০৮:২৫ পূর্বাহ্ন, রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নেতাদের পদত্যাগ ভিন্ন কথা বলছে জাতীয় পার্টি

জাতীয় পার্টি থেকে ৬ শতাধিক নেতার পদত্যাগের তথ্য সত্য নয় বলে দাবি করেছে জাতীয় পার্টি। গণমাধ্যমে পাঠানো দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালীর এক বার্তায় এ দাবি করা হয়।

বার্তায় জালালি বলেন, ‘আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করেছি, কয়েকটি গণমাধ্যমে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়েছে– জাতীয় পার্টি থেকে ৬৭১ জন পদত্যাগ করেছে। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, আসলে ঐ সভায় কতজন উপস্থিত ছিলেন? যারা উপস্থিত ছিলেন তারা সবাই কী জাতীয় পার্টির সদস্য? তাছাড়া, যারা সংবাদ সম্মেলন করেছেন তারা কী ৬৭১ জনের কোন তালিকা প্রকাশ করেছে?’

বার্তায় আরও বলা হয়, ‘প্রকৃত সত্য হলো, থাকা মহানগর উত্তরের বেশির ভাগ নেতা-কর্মী আজ জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এর বনানীস্থ কার্যালয়ে উপস্থিত থেকে গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছেন। আজ দুপুরে বনানীস্থ কার্যালয়ে নব গঠিত ঢাকা মহানগর উত্তর জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ একটি সভাও করেছেন।’

বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে, বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে জাতীয় পার্টি থেকে ঢাকা মহানগরসহ বিভিন্ন ইউনিটের ৬৬৮ জন নেতা পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

পদত্যাগকারী নেতারা দাবি করেন, বর্তমান নেতৃত্ব জাতীয় পার্টিকে ভুল পথে পরিচালিত করছে, দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্ন পার্টিকে পারিবারিক প্রতিষ্ঠান বানিয়েছেন।

পার্টিতে সঠিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোশক ও একাদশ জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করা রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাপার কাউন্সিলের প্রস্তুতি চলছে বলে সংবাদ সম্মেলেনে জানানো হয়।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফল বিপর্যয়ের পর দলটির পরাজিত প্রার্থীদের একটি অংশের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থেকেই স্পষ্টত দুই ভাগে বিভক্ত ছিল জাতীয় পার্টি। চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে অহযোগিতার অভিযোগ এনে দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ ও তার অনুসারীরা নির্বাচন বর্জন করেন। তাঁদের অভিযোগ, রওশনপন্থিদের কোনঠাসা করতে নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।

এবারের নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ২৬টি আসনে ছাড় দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। দলটির প্রার্থীরা এই আসনগুলোতেও নির্বাচিত হতে পারেননি। দ্বাদশ সংসদে জাতীয় পার্টির পাওয়া আসন ১১টি। আওয়ামী লীগের ছাড় দেওয়া আসন ছাড়া কোনো আসনেই জয় পাননি দলটির প্রার্থীরা। এ নিয়ে দলটির নেতা–কর্মীরা ক্ষোভে ফুঁসছেন।

বিক্ষোভে ইন্ধনের অভিযোগে দলের কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ ও প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়কে অব্যাহতি দিয়েছে জাতীয় পার্টি। চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের সমালোচনা করায় বহিষ্কার হয়েছেন প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু ও ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহিয়া চৌধুরী।

এর আগেও অন্তত তিনবার ভেঙেছে জাতীয় পার্টি। ১৯৮৬ সালে সাবেক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। দলটি প্রথম ভাঙনের মুখে ১৯৯৬ সালে। এরশাদের সঙ্গে মতোবিরোধের জেরে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু মূল দল থেকে বেরিয়ে গঠন করেন জাতীয় পার্টি (জেপি)। এই দলটি বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক।

২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় আরেকবার ভাঙনের মুখে পড়ে জাতীয় পার্টি। এবার দল থেকে বেরিয়ে যান সাবেক মন্ত্রী নাজিউর রহমান মঞ্জুর। বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) নামের এই অংশটির নেতৃত্বে বর্তমানে আছেন নাজিউর রহমানের ছেলে আন্দালিব রহমান পার্থ। বিজেপি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক।

সবশেষ, ২০১৪ সালের নির্বাচনে আগের দলটির নেতা কাজী জাফর মূল দল থেকে আলাদা হয়ে যান। এই অংশটি জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) নামে পরিচিত। এই অংশটিও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে আছে।

জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এরশাদ ২০১৯ সালে মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর দলীয় নেতৃত্ব নিয়ে বিবাদে জড়ান তার ছোট ভাই জিএম কাদের আর স্ত্রী রওশন এরশাদ। এরশাদের মৃত্যুর পর দলটির নেতৃত্বে আসেন জিএম কাদের। শুরু থেকেই এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আসছিলেন রওশন। দুজনই নিজেদের দলের চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করেন। পরে অবশ্য সমঝোতার মাধ্যমে জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান ও রওশন এরশাদকে বিরোধী দলীয় নেতা করা হয়।

এরপর ২০২২ সালে আবারও দলের এই গৃহবিবাদ প্রকাশ্যে আসে। সে সময় এই দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের অন্যতম কারণ ছিল আওয়ামী লীগের সাথে জোটে থাকা-না থাকাকে কেন্দ্র করে। জি এম কাদেরপন্থীদের চাওয়া ছিল মহাজোট থেকে বের হয়ে বিএনপির সাথে বা আলাদা করে নির্বাচনে অংশ নেওয়া। অন্যদিকে রওশনপন্থীদের চাওয়া ছিল মহাজোটেই থেকে যাওয়া।

একপর্যায়ে ওই বছরের আগস্টে থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই রওশন এরশাদ কেন্দ্রীয় সম্মেলন ডাকেন। সে সময় রওশনের ঘনিষ্ঠ বেশ কয়েকজন নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করেন চেয়ারম্যান জিএম কাদের।

ফলে জি এম কাদেরের চেয়ারম্যান পদে থাকাকে চ্যালেঞ্জ করে একাধিক মামলাও করা হয়। এতে শুরুতে জি এম কাদেরের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আদালত। পরে অবশ্য উচ্চ আদালতের রায়ে চেয়ারম্যান পদ ফিরে পান জি এম কাদের।

নেতাদের পদত্যাগ ভিন্ন কথা বলছে জাতীয় পার্টি

আপডেট : ০৫:১০:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৪

জাতীয় পার্টি থেকে ৬ শতাধিক নেতার পদত্যাগের তথ্য সত্য নয় বলে দাবি করেছে জাতীয় পার্টি। গণমাধ্যমে পাঠানো দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালীর এক বার্তায় এ দাবি করা হয়।

বার্তায় জালালি বলেন, ‘আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করেছি, কয়েকটি গণমাধ্যমে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়েছে– জাতীয় পার্টি থেকে ৬৭১ জন পদত্যাগ করেছে। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, আসলে ঐ সভায় কতজন উপস্থিত ছিলেন? যারা উপস্থিত ছিলেন তারা সবাই কী জাতীয় পার্টির সদস্য? তাছাড়া, যারা সংবাদ সম্মেলন করেছেন তারা কী ৬৭১ জনের কোন তালিকা প্রকাশ করেছে?’

বার্তায় আরও বলা হয়, ‘প্রকৃত সত্য হলো, থাকা মহানগর উত্তরের বেশির ভাগ নেতা-কর্মী আজ জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এর বনানীস্থ কার্যালয়ে উপস্থিত থেকে গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছেন। আজ দুপুরে বনানীস্থ কার্যালয়ে নব গঠিত ঢাকা মহানগর উত্তর জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ একটি সভাও করেছেন।’

বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে, বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে জাতীয় পার্টি থেকে ঢাকা মহানগরসহ বিভিন্ন ইউনিটের ৬৬৮ জন নেতা পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

পদত্যাগকারী নেতারা দাবি করেন, বর্তমান নেতৃত্ব জাতীয় পার্টিকে ভুল পথে পরিচালিত করছে, দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্ন পার্টিকে পারিবারিক প্রতিষ্ঠান বানিয়েছেন।

পার্টিতে সঠিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোশক ও একাদশ জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করা রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাপার কাউন্সিলের প্রস্তুতি চলছে বলে সংবাদ সম্মেলেনে জানানো হয়।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফল বিপর্যয়ের পর দলটির পরাজিত প্রার্থীদের একটি অংশের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থেকেই স্পষ্টত দুই ভাগে বিভক্ত ছিল জাতীয় পার্টি। চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে অহযোগিতার অভিযোগ এনে দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ ও তার অনুসারীরা নির্বাচন বর্জন করেন। তাঁদের অভিযোগ, রওশনপন্থিদের কোনঠাসা করতে নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।

এবারের নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ২৬টি আসনে ছাড় দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। দলটির প্রার্থীরা এই আসনগুলোতেও নির্বাচিত হতে পারেননি। দ্বাদশ সংসদে জাতীয় পার্টির পাওয়া আসন ১১টি। আওয়ামী লীগের ছাড় দেওয়া আসন ছাড়া কোনো আসনেই জয় পাননি দলটির প্রার্থীরা। এ নিয়ে দলটির নেতা–কর্মীরা ক্ষোভে ফুঁসছেন।

বিক্ষোভে ইন্ধনের অভিযোগে দলের কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ ও প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়কে অব্যাহতি দিয়েছে জাতীয় পার্টি। চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের সমালোচনা করায় বহিষ্কার হয়েছেন প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু ও ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহিয়া চৌধুরী।

এর আগেও অন্তত তিনবার ভেঙেছে জাতীয় পার্টি। ১৯৮৬ সালে সাবেক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। দলটি প্রথম ভাঙনের মুখে ১৯৯৬ সালে। এরশাদের সঙ্গে মতোবিরোধের জেরে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু মূল দল থেকে বেরিয়ে গঠন করেন জাতীয় পার্টি (জেপি)। এই দলটি বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক।

২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় আরেকবার ভাঙনের মুখে পড়ে জাতীয় পার্টি। এবার দল থেকে বেরিয়ে যান সাবেক মন্ত্রী নাজিউর রহমান মঞ্জুর। বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) নামের এই অংশটির নেতৃত্বে বর্তমানে আছেন নাজিউর রহমানের ছেলে আন্দালিব রহমান পার্থ। বিজেপি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক।

সবশেষ, ২০১৪ সালের নির্বাচনে আগের দলটির নেতা কাজী জাফর মূল দল থেকে আলাদা হয়ে যান। এই অংশটি জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) নামে পরিচিত। এই অংশটিও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে আছে।

জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এরশাদ ২০১৯ সালে মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর দলীয় নেতৃত্ব নিয়ে বিবাদে জড়ান তার ছোট ভাই জিএম কাদের আর স্ত্রী রওশন এরশাদ। এরশাদের মৃত্যুর পর দলটির নেতৃত্বে আসেন জিএম কাদের। শুরু থেকেই এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আসছিলেন রওশন। দুজনই নিজেদের দলের চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করেন। পরে অবশ্য সমঝোতার মাধ্যমে জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান ও রওশন এরশাদকে বিরোধী দলীয় নেতা করা হয়।

এরপর ২০২২ সালে আবারও দলের এই গৃহবিবাদ প্রকাশ্যে আসে। সে সময় এই দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের অন্যতম কারণ ছিল আওয়ামী লীগের সাথে জোটে থাকা-না থাকাকে কেন্দ্র করে। জি এম কাদেরপন্থীদের চাওয়া ছিল মহাজোট থেকে বের হয়ে বিএনপির সাথে বা আলাদা করে নির্বাচনে অংশ নেওয়া। অন্যদিকে রওশনপন্থীদের চাওয়া ছিল মহাজোটেই থেকে যাওয়া।

একপর্যায়ে ওই বছরের আগস্টে থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই রওশন এরশাদ কেন্দ্রীয় সম্মেলন ডাকেন। সে সময় রওশনের ঘনিষ্ঠ বেশ কয়েকজন নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করেন চেয়ারম্যান জিএম কাদের।

ফলে জি এম কাদেরের চেয়ারম্যান পদে থাকাকে চ্যালেঞ্জ করে একাধিক মামলাও করা হয়। এতে শুরুতে জি এম কাদেরের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আদালত। পরে অবশ্য উচ্চ আদালতের রায়ে চেয়ারম্যান পদ ফিরে পান জি এম কাদের।