দেশজুড়ে বিরাজ করছে শৈত্যপ্রবাহ। আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কমে আসছে তাপমাত্রা। কুয়াশার দাপট আর উত্তরের হিমেল হাওয়ায় অনুভূত হচ্ছে কনকনে শীত। টানা শৈত্যপ্রবাহের কারণে জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। ঘন কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমাও ছোট হয়ে এসেছে। একটু দূরেও কী আছে তা দেখা যায় না। খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষ প্রচণ্ড শীতে ও গরম কাপড়ের অভাবে কষ্ট পাচ্ছে। এ মাসে শীত কমার কোনো সুখবর নেই। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে।’
টানা গত কয়েকদিনের প্রচণ্ড শীতে খেটে খাওয়া ভ্যানচালক, রিকশাচালক, দিনমজুরসহ নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন মারাত্মক দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে। কাজে যোগ দিতে না পারায় তীব্র খাদ্য সংকটে পড়েছেন তারা। শীতবস্ত্রের অভাবে ঠান্ডায় জবুথবু অবস্থা তাদের। নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালগুলোতে বেশি ভর্তি হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। শীতে কাবু হওয়া মানুষ কম দামের গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে ভিড় করছেন।
অব্যাহত ঘন কুয়াশার কারণে আলু ও বোরো বীজতলা লেট ব্লাইট রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কয়েকদিন ধরে সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়ছে। শিশু ও বয়স্ক মানুষ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
চিকিৎসকদের পরামর্শে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া তেমন মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। দরকারি কাজে বের হলেও মোটা কাপড় গায়ে জড়িয়ে মাথায় ও কানে টুপি ও মাফলার পেঁচিয়ে বের হচ্ছেন কেউ কেউ।
নগরবাসী বলছেন, রাজধানীতে এর আগে এত শীত কখনো পড়েনি। এই কনকনে শীতে প্রায় কয়েক হাজার ভূমিহীন, ছিন্নমূল, পথশিশু, ভবঘুরে, ভাসমান মানুষ খোলা আকাশের নিচে জীবনযাপন করছেন। যাদের প্রায় সবারই নেই শীত নিবারণের কোনো বস্ত্র। এজন্য দুস্থ এই শ্রেণির মানুষের দুঃখ-কষ্টের সীমা নেই। প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র না থাকায় তারা চরম মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।
আবহাওয়া অধিদপ্তর শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে আগামী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়া পরিস্থিতি তুলে ধরেছে। সেই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের পশ্চিমাংশে অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, যার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এদিন অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারী থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং তা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন এবং সড়ক পরিবহন চলাচল ব্যাহত হতে পারে।
চুয়াডাঙ্গা জেলাসহ রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারী ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা বিস্তার লাভ করতে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা (১-২) ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে।
উত্তরের হিমালয়ের কোলঘেঁষা পঞ্চগড় জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। আজ শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) সকাল ৬টায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় এ মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি বছর দেশে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কম। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল সাহা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শুক্রবার রাত থেকে উত্তর দিক হতে বয়ে আসা হিম শীতল বাতাস আর ঘন কুয়াশায় পুরো অঞ্চলে তীব্র শীত অনুভূত হয়। বিপদসংকুল আবহাওয়ায় সবকিছু ঠান্ডায় জড়োসড়ো হয়ে গেছে, লোকজন বাড়িতে অবস্থান করছেন, রাস্তাঘাট হয়ে পড়েছে জনশূন্য। গতকাল রাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত বৃষ্টির মতো কুয়াশা ঝরছে। চারিদিকে নীরবতা, আর ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে চারপাশ।
উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের জনজীবনে দুর্ভোগ বেড়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ থেকে ১০ ডিগ্রিতে উঠানামা করছে। শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা জেলার এ মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। রংপুর আবহাওয়া অফিস থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
সকাল থেকে জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে ঘন কুয়াশায় ঢেকে আছে জেলা শহরের চারপাশ। এ সময় গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন যানবাহনের উপস্থিতি কম। অনেক যানবাহন ঘন কুয়াশার কারণে লাইট জ্বালিয়ে চলতে দেখা গেছে।
দিনাজপুরে আজ শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ৯টার দিকে দিনাজপুর আবহাওয়া অফিস এ তাপমাত্রা রেকর্ড করে। এটি জেলায় এই মৌসুমে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
চুয়াডাঙ্গায় আবারও শুরু হয়েছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশায় জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। শীতে স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারছে না খেটে খাওয়া মানুষরা। জেলায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে যাওয়ায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে।
শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) সকাল ৬টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৩ ডিগ্রি। চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
মাঘের শীতে কাবু হয়ে পড়েছে কুড়িগ্রাম। জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মাঝারি শৈত্য প্রবাহ। কনকনে ঠান্ডা ও শীতের দাপটে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়ে পড়েছে। ঘন কুয়াশায় ঢেঁকে গেছে গোটা জনপদ। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া লোকজন ঘরের বাইরে যাচ্ছেন না।
আজ শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৬ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। গতকাল বৃহস্পতিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা নিম্নগামী হওয়ায় শীত কষ্টে পড়েছে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমরসহ ১৬টি নদ-নদী তীরবর্তী চরাঞ্চলের মানুষজন।
ঘন-কুয়াশার সাথে হিমেল হাওয়া বাড়িয়ে দিচ্ছে শীতের তীব্রতা। তীব্র ঠান্ডায় মানুষজন খড়কুটো জ্বালিয়ে উষ্ণতা নিচ্ছে। জেলার হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট,সর্দি কাশিসহ শীত জনিত রোগীর সংখ্যা। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নীচে থাকায় জেলার মাধ্যমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ের ২ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, জানুয়ারি মাস জুড়েই তাপমাত্রা এরকম থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ মাসের ২৮ তারিখের পর তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে।
সিরাজগঞ্জের তাপমাত্রা আবারও প্রায় ২ ডিগ্রি কমেছে। তবে আজকে চারপাশে নেই সেই কুয়াশার দাপট। সকাল থেকেই দেখা মিলেছে সূর্যের। ছুটির দিনটিতে সকাল থেকেই শীতের মিষ্টি রোদ যেন আনন্দ বাড়িয়ে দিয়েছে খেটে-খাওয়া মানুষগুলোর পাশাপাশি শিশু ও তরুণদের। এদিন সকাল থেকেই তারা সিরাজগঞ্জ স্টেডিয়ামে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে নানান খেলাধুলায়।
শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া অফিস জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ১০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন সকাল থেকেই সূর্যের দেখা মেলায় জনজীবনে যেন আবার অনেকটা স্বস্তি ফিরে এসেছে।
বাঘাবাড়ি প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল বলেন, সকাল ৬টায় এখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর সকাল ৯টায় কিছুটা কমে সেটা ১০ দশমিক ৩ ডিগ্রিতে দাঁড়ায়।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে অবস্থান করছে। সেই সঙ্গে মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। আর এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
আবহাওয়া অফিসের তথ্যানুযায়ী, শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যা পর্যন্ত চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের দু-য়েক জায়গায় হালকা বৃষ্টি অথবা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য জায়গায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। এই সময়ে মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং তা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। সেই সঙ্গে ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন এবং সড়ক পরিবহন চলাচল ব্যাহত হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বর্তমানে নওগাঁ জেলাসহ রংপুর বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা বিস্তার লাভ করতে পারে। ফলে শুক্রবার সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
শনিবারের (২৭ জানুয়ারি সকাল ৯টা থেকে) পূর্বাভাসে বলা হয়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারী থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং তা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন এবং সড়ক পরিবহন চলাচল ব্যাহত হতে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
রোববারের (২৮ জানুয়ারি সকাল ৯টা থেকে) পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারী থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং তা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন এবং সড়ক পরিবহন চলাচল ব্যাহত হতে পারে। সারাদেশে রাতের সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আবহাওয়া বিভাগ আরও জানিয়েছে, পরবর্তী পাঁচদিনে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা রয়েছে।