ইলিনয়, কানসাস, নিউ হ্যাম্পশায়ার, নিউ ইয়র্ক, উইসকনসিন এবং ওয়াশিংটন রাজ্যেও মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সিয়াটেল কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে স্থানীয় মিডিয়া জানিয়েছে, যেখানে পাঁচজন লোক প্রচন্ড ঠান্ডায় মারা গেছে।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় উত্তর-পশ্চিম, রকি পর্বতমালা এবং নিউ ইংল্যান্ডের কিছু অংশসহ দেশের বেশ কয়েকটি অংশে তুষারঝড় আঘাত হানে। বিশেষকরে পশ্চিম নিউইয়র্কের আবহাওয়াবিদরা বলেছেন, এই সপ্তাহে পাঁচ দিনের ব্যবধানে বাফেলোর কাছে প্রায় ৭৫ ইঞ্চি (১.৯ মিটার) তুষার পড়েছে। হিমশীতল তাপমাত্রা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণে গভীরভাবে প্রসারিত হয়েছে। এমন একটি অঞ্চল যা শীতের আবহাওয়ার সাথে লড়াই করতে অভ্যস্ত নয়। দেশের কিছু অংশে এই সপ্তাহান্তে আরও ভয়ংকর পরিস্থিতি হতে পারে।
ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস শুক্রবার সর্বশেষ সতর্কবার্তায় বলেছে, ‘আরেকটি আর্কটিক শৈত্যঝড় সমভূমি এবং মিসিসিপি উপত্যকায় পূর্ব আমেরিকায় ঠান্ডা তাপমাত্রা এবং বিপজ্জনক বাতাস বয়ে আনবে।’
ফ্লাইটএ্যাওয়ার ডট.কম ওয়েবসাইট অনুসারে, শুক্রবারও বিমান ভ্রমণ উল্লেখযোগ্য বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। ১,১০০টিরও বেশি মার্কিন ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে এবং আরও ৮,০০০টি বিলম্বিত হয়েছে।
এদিকে জার্মানিতে তীব্র তুষারপাতে বেশ কিছু সড়ক বন্ধ হয়ে গেছে। তুষারঝড়ের কারণে বাতিল করা হয়েছে ৩২০ টিরও বেশি ফ্লাইট। ভোগান্তিতে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ।