০৮:৩৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইজতেমার প্রস্তুতি চলছে তুরাগতীরে, ২ ফেব্রুয়ারি শুরু

আগামী ২ ফেব্রুয়ারি আম বয়ানের মাধ্যমে শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা। গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে শুরু হতে যাচ্ছে এই তাবলীগ জামায়াতের সবচেয়ে বড় জমায়েত বিশ্ব ইজতেমা। ইজতেমায় আগত মুসুল্লিদের সুবিধার্থে স্বেচ্ছাশ্রমে চলছে ময়দান প্রস্তুতের কাজ। দেশের মুসলিমদের বৃহত্তম এই সম্মেলন সুষ্ঠু ও সুন্দর করার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এ বছর দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ব ইজতেমা। প্রথম পর্ব হবে ২ থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি, দ্বিতীয় পর্ব ৯ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি। প্রথম পর্বের ইজতেমায় মাওলানা জোবায়ের পক্ষের অনুসারীরা এবং দ্বিতীয় পর্বে সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা অংশ নেবেন।

টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে গিয়ে দেখা যায়, পুরোদমে এগিয়ে চলছে প্রস্তুতির কাজ। কেউ ইজতেমা ময়দানে নামাজের জায়গায় দাগ কাটছেন, কেউ বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ করছেন, কেউ প্যান্ডেলের চট সেলাই করছেন, কেউ করছেন খুঁটির ওপর চট টাঙানোর কাজ। আবার অনেককে ময়দান পরিষ্কার করতে দেখা গেছে। মঞ্চ তৈরির কাজেও ব্যস্ত ছিলেন অনেকে। বিদেশি মুসল্লিদের জন্য তৈরি করা হচ্ছে কামরা। এসব কাজে বৃদ্ধ ও যুবকসহ বিভিন্ন বয়সের মুসল্লিরা স্বেচ্ছাশ্রমে অংশ নিয়েছেন।

টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানের সম্পূর্ণ মাঠ ইতোমধ্যেই খুঁটি বসানো শেষ হয়েছে। নামাজে দাগ কাটাও প্রায় শেষের দিকে। বিভিন্ন খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে ময়দানটি। ইজতেমা ময়দানের পশ্চিম পাশের সামিয়ানা টাঙানোর কাজ প্রায় শেষ। মাইকের জন্য বৈদ্যুতিক তার স্থাপনের কাজও শুরু হয়েছে।

তুরাগ তীরের প্রায় ১৬০ একর জমি বিস্তৃত ইজতেমা ময়দানে প্রতিদিনই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মুসুল্লিরা এসে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে কাজ করছেন। স্বেচ্ছাশ্রমে এরই মধ্যে প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ করেছে মুসল্লিরা। প্রতি বছরের মতো ইজতেমার নিরাপত্তায় আশপাশে সিসিটিভি বসানোসহ ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হবে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাঠের ভেতর ও বাইরে কাজ করবেন।

মুসল্লিরা বলছেন, বিশ্বের লাখ লাখ দেশি–বিদেশি মেহমান আসবেন ইজতেমা ময়দানে। তাদের থাকা, খাওয়া ও বসার জন্য স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন তারা। কোনো অর্থের লোভে নয়; একমাত্র আল্লাহকে রাজি-খুশি ও পরকালের নাজাতের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তারা।

নাওজোড় এলাকার দিগন্ত সোয়েটার কারখানার হারুন অর রশিদ বলেন, ‘শুক্রবার কারখানা বন্ধ থাকায় আমরা দুই গাড়ি শ্রমিক স্বেচ্ছায় এসেছি ইজতেমা মাঠে। আমরা ভাগ করে কাজ করছি। আমাদের মতো দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে শত শত লোক কাজ করছেন।’

ঢাকার কাপড়ের ব্যবসায়ী আওলাদ হোসেন বলেন, ‘ইজতেমায় ভারত, পাকিস্তান, ইরাক, ইরান, সৌদি আরব, জর্ডান, তুরস্ক, ইংল্যান্ড, আমেরিকাসহ ১৬৮টি বিভিন্ন দেশের বিদেশি মেহমান আসবেন। আমরা এখানে মেজবান হিসেবে তাদের থাকা, খাওয়ায় যাতে কোনো ধরনের সমস্যা না হয় সেজন্য দলে দলে আলাদা আমিরের অধীনে কাজ করছি। এখানে কোনো টাকা–পয়সার বিনিময় না, আল্লাহকে খুশি করে জান্নাত লাভের নিয়তে সবাই এসেছেন।’

জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন মিয়া বলেন, ‘অন্যান্য বছরের মতো সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ইজতেমা করার জন্য প্রয়োজনীয় টয়লেট, পানি সরবরাহ এবং ওজু–গোসলের নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

ইজতেমা সফল করার লক্ষ্যে এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থা, দপ্তরের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নিরাপদ ও সুষ্ঠু পরিবেশে ইজতেমা আয়োজনে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য সরকারি বিভিন্ন দপ্তর, পুলিশ প্রশাসন, সিটি করপোরেশন আলাদাভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’

ইজতেমার প্রস্তুতি চলছে তুরাগতীরে, ২ ফেব্রুয়ারি শুরু

আপডেট : ০৮:৩২:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৪

আগামী ২ ফেব্রুয়ারি আম বয়ানের মাধ্যমে শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা। গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে শুরু হতে যাচ্ছে এই তাবলীগ জামায়াতের সবচেয়ে বড় জমায়েত বিশ্ব ইজতেমা। ইজতেমায় আগত মুসুল্লিদের সুবিধার্থে স্বেচ্ছাশ্রমে চলছে ময়দান প্রস্তুতের কাজ। দেশের মুসলিমদের বৃহত্তম এই সম্মেলন সুষ্ঠু ও সুন্দর করার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এ বছর দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ব ইজতেমা। প্রথম পর্ব হবে ২ থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি, দ্বিতীয় পর্ব ৯ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি। প্রথম পর্বের ইজতেমায় মাওলানা জোবায়ের পক্ষের অনুসারীরা এবং দ্বিতীয় পর্বে সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা অংশ নেবেন।

টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে গিয়ে দেখা যায়, পুরোদমে এগিয়ে চলছে প্রস্তুতির কাজ। কেউ ইজতেমা ময়দানে নামাজের জায়গায় দাগ কাটছেন, কেউ বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ করছেন, কেউ প্যান্ডেলের চট সেলাই করছেন, কেউ করছেন খুঁটির ওপর চট টাঙানোর কাজ। আবার অনেককে ময়দান পরিষ্কার করতে দেখা গেছে। মঞ্চ তৈরির কাজেও ব্যস্ত ছিলেন অনেকে। বিদেশি মুসল্লিদের জন্য তৈরি করা হচ্ছে কামরা। এসব কাজে বৃদ্ধ ও যুবকসহ বিভিন্ন বয়সের মুসল্লিরা স্বেচ্ছাশ্রমে অংশ নিয়েছেন।

টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানের সম্পূর্ণ মাঠ ইতোমধ্যেই খুঁটি বসানো শেষ হয়েছে। নামাজে দাগ কাটাও প্রায় শেষের দিকে। বিভিন্ন খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে ময়দানটি। ইজতেমা ময়দানের পশ্চিম পাশের সামিয়ানা টাঙানোর কাজ প্রায় শেষ। মাইকের জন্য বৈদ্যুতিক তার স্থাপনের কাজও শুরু হয়েছে।

তুরাগ তীরের প্রায় ১৬০ একর জমি বিস্তৃত ইজতেমা ময়দানে প্রতিদিনই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মুসুল্লিরা এসে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে কাজ করছেন। স্বেচ্ছাশ্রমে এরই মধ্যে প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ করেছে মুসল্লিরা। প্রতি বছরের মতো ইজতেমার নিরাপত্তায় আশপাশে সিসিটিভি বসানোসহ ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হবে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাঠের ভেতর ও বাইরে কাজ করবেন।

মুসল্লিরা বলছেন, বিশ্বের লাখ লাখ দেশি–বিদেশি মেহমান আসবেন ইজতেমা ময়দানে। তাদের থাকা, খাওয়া ও বসার জন্য স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন তারা। কোনো অর্থের লোভে নয়; একমাত্র আল্লাহকে রাজি-খুশি ও পরকালের নাজাতের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তারা।

নাওজোড় এলাকার দিগন্ত সোয়েটার কারখানার হারুন অর রশিদ বলেন, ‘শুক্রবার কারখানা বন্ধ থাকায় আমরা দুই গাড়ি শ্রমিক স্বেচ্ছায় এসেছি ইজতেমা মাঠে। আমরা ভাগ করে কাজ করছি। আমাদের মতো দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে শত শত লোক কাজ করছেন।’

ঢাকার কাপড়ের ব্যবসায়ী আওলাদ হোসেন বলেন, ‘ইজতেমায় ভারত, পাকিস্তান, ইরাক, ইরান, সৌদি আরব, জর্ডান, তুরস্ক, ইংল্যান্ড, আমেরিকাসহ ১৬৮টি বিভিন্ন দেশের বিদেশি মেহমান আসবেন। আমরা এখানে মেজবান হিসেবে তাদের থাকা, খাওয়ায় যাতে কোনো ধরনের সমস্যা না হয় সেজন্য দলে দলে আলাদা আমিরের অধীনে কাজ করছি। এখানে কোনো টাকা–পয়সার বিনিময় না, আল্লাহকে খুশি করে জান্নাত লাভের নিয়তে সবাই এসেছেন।’

জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন মিয়া বলেন, ‘অন্যান্য বছরের মতো সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ইজতেমা করার জন্য প্রয়োজনীয় টয়লেট, পানি সরবরাহ এবং ওজু–গোসলের নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

ইজতেমা সফল করার লক্ষ্যে এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থা, দপ্তরের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নিরাপদ ও সুষ্ঠু পরিবেশে ইজতেমা আয়োজনে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য সরকারি বিভিন্ন দপ্তর, পুলিশ প্রশাসন, সিটি করপোরেশন আলাদাভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’