দুই পর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা আহমেদ রেজা রুবেল মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজিউন)। বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় তার মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন অভিনয় শিল্পী সংঘের সভাপতি আহসান হাবিব নাসিম। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৫ বছর।
প্রখ্যাত অভিনেতা আহমেদ রেজা রুবেলের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এক শোক বার্তায় তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
জানা গেছে, আজ সন্ধ্যায় অভিনেতার ‘পেয়ারার সুবাস’ সিনেমার বিশেষ প্রদর্শনী ছিল। এ প্রদর্শনীতেই যোগ দিতে পান্থপথের বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে এসেছিলেন আহমেদ রুবেল। সেখানে লিফটে উঠার সময় হুট করে মাথা ঘুরে পরে যান তিনি। এরপর তাকে স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা অভিনেতাকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রাথমিকভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই রুবেলের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পেতে যাচ্ছে এই অভিনেতার ‘পেয়ারার সুবাস’ সিনেমা। এর আগে আজ সন্ধ্যায় সিনেমাটির বিশেষ প্রিমিয়ার অনুষ্ঠানে এসে দর্শকদের সঙ্গে বসে সিনেমা দেখার কথা থাকলেও প্রেক্ষাগৃহে ঢুকার আগেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন তিনি।
এদিকে রুবেলের মৃত্যুর খবরে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান। এই অভিনেতার অভিনীত সবশেষ সিনেমা ‘পেয়ারার সুবাস’-এ একসঙ্গে কাজ করেছিলেন দু’জনে। দুদিন পরেই প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে নুরুল আলম আতিকের নির্মিত নতুন এই ছবি।
উল্লেখ্য, ১৯৬৮ সালের ৩ মে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের রাজারামপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আহমেদ রুবেল। তার পিতার নাম আয়েশ উদ্দিন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের ইসলামপুরে নানার বাড়ি। পিতা–মাতার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে হলেও ছোটবেলা থেকেই বেড়ে উঠেছেন ঢাকায়। পরিবারের সঙ্গে ঢাকার গাজীপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন।
সমসাময়িক অন্যান্য অভিনেতাদের তুলনায় সেভাবে আলোচনায় থাকেননি রুবেল। থাকবেনেই বা কী করে, তিনি সবসময় কাজ করেছেন বেছে বেছে। এক চরিত্রে একাধিকবার দেখা যেত না এই অভিনেতাকে।
এই অভিনেতা তার নাট্যজীবন শুরু করেন সেলিম আল দীনের ‘ঢাকা থিয়েটার’ দলের মাধ্যমে। পরবর্তীতে একাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। সিনেমায় অভিনয়ের পর টেলিভিশন নাটকে অভিনয় শুরু করেন তিনি।
হুমায়ূন আহমেদের ঈদ নাটক ‘পোকা’তে ‘গোরা মজিদ’ চরিত্রটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা এনে দেয় আহমেদ রেজা রুবেলকে। এছাড়াও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘শ্যামল ছায়া’ সিনেমায় এই অভিনেতার অভিনয় দর্শকপ্রিয়তা লাভ করে।
১৯৯৩ সালে ‘আখেরী হামলা’ সিনেমার মাধ্যমে রুপালি পর্দায় পা রাখেন আহমেদ রুবেল। এরপর ‘চন্দ্রকথা’, ‘ব্যাচেলর’, ‘গেরিলা’, ‘দ্য লাস্ট ঠাকুর’, ‘শ্যামল ছায়া’ প্রভৃতি সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি।
সাবলীল অভিনয়ের জন্য দর্শকদের মনে জায়গা করে নিলেও রুবেলের ছোটবেলার ইচ্ছে ছিল রাজনীতিবিদ হওয়ার। অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন লালন করেননি তখনও। ২০২২ সালে একটি জাতীয় দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তেমনটাই জানিয়েছিলেন তিনি।
এই অভিনেতা বলেছিলেন, আমার বাবা ছিলেন শিক্ষক। তাই তিনি চাইতেন আমি ভালোভাবে পড়ালেখা করি। কিন্তু আমার ভেতরে তখন কাজ করছে অন্যকিছু। ছোটবেলা থেকেই ডানপিটে ছিলাম, মারামারি করতাম সুযোগ পেলেই। একসময় রাজনীতির দিকে ঝুঁকতে শুরু করলাম, যদিও তখনো ম্যাট্রিকের গণ্ডি পার করিনি। আমি রাজনীতিবিদ হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাবার কঠোর নির্দেশ ছিল- পরিবার থেকে এ বিষয়ে কোনো সহযোগিতা করা হবে না। তাই অল্প বয়সেই সিদ্ধান্ত নিলাম যে রাজনীতি আর করা যাবে না। তাই কিছু তো একটা করতে হবে। সেই থেকে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের দিকে ঝুঁকে পড়লাম।
শুরুর দিকে নিজের জন্মস্থান গাজীপুরে নাট্যদল গঠন করে অনেককে নিয়ে নাট্যচর্চা শুরু করেন। নাট্যকার সেলিম আল দীনের সহায়তায় গ্রাম থিয়েটার আন্দোলনের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন এই অভিনেতা। এরপর পেয়ে বসে অভিনেতা হবার অদম্য বাসনা। গাজীপুরের আঞ্চলিক পরিমণ্ডল থেকে এইচএসসি শেষ করার পর ঢাকায় এসে ঢাকা থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হন। শুরু হয় পেশাদারী নাট্যচর্চা শুরুর পাঠ। এখানে এসেই তিনি সেলিম আল দীন, নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, আফজাল হোসেন, হুমায়ূন ফরিদীর মতো অভিনয় কিংবদন্তীদের সাহচর্য পান এবং নিজেকে তৈরি করতে থাকেন।
প্রথম মঞ্চনাটক, এরপর টিভি নাটক পরবর্তীতে বাণিজ্যিক সিনেমাসহ একাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি। হুমায়ূন আহমেদের ঈদ নাটক ‘পোকা’তে ‘গোরা মজিদ’ চরিত্রটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা এনে দেয় আহমেদ রেজা রুবেলকে। এছাড়াও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘শ্যামল ছায়া’ সিনেমায় এই অভিনেতার সাবলীল অভিনয় দর্শকপ্রিয়তা লাভ করে।