মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশ থামছেই না, অর্ধশত ছাড়াল
- আপডেট সময় : ০৩:৩২:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / ৪৩০ বার পড়া হয়েছে
মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ১০ জন গুলিবিদ্ধসহ ৬৬ সদস্য পালিয়ে বান্দরবনে আশ্রয় নিয়েছে। দেশটির বিদ্রোহী দল আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যে সীমান্ত পেরিয়ে ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রুতে অবস্থিত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ফাঁড়িতে আশ্রয় নেন তারা। তাদের অস্ত্র ও গুলি বিজিবি’র হেফাজতে আছে। রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টায় বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের তুমব্রু এলাকার বিজিবি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন পালিয়ে আসা বিজিপি সদস্যরা। আজ রোববার সকালে শূন্যরেখা পেরিয়ে তুমব্রু ক্যাম্পে আশ্রয় নেন তারা।
ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, আজ রোববার ভোর থেকে মিয়ানমার সীমান্তের অভ্যন্তরে ব্যাপক গোলাগুলি হচ্ছে। মাঝে মাঝেই বিকট শব্দে কেপে উঠছে ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তবর্তী এলাকা। এলাকাবাসীদের প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়ার জন্য বলা হয়েছে বলেও জানান এই চেয়ারম্যান।
ইউপি সদস্য দিল মোহাম্মদ বলেন, তুমব্রু সীমান্তবর্তী তিনটি গ্রাম মানুষ শূন্য হয়ে পড়েছে। গবাদি পশু, পোষা পাখি ও মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে গেছে মানুষজন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নেওয়াদের প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সম্প্রতি জোরোলো অভিযান শুরু করেছে আরকান আর্মিসহ দেশটির বিদ্রোহী গ্রুপগুলো। ফলে দেশটির বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে সীমান্ত এলাকাগুলোতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বা যুদ্ধ চলছে। গত কয়েক সপ্তাহে দেশটির বহু সেনা উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন।
রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সীমান্তের ওপারে চলছে মুহুর্মুহু মর্টার শেল ও গুলিবর্ষণ। এতে সীমান্তে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। তুমব্রু সীমান্তের কাছে দুই গ্রামের প্রায় তিন হাজার বাংলাদেশি অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। মিয়ানমার থেকে আসা গুলিতে তিন বাংলাদেশি আহত হয়েছেন।
এদিকে, মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলিতে তুমব্রু সীমান্তে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তিনজন বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন- কোনারপাড়ার বাসিন্দা প্রবীন্দ্র ধর (৫০), রহিমা বেগম (৪০) ও শামসুল আলম। আতঙ্কে ঘর ছেড়েছেন তিন গ্রামের মানুষ। নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণ চলছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, সীমান্তে যাতে অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সীমান্তের দিকে নজর রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, শনিবার রাত থেকে হঠাৎ গোলাগুলি বেড়ে যায়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তা করে ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তের কাছে পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বন্ধ হওয়া বিদ্যালয়গুলো হলো- বাইশফাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাজাবনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু পশ্চিমকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এদিকে রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, মিয়ানমারে যে যুদ্ধ চলছে তা কতদিন চলবে আমরা জানি না। আমাদের সীমান্ত ক্রস করে কাউকে আসতে দেব না। আমাদের বিজিবিকে আমরা সেই নির্দেশনা দিয়েছি।
মন্ত্রী বলেন, আমরা কোনো যুদ্ধে জড়াতে চাই না, যুদ্ধ চাইও না। এটা প্রধানমন্ত্রী সবসময় আমাদের নির্দেশনা দিয়ে রেখেছেন। তার মানে এই নয় যে আমাদের গায়ে এসে পড়বে আর আমরা ছেড়ে দেব। সেটার জন্য আমরা সবসময় তৈরি আছি।
অন্যদিকে মিয়ানমারের রাখাইনে জান্তা বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টায় কক্সবাজার ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে পাঁচটি পয়েন্টে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান নিয়েছে। সীমান্তে রোহিঙ্গাদের জড়ো হওয়ার খবরে সতর্কাবস্থায় রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
জানাগেছে, বাংলাদেশের সীমান্তঘেঁষা মিয়ানমারের রাখাইনে স্বাধীনতাকামী বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) এবং দেশটির সেনাবাহিনীর মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ চলছে। এতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সীমান্ত পরিস্থিতি। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ- বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পিলার ২৩ এর পাশে টেকনাফের উত্তর আনজুমানপাড়া, সীমান্ত পিলার ১৮ এর পাশ্ববর্তী এলাকা, ২৭/ ২৮ পিলার এলাকা, ৩৪/ ৩৫ পিলারের মধ্যবর্তী স্থান তুমব্রু, ৩৭/৩৮ পিলারের মধ্যবর্তী এলাকা আমবাগান নামক স্থানে অবস্থান নিয়েছে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা। তারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষা বাহিনী।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকা রয়েছে ১২২ কিলোমিটার। এর মধ্যে দুই দেশের সীমান্ত সুরক্ষায় মাইন পুতে রেখেছে দুই দেশ।