পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্যের জেরে যা বললেন ডুজারিক
- আপডেট সময় : ০৭:২২:৫৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / ৪১৩ বার পড়া হয়েছে
মানবাধিকার, ভোটদান এবং মৌলিক অধিকারের চরম লঙ্ঘনের জন্য সদস্য রাষ্ট্রকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার ব্যবস্থা প্রসঙ্গে জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, বিশ্বসংস্থাটির সেই সক্ষমতা (ব্যবস্থা) রয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জাতিসংঘের মৌলিক অধিকারকে সম্মান করার আহ্বান নাকচ করে দিয়েছেন। মন্ত্রী বলেছেন, জাতিসংঘের পক্ষ থেকে কে কী বলছে, আমরা তা পরোয়া করি না। এ বিষয়ে সরাসরি উত্তর এড়িয়ে গিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখপাত্র মানবাধিকার কাউন্সিলের দায়িত্বের কথা সামনে আনেন।
স্থানীয় সময় বুধবার (৩১ জানুয়ারি) জাতিসংঘের সদর দপ্তরে নিয়মিত ব্রিফিং চলাকালে এসব কথা বলেন স্টিফেন ডুজারিক। এসময় তাকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিক মুশফিক আহমেদ আনসারি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের মৌলিক অধিকারকে সম্মান করার আহ্বান নাকচ করে দিয়েছে। বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের পক্ষ থেকে কে কী বলছে, আমরা তা পরোয়া করি না। আমার প্রশ্ন, শুধুমাত্র উদ্বেগ প্রকাশ ছাড়া, মানবাধিকার, ভোটদান এবং মৌলিক অধিকারের চরম লঙ্ঘনের জন্য সদস্য রাষ্ট্রকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার কোনো (কার্যকর) ব্যবস্থা কী জাতিসংঘের রয়েছে?
ডুজারিক : ভালো বলেছেন, (এমন ব্যবস্থা আমাদের হাতে) আছে… আমি বলবো সম্ভবত কার্যকর কৌশল বা মেকানিজম হচ্ছে, জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের কোনটির অভ্যন্তরে যদি মানবাধিকার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক বলে মনে হয় তবে সেই দেশকে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের অধীনে ইউনিভার্সেল পিরিয়ডিক রিভিউ বা সার্বজনীন পর্যালোচনার আওতায় আনতে পারে বিশ্ব সংস্থাটি।
এর দু’দিন আগে, সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের মহাসচিবের এই মুখপাত্র বলেন, নীতিগতভাবে জাতিসংঘ বিশ্বাস করে, রাজনৈতিক মত প্রকাশের জন্য কাউকে জেলে নেয়া উচিত নয়। স্থানীয় সময় সোমবার জাতিসংঘের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জানতে চাওয়া হয়, বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ, বিনা অপরাধে বা অভিযোগে আটক বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে অবিলম্বে ও নিঃশর্ত মুক্তির জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের আহ্বানের সঙ্গে একই ধরনে আহ্বান জানাবেন কি না?
জবাবে স্টিফেন ডুজারিক বলেন, ‘নীতিগত জায়গা থেকে আমরা বিশ্বাস করি, রাজনৈতিক মত প্রকাশের জন্য কাউকে জেলে নেয়া উচিত নয় এবং যাদের নেয়া হয়েছে তাদের মুক্তি দেয়া উচিত, বিশেষ করে কারও বিরুদ্ধে যদি কোনো নির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকে।’
এর আগে গত ২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন সরকারকে মানবাধিকার বিষয়ে বড় ধরনের বা ব্যাপক সংস্কারের আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচআরসি এক বিবৃতিতে বলেছে, টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় আসায় বাংলাদেশ সরকারের উচিত, দেশে দমনমূলক প্রবণতা প্রতিহত করতে, রাজনৈতিক সংলাপ পুনরুদ্ধার ও রাজনীতিতে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিতে মানবাধিকার প্রশ্নে সংস্কার আনা।
বিবৃতিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘আমরা নাগরিক সমাজ, মানবাধিকার রক্ষক, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর ব্যাপক হামলা, হয়রানি ও ভয় দেখানোর খবরে উদ্বিগ্ন।’ বিশেষজ্ঞরা অভিযোগ করেন, এসব বিষয় বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া সাম্প্রতিক নির্বাচনকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
নির্বাচনের আগে প্রায় ২৫ হাজার বিরোধী সমর্থককে নির্বিচারে আটক করা হয়েছে। ইচ্ছাকৃতভাবে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ওপর বলপ্রয়োগ করা হয়েছে এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। কেবল নির্বাচনী সহিংসতায় ৫৬ জন নিহত হয়েছেন। অথচ এসব সহিংসতার কোনো স্বাধীন তদন্ত হয়নি বলেও জানিয়েছেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করেছেন, দেশের প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল আস্থার অভাব প্রকাশ করে নির্বাচন বয়কট করেছে। ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরা ভোট দেয়ার জন্য ভোটারদের চাপ দিয়েছেন এবং ভোট না দিলে সহিংসতা ও তাদের সামাজিক সুরক্ষা সুবিধা কেড়ে নেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছিল।