মেলবোর্ন পার্কে পঞ্চম সেটের দশম গেমটার পয়েন্ট নির্ধারিত হতেই রড লেভার অ্যারেনার নীল কোর্টে হাত-পা দুদিকে ছড়িয়ে শুয়ে পড়লেন ইয়ানিক সিনার। না, হতাশায় নুয়ে পড়েননি ২২ বছর বয়সী ইতালিয়ান টেনিস তারকা। তাঁর দেশের ৪৮ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম জিতেছেন সিনার। সেটাও আবার খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে।
তৃতীয় বাছাই দানিল মেদভেদেভের বিপক্ষে বছরের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনালে প্রথম দুই সেট ৬-৩, ৬-৩ গেমে হেরে পিছিয়ে পড়েছিলেন সিনার। অনেকেই তখন ইতালিয়ান তরুণ টেনিস তারকার স্বপ্নযাত্রার গল্পে এ দফায় সমাপ্তিরেখা দেখছিলেন। কিন্তু এত সহজে হার মানতে নারাজ সিনার। রুশ টেনিস তারকার বিপক্ষে তৃতীয় সেটে ৬-৪ গেমে জয় তুলে নেন।
ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন চতুর্থ সেটেও। একই ব্যবধানে জিতে ম্যাচ টেনে নিয়ে যান পঞ্চম সেটে। শেষ সেটে ৬-৩ গেমে জিতে ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম লেখান ২২ বছর বয়সী সিনার। উন্মুক্ত যুগে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ছেলেদের এককে ২৮তম বিজয়ী সিনার।
ইতালির ইতিহাসে প্রথম টেনিস তারকা হিসেবে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জেতার কীর্তি গড়েছেন টুর্নামেন্টের চতুর্থ বাছাই। এর আগে মাত্র দুজন ইতালিয়ান গ্র্যান্ড স্ল্যামের শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছেন। এর মধ্যে পিয়েত্রাঞ্জেলি ১৯৫৯ ও ১৯৬০ সালে ফ্রেঞ্চ ওপেন জিতেছিলেন। ১৯৭৬ মৌসুমে দ্বিতীয় ইতালিয়ান হিসেবে ফরাসি ওপেন জিতেছিলেন আদ্রিয়ানো পানাত্তা।
অবশ্য একটা জায়গায় স্বদেশি দুজনকে ছাড়িয়ে গেছেন সিনার। মাত্র ২২ বছর ১৬৫ দিনে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতে উন্মুক্ত যুগে ইতালির নারী-পুরুষ সব মিলিয়ে সর্বকনিষ্ঠ গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ী সিনার। কেবল ইতালির ইতিহাসে নয়, ২০০৮ সালে নোভাক জোকোভিচের পর অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে শিরোপা জিতলেন। উন্মুক্ত যুগের ইতিহাস বিবেচনায় নিলে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে অবশ্য তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ শিরোপাজয়ী সিনার।
উন্মুক্ত যুগে ২৩ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে সিনার মাত্র দ্বিতীয় টেনিস খেলোয়াড়, যিনি গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনালে প্রথম দুই সেটে পিছিয়ে পড়েও শিরোপা জিতেছেন। এর আগে ১৯৭৪ সালে ১৮ বছর ১০ দিন বয়সে ফ্রেঞ্চ ওপেনের ফাইনালে প্রথম দুই সেট হেরেও শেষ হাসি হেসেছিলেন বিয়র্ন বোর্গ।
অন্যদিকে নিজের ভাগ্যকে দুষতেই পারেন মেদভেদেভ। সর্বশেষ চার মৌসুমের তিনবারই অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনাল হেরে খালি হাতে ফিরতে হলো রুশ টেনিস তারকাকে। অথচ সেমিফাইনালে আলেক্সজান্ডার জভেরেভের বিপক্ষে প্রথম দুই সেটে হেরেও দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনে ফাইনালে উঠেছিলেন তিনি।
ফাইনালে হারায় কিছু রেকর্ডে উঠেছে মেদভেদেভের নামও। উন্মুক্ত যুগে মাত্র দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে ক্যারিয়ারের প্রথম তিনটি ফাইনাল হেরেছেন রুশ টেনিস তারকা। এর আগে ব্রিটিশ তারকা অ্যান্ডি মারে প্রথম তিন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে হেরেছিলেন।
উন্মুক্ত যুগে মেদভেদেভই একমাত্র খেলোয়াড়, যিনি ভিন্ন গ্র্যান্ড স্ল্যামে প্রথম দুই সেটে এগিয়ে গিয়েও হেরেছেন। এর আগে ২০২২ সালের অস্ট্রেলিয়া ওপেনের ফাইনালে রাফায়েল নাদালের বিপক্ষে দুই সেটে সামনে থেকেও শেষমেষ খালি হাতে ফিরেছেন মেদভেদেভ।