জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি সংস্থার জন্য তহবিল স্থগিত করল ৯ দেশ
- আপডেট সময় : ০৩:৫৫:৫৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৪
- / ৪১৪ বার পড়া হয়েছে
গত বছরের অক্টোবরে ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। আর হামাসের এই হামলায় ফিলিস্তিনে নিযুক্ত জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ-এর কর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগ সামনে এসেছে। রোববার (২৮ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
তাদের দাবি, সংস্থাটির কিছু কর্মী গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের অতর্কিত হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল। ইসরায়েলের এমন অভিযোগের পর মানবিক সহায়তা দেয়া প্রধান সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ-তে অর্থায়ন স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, সংস্থাটির অন্তত ১২ কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। পরে একই পথে হেঁটেছে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ইতালি। তারাও এই সংস্থায় অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছে।
যুক্তরাজ্য সরকার বলেছে, তারা ইসরায়েলের অভিযোগে ‘শঙ্কিত’। ইউরোপের এই দেশটি ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, কানাডা, ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড এবং জার্মানিও জাতিসংঘের এই সংস্থাকে অতিরিক্ত অর্থায়ন স্থগিত করেছে।
কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বলছে, শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) ইসরায়েলের অভিযোগ আমলে নিয়ে কয়েকজন কর্মীর সঙ্গে চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে ইউএনআরডব্লিউএ। ইউএনআরডব্লিউএয়ের কমিশনার জেনারেল ফিলিপ লাজারিনি বলেছেন, ‘গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ভয়াবহ হামলায় ইউএনআরডব্লিউএয়ের বেশ কয়েকজন কর্মী জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে বলে তথ্য দিয়েছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। সংস্থার মানবিক সহায়তা প্রদানের সক্ষমতা রক্ষা করতে আমি এই সদস্যদের সঙ্গে অবিলম্বে চুক্তি বাতিল করার এবং সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য শিগগিরই তদন্ত শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং বলেন, ইউএনআরডব্লিউএয়ের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এক্সে করা এক পোস্ট করে তিনি জানান, ‘আমরা অংশীদারদের সঙ্গে কথা বলছি এবং তহবিল বিতরণ সাময়িকভাবে স্থগিত করব।’ এসময় তিনি ইউএনআরডব্লিউএয়ের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়াকে স্বাগত জানান। তার কথায়, চুক্তি বাতিল করা এবং তদন্ত শুরু করার পাশাপাশি সংস্থাটির বিরুদ্ধে অভিযোগের পূর্ণ তদন্তের ঘোষণাকে আমরা স্বাগত জানাই।’
শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) কানাডার আন্তর্জাতিক উন্নয়নমন্ত্রী আহমেদ হুসেন ঘোষণা করেন, ‘অটোয়া এই অভিযোগের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত চলাকালে ইউএনআরডব্লিউএকে কোনো অতিরিক্ত তহবিল সরবরাহ সাময়িকভাবে স্থগিত রাখবে।’ এক্সে করা পোস্টে তিনি বলেন, ‘কানাডা এই অভিযোগগুলো অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে নিয়েছে এবং এ বিষয়ে ইউএনআরডব্লিউএ এবং অন্য দাতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। যদি অভিযোগ সঠিক প্রমাণিত হয়, কানাডা আশা করে যে ইউএনআরডব্লিউএ হামাসের সন্ত্রাসী হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেবে।’
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ছয়টি ইউরোপীয় দেশ শনিবার (২৭ জানুয়ারি) ইউএন শরণার্থী সংস্থা ফর ফিলিস্তিনিদের জন্য তহবিল স্থগিত করেছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড এবং ফিনল্যান্ড।
সর্বশেষ জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থায় আর্থিক সহায়তা সাময়িক বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়ে ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি বলেন, ‘গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নৃশংস হামলার পর ইউএনআরডব্লিউএয়ের অর্থায়ন স্থগিত করেছে ইতালি সরকার।’ এ ছাড়া ইতালির অন্য মিত্র দেশও একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গাজায় ইউএনআরডব্লিউএয়ের ১৩ হাজার কর্মী রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় সবাই ফিলিস্তিনি স্কুলের শিক্ষক, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী এবং ত্রাণকর্মী। ২০২২ সালে ইউএনআরডব্লিউএয়ের শীর্ষস্থানীয় দাতাদের মধ্যে ছিল যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো। সংস্থাটি বারবারই বলে আসছে, গাজায় তাদের মানবিক সহায়তা পরিচালনার সক্ষমতা ফুরিয়ে আসছে।