১১:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে মৃতের সংখ্যা ২৫ হাজার ছাড়াল

গাজা উপত্যকার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রোববার বলেছে, গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলের সাথে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ফিলিস্তিনে কমপক্ষে ২৫,১০৫ জন নিহত হয়েছে। এদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। খবর এএফপি’র।

মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরাইলি বাহিনী ও ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের মধ্যে এ যুদ্ধে আরো প্রায় ৬২,৬৮১ জন আহত হয়েছে।

এদিকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় অস্বীকৃতি জানানোকে অগ্রহণযোগ্য বলেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস। তবে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর দাবি, এবিষয়ে নিয়ে আন্তর্জাতিক কোন চাপ নেই।

জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের ১৯তম অধিবেশনে জাতিসংঘ মহাসচিব দুই রাষ্ট্রের ভিত্তিতে ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব তুলে ধরেন। বলেন, এভাবে সমাধানে আসতে না পারলে দীর্ঘমেয়াদী অস্থিরতা ও সহিংসতার চক্র থেকে বের হতে পারবে না মধ্যপ্রাচ্য। যা বৈশ্বিক শান্তিতে হুমকি তৈরি করে সন্ত্রাসবাদ উসকে দেবে। উগান্ডার কাম্পালায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে তিনি গাজায় ইসরায়েলের বেপরোয়া অভিযানের বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রস্তাব আগেই নাকচ করা নেতানিয়াহু বলেছেন, এটি ইসরায়েলের নিরাপত্তার সাথে সাংঘর্ষিক। স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এবিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র বা আন্তর্জাতিক বিশ্বের কোন চাপ নেই। তিনি আরও জানান, নিরাপত্তার স্বার্থে সম্পূর্ণ ফিলিস্তিনের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা আছে।

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস আবারও ৭ অক্টোবরের হামলার পক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেছে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের অবসান ঘটাতে হবে। তবে সংগঠনটি কিছু ভুল স্বীকার করে নিয়েছে।

ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর যে যুদ্ধ শুরু হয় সে সম্পর্কে প্রকাশিত এক খোলা প্রতিবেদনে সংগঠনটি বলেছে, তারা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারিত্ব অবসানে ও ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির জন্য বেশ কিছু ‘প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ’ নিয়েছে।

হামাসের ১৬ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে যে, ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর বিভিন্ন নিয়মের কারণে তাদের কিছু ভুল হয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়া ও সীমান্তে বিশৃঙ্খলার কারণে এসব ভুল হয়েছে।

তবে এ বিষয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ‘পরিপূর্ণ বিজয়ের’ শপথ নিয়ে বলেছেন তার সরকার গাজায় এখনও আটকে রাখা ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তির বিষয়ে হামাসের কোনো শর্তকে গ্রহণ করবে না।

গত বছরের অক্টোবরে হামাসের সশস্ত্র যোদ্ধারা গাজার সামরিক সীমান্ত অতিক্রম করে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে হামলা চালায় এবং ইসরায়েলের নাগরিক ও বিদেশিদের ওপর তাদের বাড়িঘরে ও রাস্তায় আক্রমণ করে। ওই হামলায় হামাস এক হাজার ১৪০ জনকে হত্যা করে যাদের বেশিরভাগই ছিল সাধারণ মানুষ। এ ছাড়া হামাস ২৫০ জন ইসরায়েলি ও বিদেশিকে অপহরণ করে গাজায় নিয়ে আসে। ইসরায়েল বলছে তাদের মধ্যে এখনও ১৩২ জনকে আটকে রেখেছে হামাসের যোদ্ধারা।

এই হামলার জবাবে ইসরায়েল গাজায় সর্বাত্মক হামলা চালায়। আকাশ, নৌ ও স্থলপথের অভিযানে গাজায় এ পর্যন্ত ২৫ হাজার ১০৫ জন ফিলিস্তিনি মারা গেছে বলে জানিয়েছে হামাসের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নির্বিচার হত্যকাণ্ডের শিকার এসব লোকের বেশিরভাগই নিরীহ শিশু ও নারী।

জাতিসংঘ নারী সংস্থা জানিয়েছে, ইসরায়েলি আগ্রাসনে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ‘প্রতি ঘণ্টায় দুই জন মায়ের মৃত্যু’ হচ্ছে। এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক সিমা বাহাউস। তিনি বলেন, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের প্রধান শিকার নারী ও শিশুরা।

সংখ্যাটির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এখন পর্যন্ত গাজায় প্রায় ১৬ হাজার নারী ও শিশু নিহত হয়েছেন। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার সংঘাত শুরুর পর থেকে গাজায় নিহতদের মধ্যে ৭০ শতাংশই নারী এবং কন্যাশিশু। এ ছাড়া যুদ্ধের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ১০ হাজার শিশু নিজেদের বাবাকে হারিয়েছে। অপরদিকে বাস্তচ্যুতদের মধ্যে ১০ লাখই নারী এবং কন্যাশিশু।

জাতিসংঘের নারীবিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, নারী ও কন্যাশিশুরা নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা এবং আশ্রয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আসন্ন অনাহার ও দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হচ্ছেন তারা। গাজায় সংঘাত শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ২৪ হাজার ৭৬২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৬২ হাজার ১০৮ জন।

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে মৃতের সংখ্যা ২৫ হাজার ছাড়াল

আপডেট : ০৮:০৬:০৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৪

গাজা উপত্যকার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রোববার বলেছে, গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলের সাথে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ফিলিস্তিনে কমপক্ষে ২৫,১০৫ জন নিহত হয়েছে। এদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। খবর এএফপি’র।

মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরাইলি বাহিনী ও ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের মধ্যে এ যুদ্ধে আরো প্রায় ৬২,৬৮১ জন আহত হয়েছে।

এদিকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় অস্বীকৃতি জানানোকে অগ্রহণযোগ্য বলেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস। তবে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর দাবি, এবিষয়ে নিয়ে আন্তর্জাতিক কোন চাপ নেই।

জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের ১৯তম অধিবেশনে জাতিসংঘ মহাসচিব দুই রাষ্ট্রের ভিত্তিতে ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব তুলে ধরেন। বলেন, এভাবে সমাধানে আসতে না পারলে দীর্ঘমেয়াদী অস্থিরতা ও সহিংসতার চক্র থেকে বের হতে পারবে না মধ্যপ্রাচ্য। যা বৈশ্বিক শান্তিতে হুমকি তৈরি করে সন্ত্রাসবাদ উসকে দেবে। উগান্ডার কাম্পালায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে তিনি গাজায় ইসরায়েলের বেপরোয়া অভিযানের বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রস্তাব আগেই নাকচ করা নেতানিয়াহু বলেছেন, এটি ইসরায়েলের নিরাপত্তার সাথে সাংঘর্ষিক। স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এবিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র বা আন্তর্জাতিক বিশ্বের কোন চাপ নেই। তিনি আরও জানান, নিরাপত্তার স্বার্থে সম্পূর্ণ ফিলিস্তিনের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা আছে।

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস আবারও ৭ অক্টোবরের হামলার পক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেছে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের অবসান ঘটাতে হবে। তবে সংগঠনটি কিছু ভুল স্বীকার করে নিয়েছে।

ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর যে যুদ্ধ শুরু হয় সে সম্পর্কে প্রকাশিত এক খোলা প্রতিবেদনে সংগঠনটি বলেছে, তারা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারিত্ব অবসানে ও ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির জন্য বেশ কিছু ‘প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ’ নিয়েছে।

হামাসের ১৬ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে যে, ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর বিভিন্ন নিয়মের কারণে তাদের কিছু ভুল হয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়া ও সীমান্তে বিশৃঙ্খলার কারণে এসব ভুল হয়েছে।

তবে এ বিষয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ‘পরিপূর্ণ বিজয়ের’ শপথ নিয়ে বলেছেন তার সরকার গাজায় এখনও আটকে রাখা ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তির বিষয়ে হামাসের কোনো শর্তকে গ্রহণ করবে না।

গত বছরের অক্টোবরে হামাসের সশস্ত্র যোদ্ধারা গাজার সামরিক সীমান্ত অতিক্রম করে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে হামলা চালায় এবং ইসরায়েলের নাগরিক ও বিদেশিদের ওপর তাদের বাড়িঘরে ও রাস্তায় আক্রমণ করে। ওই হামলায় হামাস এক হাজার ১৪০ জনকে হত্যা করে যাদের বেশিরভাগই ছিল সাধারণ মানুষ। এ ছাড়া হামাস ২৫০ জন ইসরায়েলি ও বিদেশিকে অপহরণ করে গাজায় নিয়ে আসে। ইসরায়েল বলছে তাদের মধ্যে এখনও ১৩২ জনকে আটকে রেখেছে হামাসের যোদ্ধারা।

এই হামলার জবাবে ইসরায়েল গাজায় সর্বাত্মক হামলা চালায়। আকাশ, নৌ ও স্থলপথের অভিযানে গাজায় এ পর্যন্ত ২৫ হাজার ১০৫ জন ফিলিস্তিনি মারা গেছে বলে জানিয়েছে হামাসের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নির্বিচার হত্যকাণ্ডের শিকার এসব লোকের বেশিরভাগই নিরীহ শিশু ও নারী।

জাতিসংঘ নারী সংস্থা জানিয়েছে, ইসরায়েলি আগ্রাসনে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ‘প্রতি ঘণ্টায় দুই জন মায়ের মৃত্যু’ হচ্ছে। এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক সিমা বাহাউস। তিনি বলেন, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের প্রধান শিকার নারী ও শিশুরা।

সংখ্যাটির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এখন পর্যন্ত গাজায় প্রায় ১৬ হাজার নারী ও শিশু নিহত হয়েছেন। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার সংঘাত শুরুর পর থেকে গাজায় নিহতদের মধ্যে ৭০ শতাংশই নারী এবং কন্যাশিশু। এ ছাড়া যুদ্ধের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ১০ হাজার শিশু নিজেদের বাবাকে হারিয়েছে। অপরদিকে বাস্তচ্যুতদের মধ্যে ১০ লাখই নারী এবং কন্যাশিশু।

জাতিসংঘের নারীবিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, নারী ও কন্যাশিশুরা নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা এবং আশ্রয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আসন্ন অনাহার ও দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হচ্ছেন তারা। গাজায় সংঘাত শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ২৪ হাজার ৭৬২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৬২ হাজার ১০৮ জন।