দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে নবীন-প্রবীণ এমপিদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে। ৩শ সংসদ সদস্যের পাশাপাশি কয়েকশ অতিথির উপস্থিতিতে সংসদকক্ষের ভিআইপি গ্যালারি ও দর্শনার্থী গ্যালারি পরিপূর্ণ হয়ে যায়। অতিথি হিসেবে যোগ দিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা। এদিন পুরো সংসদ ভবন
মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদ ভবনে একাদশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। এর মধ্য দিয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের পর যাত্রা করলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ।
সূচনা অধিবেশনের ১ম দিন ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তার ভাষণের পর সংসদের অধিবেশন ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
অধিবেশনের প্রথম দিন যা যা হলো: অধিবেশনের শুরুতে ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন। এরপর দিনের কার্যসূচি অনুযায়ী স্পিকার পদে নির্বাচন হয়। স্পিকার পদে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর নাম প্রস্তাব করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। প্রস্তাবটি সমর্থন করেন সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরি লিটন। এরপর কণ্ঠভোটে তা পাস হয়। এরপর স্পিকারের শপথ অনুষ্ঠানের জন্য সংসদ অধিবেশন কিছু সময়ের জন্য মুলতবি করা হয়।
সংসদ ভবনে অবস্থিত রাষ্ট্রপতির দপ্তরে স্পিকারকে শপথ পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। শপথগ্রহণ শেষে সংসদ অধিবেশন পরিচালনায় আসেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরি। এরপর ডেপুটি স্পিকার পদে নির্বাচন হয়। এ পদে পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকুর নাম প্রস্তাব করেন সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এবি তাজুল ইসলাম এবং সমর্থন করেন মকবুল হোসেন। প্রস্তাবটি ভোটে দিলে সংসদ সদস্যরা ‘হ্যাঁ’ বলে সমর্থন জানান। দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত ডেপুটি স্পিকারকে শপথ পড়ান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
সভাপতিমণ্ডলী মনোনয়ন: ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন শেষে নিয়ম অনুযায়ী পাঁচ সদস্যের সভাপতিমণ্ডলী মনোনয়ন দেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরি। তারা হলেন, এবি তাজুল ইসলাম, শাহাব উদ্দিন, আ ফ ম রুহুল হক, হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ ও উম্মে কুলসুম। স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে নামের অগ্রবর্তিতা অনুসারে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা সংসদের বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন।
শোক প্রস্তাব উত্থাপন: সভাপতিমণ্ডলী মনোনয়নের পর শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী শোক প্রস্তাবটি পেশ করেন। শোক প্রস্তাবে কুয়েতের আমির শেখ নাওয়াফ আল আহমদ আল জাবের আল সাবাহ’র মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়। এছাড়া সাবেক সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী জিনাতুন নেসা তালুকদার, সাবেক সংসদ সদস্য ড. মো. আকরাম হোসেন চৌধুরীসহ বিভিন্ন স্তরের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়।
রাষ্ট্রপতির ভাষণ: স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ভাষণ দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে আহ্বান করেন। বিউগল বাজানোর মধ্য দিয়ে বিকেল সাড়ে ৪টায় রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করলে সবাই দাঁড়িয়ে সম্মান জানান। এরপর শব্দযন্ত্রের মাধ্যমে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। স্পিকারের পাশের আসনে বসেন রাষ্ট্রপতি। এরপর ভাষণ দেন তিনি। নির্বাচিত হওয়ার পর এটাই ছিল রাষ্ট্রপতির জাতীয় সংসদে প্রথম ভাষণ। রাষ্ট্রপতির ভাষণ শেষে মুলতবি ঘোষণা করা হয় অধিবেশনের প্রথম দিন।
অধিবেশন কক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে সালাম জানাতে ভিড়: অধিবেশন শুরুর কিছুক্ষণ আগে সংসদ কক্ষে প্রবেশ করেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঘিয়ে রঙের জমিনে বেগুনি আঁচল ও পাড়ের জামদানি শাড়ি পরে আসেন তিনি। এ সময় সিটে বসার আগে প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে জড়ো হন সংসদ সদস্যরা। তারা সবাই সংসদ নেতাকে সালাম দেন।
নায়ক ফেরদৌসের ফটো বিলাস: এবারের সংসদে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়েছেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ। অধিবেশন কক্ষে আসার পর থেকে তাকে বেশ উচ্ছ্বসিত দেখা গেছে। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বেশ কয়েকজন এমপি-মন্ত্রীর সঙ্গে কুশল ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি। পাশাপাশি অধিবেশন কক্ষের পাশে থাকা ভিভিআইপি গ্যালারিতে অবস্থান নেয়া অতিথিদের সঙ্গেও শুভেচ্ছা বিনিময় করতে দেখা যায় তাকে। অধিবেশন শুরুর পর পেছনের সারিতে থাকা এক এমপিকে নিজের মোবাইল দিয়ে তার ছবি তুলে দেয়ার অনুরোধ জানান ফেরদৌস। ওই এমপি তাকে বেশ কয়েকটি ছবি তুলে দেন। এরপর ওই এমপি ফেরদৌসের হাতে মোবাইল দিয়ে তারও ছবি তুলে দেয়ার অনুরোধ জানান। ফেরদৌস সেই অনুরোধ রক্ষা করেন।