দুয়ারে কড়া নাড়ছে বইমেলা, উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
- আপডেট সময় : ০৬:৩১:০৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৪
- / ৪১৯ বার পড়া হয়েছে
দুয়ারে কড়া নাড়ছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। ৫২’র ভাষা শহীদদের স্মরণে প্রতি বছরের মতো এবারও এই গ্রন্থমেলা শুরু হবে ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকেই। মাসব্যাপী বইমেলার আয়োজনে আছে বাংলা একাডেমি। সে উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিশাল মাঠজুড়ে পুরোদমে চলছে স্টল ও প্যাভিলিয়ন নির্মাণের কাজ। বিভিন্ন প্রকাশনীর স্টলের অবকাঠামো নির্মাণে তাই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কারিগর।
আগামী ১ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠেয় এবারের বইমেলা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অমর একুশে গ্রন্থমেলা কমিটির সদস্য সচিব ড. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠেয় মেলার উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।’
এবার মেলায় ৫৭৩টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৮৯৫টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৭৮৬টি সাধারণ স্টল এবং ১০৯টি স্টল লিটল ম্যাগাজিন চত্বরকে দেওয়া হয় বলে জানান ড. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম।
তা ছাড়া এ বছর মোট ৩৭টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ করা হয়েছে। গত বছর ৬০১টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ৯০১টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।
এ বছর মেলার পুরো কাজ বাংলা একাডেমি একাই করছে উল্লেখ করে মুজাহিদুল বলেন, ‘আগের বছরগুলোতে মেলা আয়োজনে কিছু ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি জড়িত ছিল, যা নিয়ে গত বছর কিছুটা সমালোচনা হয়েছিল।’
বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য এ বছর ১১টি বিভাগে ১৬ জনকে কবিতা, কথাসাহিত্য, প্রবন্ধ অথবা গবেষণা, অনুবাদ, নাটক, শিশুসাহিত্য বিভাগ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু, পরিবেশ ও বিজ্ঞান ক্ষেত্র, জীবনী ও লোককাহিনী ইত্যাদি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২৩ দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৪ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব পুরস্কার তুলে দেবেন।
পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন—শামীম আজাদ (কবিতা), ঔপন্যাসিক নুরুদ্দিন জাহাঙ্গীর ও সালমা বাণী (যৌথভাবে কথাসাহিত্য), জুলফিকার মতিন (প্রবন্ধ ও গবেষণা), সালেহা চৌধুরী (অনুবাদ), নাট্যকার মৃত্তিকা চাকমা ও মাসুদ পথিক (যৌথভাবে নাটক), তপঙ্কর চক্রবর্তী (শিশু সাহিত্য), আফরোজা পারভিন এবং আসাদুজ্জামান আসাদ (মুক্তিযুদ্ধের ওপর গবেষণা), সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল ও মো. মজিবুর রহমান (বঙ্গবন্ধুর ওপর গবেষণা), পক্ষীবিদ ইনাম আল হক (পরিবেশ ও বিজ্ঞান ক্ষেত্র), ইসহাক খান (জীবনী) এবং তপন বাগচী ও সুমন কুমার দাস (যৌথভাবে লোককথা)।
আজ দুপুরে মেলার মাঠ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে দেখা যায় এমনই সব দৃশ্য। করাতে কাঠ ও বোর্ড কাটার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে রাত অবধি, সঙ্গে চলছে ঠকঠক পেড়েক পোতার শব্দ। হাঁকডাকে ব্যস্ত করিগররা। তারা তৈরি করছেন স্টল ও প্যাভিলিয়নের অবকাঠামো। দু’একটি এক ইউনিটের স্টলের কাঠামো এরইমধ্যে দাঁড়িয়ে গেছে। বাকি শুধু কাউন্টার শেল্ফ তৈরি, রং-চঙ আর লাইটিং।
স্টল নির্মাণের মৌসুমি ঠিকাদার মো. আলম জানান, বইমেলা শুরু হতে সময় খুব বেশি নেই। হাতে অনেক কাজ। নতুন করে অনেকেই অর্ডার দিচ্ছেন স্টল নির্মাণের। অল্প সময়েই সবাইকে সময়মতো তৈরি করে দিতে হবে। আমার কর্মীরা কাজ করছেন। স্টল তৈরি, রং, লাইটিং, ফিটিংস মিলিয়ে অনেক কাজ থাকে একটি স্টলে। তাই ব্যস্ত সময় পার করছেন সবাই।
মেলা ঘুরে দেখা যায়, বোর্ড দিয়ে একটি স্টলে সর্বনিম্ন খরচ হচ্ছে ২০ হাজার টাকার মতো। বোর্ডের সঙ্গে কাঠ জুড়লেই দাম বেড়ে যাছে অনেক। এরসঙ্গে একটু গুছিয়ে করতে গেলে তা ছাড়িয়ে যাচ্ছে ৩০ হাজার। আর কাপড় দিয়ে করতে গেলে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকাতেই হয়ে যাচ্ছে স্টল গোছানোর কাজ। আর নিজের পছন্দে স্টল করতে গেলে খরচের সীমা নেই। ওটা অর্ডারের ওপর নির্ভর করছে।
প্যাভিলিয়নের বিষয়টি একেবারেই ভিন্ন। সেখানের খরচও তাই গণ্ডিতে বাঁধা যাবে না। পছন্দসই প্যাভিলিয়নের জন্য ডিজাইন অনুযায়ী কম-বেশি হচ্ছে দর। ফলে এ বিষয়ে হিসাব বোঝানো মুশকিল বলে জানালেন ঠিকাদার-কারিগরেরা।
এদিকে বর্তমান পরিস্থিতি ও বইমেলা এলাকায় মেট্রোরেল পরিচালনার ফলে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় মেলার নিখুঁত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বিগত বছরের মতো সব ব্যবস্থা নিয়েছে। ডিএমপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বইমেলাকে কেন্দ্র করে প্রধান চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে—জঙ্গিবাদ, অগ্নিসংযোগ ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা। মেট্রোরেলে দুর্বৃত্তরা নাশকতা চালানোর চেষ্টা করছে, এমনটি লক্ষ্য করায় মেট্রোরেল পরিষেবা একটি নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। তবে বইমেলার মাঠের ভিতরে ও বাইরে ডিএমপি ইউনিফর্ম এবং সাদা পোশাকে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে এবং মেলার আশেপাশের সবকিছু পর্যবেক্ষণের জন্য একটি ওয়াচ টাওয়ার ও ফায়ার টেন্ডার স্থাপন করা হবে।
এ ছাড়া মেলার মাঠ এবং এর আশপাশ সিসিটিভি ক্যামেরা ও ড্রোন দিয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হবে বলে জানান ডিএমপি কমিশনার। নিরাপত্তা রক্ষায় ডিএমপির একাধিক টিম কাজ করবে এবং গুজব ঠেকাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নজরদারি করা হবে।