ইসরায়েলকে গাজায় গণহত্যা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ আদালতের
- আপডেট সময় : ০৩:৩৭:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৪
- / ৪২৩ বার পড়া হয়েছে
গাজায় গণহত্যা প্রতিহত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ইসরায়েলের সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিজে)। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরা বলছে, শুক্রবার এক রায়ে আদালত এই নির্দেশ দেন।
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলিদের কথিত ‘গণহত্যা’ বিষয়ে প্রাথমিক একটি রায় দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)। দক্ষিণ আফ্রিকার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আইসিজে এ রায় দিয়েছে।
অন্তবর্তীকালীন রায়ে আদালতের প্রেসিডেন্ট মার্কিন বিচারক জে দোঙ্গু তার রায়ে আরও বলেন, তারা ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রী ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বক্তব্য নোট করেছেন। যার মধ্যে তিনি ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্টের ৯ অক্টোবরের একটি বক্তব্য পড়ে শোনান। ওই বক্তব্যে গ্যালান্ট বলেন, তিনি গাজায় পূর্ণ অবরোধ আরোপের নির্দেশ দিয়েছেন এবং সেনাদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি মন্তব্য করেন গাজায় ‘অমানুষদের’ বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন তারা।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বলছে, ইসরায়েলকে নিশ্চিত করতে হবে, তাদের সেনারা যেন গণহত্যা না চালায়। একমাসের মধ্যে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে হবে আদালতকে। এমনকি যারা গণহত্যায় জড়িত, তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ইসরায়েলকে গাজায় মানবিক সহায়তার পথ খোলা রাখার নির্দেশও দিয়েছেন আদালত।
গাজায় আগ্রাসন ও গণহত্যার অভিযোগে ইসরায়েলকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে গত বছরের শেষের দিকে আইসিজেতে মামলা দায়ের করে দক্ষিণ আফ্রিকা। চলতি মাসের শুরুতে আদালতে মামলাটির দুই দিনের শুনানি হয়।
শুনানিতে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়, আদালত যেন জরুরি ভিত্তিতে ইসরায়েলকে গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধের নির্দেশ দেয়। এছাড়া, জেনোসাইড কনভেনশনের আওতায় ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারের সুরক্ষার তাগিদও দেওয়া হয়।
অবশ্য ইসরায়েল আদালতকে এই মামলাটি সরাসরি খারিজ করে দিতে বলেছিল। বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি সরকারের একজন মুখপাত্র বলেছিলেন, তারা আশা করছেন- জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত ‘এই মিথ্যা এবং বিশেষ অভিযোগগুলোকে ছুড়ে ফেলে দেবে’।
এদিকে গাজার খান ইউনিসে এখনো হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এর আগে এ অঞ্চলের কয়েক হাজার বাসিন্দাকে এলাকা ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছিল ইসরায়েল। খান ইউনিসের বাসিন্দারা বলেছে, অব্যাহত সহিংসতার মধ্যে তারা পালাতে পারবেন না।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গতকালও নাসের হাসপাতালের একটি ভবন ও ইয়ার্ডের চারপাশে ব্যাপক ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এ সময় মানবিক সহায়তা গ্রহণের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অন্তত ২০জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর গাজায় আক্রমণ শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। এরপর গাজায় ইসরায়েলিদের গণহত্যা বন্ধের আবেদন জানিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা গত ডিসেম্বরে আইসিজেতে একটি মামলা করে। চলতি মাসের শুরুর দিকে এ মামলার দুটি শুনানিও অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুনানিতে জরুরি ভিত্তিতে ইসরায়েলকে গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধের নির্দেশ দিতে আইসিজেকে অনুরোধ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এ ছাড়া গাজায় মানবিক সহায়তা কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে ইসরায়েলকে নির্দেশ দেওয়ারও অনুরোধ জানিয়েছে দেশটি।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আইনি সংস্থা আইসিজে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রতিষ্ঠিত হয়। সংস্থাটি বিবাদমান দুই দেশের বিরোধ মেটাতে পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। আইসিজের দেওয়া সিদ্ধান্ত মেনে চলার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে তা মানার জন্য কোনো দেশের ওপর খুব কম শক্তিই খাটাতে পারেন এই আদালত। আইসিজের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ নেই।
হামাস পরিচালিত হাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত ২৫ হাজার ৯০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। অন্যদিকে হামাসের হামলায় ১ হাজার ১৩৯ জন ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন।