ঢাকা ০৭:৪৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

লোহিত সাগরের অস্থিরতা মূল্যস্ফীতি বাড়াতে পারে

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৮:৩১:১৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ৪২৭ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সমুদ্রপথে নতুন করে পণ্যের পরিবহন বীমার সাথে যোগ হচ্ছে ‘যুদ্ধ বীমা’। হাজার জাহাজ এরই মধ্যে পরিবর্তন করেছে গতিপথ। অনেক জাহাজ মধ্যপ্রাচ্যের সীমানায় আটকে আছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলএনজি আমদানিতেও অনিশ্চয়তা দেখছেন গবেষকরা। এমন পরিস্থিতিতে আবারও মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে।

গম, ভুট্টা, ভোজ্যতেল, চিনি ছাড়াও শিল্পের যন্ত্রাংশ, তুলা ও কাঁচামাল আমাদানিতে এখনও বিশ্ব শতাংশের হারে পশ্চিমে নির্ভর। মধ্যপ্রাচ্যসহ নানা দেশ থেকে পণ্যের সোর্সিং করলেও সারাবিশ্বে খনিজ পদার্থের অন্যতম সরবরাহকারী আফ্রিকা-ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকা। সেখানে বাংলাদেশসহ বিশ্ব বাণিজ্যের নতুন দুঃশ্চিন্তার নাম, লোহিত সাগর।

বাংলাদেশের জ্বালানি সংকট কাটাতে এতোদিন এলএনজি আমদানি মধ্যপ্রাচ্যনির্ভর ছিল। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ১৫ বছরের মেয়াদী আমদানি চুক্তি হয়। ক্যারবীয় অঞ্চলের সংঘাত জ্বালানি নিরাপত্তার পরিকল্পনাকে ভেস্তে দিতে পারে। কিন্তু জলের কিনারার কুটকৌশলে বদলে যাচ্ছে সমুদ্রপথের রুট আর পণ্যের ভাগ্য। এরই মধ্যে কন্টেইনার প্রতি খাদ্য বীমায় যোগ হয়েছে ৫০ থেকে ১০০ মার্কিন ডলার যুদ্ধ বীমা। আর ইসরাইল হয়ে যেসব পণ্য আনা হয় তাতে যুদ্ধ বীমা বেড়েছে ২৫০ শতাংশ।

ঝুঁকি বিবেচনায় এখন পর্যন্ত হাজার জাহাজ তাদের গতিপথ বদল করেছে। মধ্যপ্রাচ্য হয়ে আসা-যাওয়া বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানির পণ্য আটকে আছে। যেগুলো গন্তব্যে পৌঁছাতে প্রয়োজন মালয়েশিয়া, হংকংয়ের মতো তৃতীয় দেশের সাহায্য।

শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশনের সভাপতি খায়রুল আলম সুজন বলেন, ‘এখন ইউরোপ-আমরিকা, কানাডার পথগুলোতে যেতে হচ্ছে। এতে করে যে পথ ঘুরতে হচ্ছে, এজন্য আলাদা ভাড়াও নির্ধারণ করেছে।”

এলএবিসিসিআই-এর সভাপতি আনোয়ার শওকত আফসার বলেন, ‘শিপিংগুলোর প্রবলেম হচ্ছে। আর অন্য পোর্ট হয়ে আসা কন্টেইনারের মালগুলো ধীরগতিতে আসছে, সামনে অনিশ্চয়তাও আসতে পারে।’

এই মুহূর্তে মধ্যপ্রাচ্যকে এড়িয়ে যেসব রুট জাহাজগুলো বেছে নিচ্ছে তাতে স্বাভাবিক সময় থেকে এক মাসের বেশি লাগবে শিপিং কোম্পানিগুলোর। খরচে কিছুটা ভারসাম্য আনতে বড় সংখ্যক আমদানি পণ্যে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তাতেও ঝুঁকি দেখছে শিপিং কোম্পানিগুলো।

আনোয়ার শওকত আফসার আরও বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক যে আমাদের আমদানি-রপ্তানি রয়েছে, এখানে সংকট তৈরি হবে।’

সংকট কাটাতে আমদানি পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে স্পট মার্কেটে এখন থেকেই প্রডাক্ট সোর্সিংয়ে দেন-দরবার প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছুটা স্তিমিত হয়ে এলেও লোহিত সাগরের ব্যয়বহুলতা আবারও মূল্যস্ফীতিকে বিশ্বে বিলাসী করে তুলতে পারে। সামাল দিতে যার ভার আবারও পড়বে দেশের ঘরের দুয়ারে, শঙ্কা বাণিজ্য বিশ্লেষকদের।

অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবির বলেন, ‘মনে হচ্ছে, সাগরের এই উত্তেজনা সামনে আরও বেড়ে যেতে পারে। আর এটির যদি সমাধান না হয় তাহলে বিশ্ব বাণিজ্যের খরচ আরেক দফা বাড়বে। সেখানে আবার সুদহার বাড়াতে বাধ্য হবে, এটি হলে ব্যবসা-বাণিজ্যের খরচ আরও বেড়ে যাবে।’

এমন পরিস্থিতিতে রেমিট্যান্স আয়ে গতিশীলতা আনার সাথে সাথে রপ্তানি আয় ধরে রাখতে এখন থেকেই পণ্যের বৈচিত্রতা নিয়ে নতুন গন্তব্য নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

নিউজটি শেয়ার করুন

লোহিত সাগরের অস্থিরতা মূল্যস্ফীতি বাড়াতে পারে

আপডেট সময় : ০৮:৩১:১৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

সমুদ্রপথে নতুন করে পণ্যের পরিবহন বীমার সাথে যোগ হচ্ছে ‘যুদ্ধ বীমা’। হাজার জাহাজ এরই মধ্যে পরিবর্তন করেছে গতিপথ। অনেক জাহাজ মধ্যপ্রাচ্যের সীমানায় আটকে আছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলএনজি আমদানিতেও অনিশ্চয়তা দেখছেন গবেষকরা। এমন পরিস্থিতিতে আবারও মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে।

গম, ভুট্টা, ভোজ্যতেল, চিনি ছাড়াও শিল্পের যন্ত্রাংশ, তুলা ও কাঁচামাল আমাদানিতে এখনও বিশ্ব শতাংশের হারে পশ্চিমে নির্ভর। মধ্যপ্রাচ্যসহ নানা দেশ থেকে পণ্যের সোর্সিং করলেও সারাবিশ্বে খনিজ পদার্থের অন্যতম সরবরাহকারী আফ্রিকা-ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকা। সেখানে বাংলাদেশসহ বিশ্ব বাণিজ্যের নতুন দুঃশ্চিন্তার নাম, লোহিত সাগর।

বাংলাদেশের জ্বালানি সংকট কাটাতে এতোদিন এলএনজি আমদানি মধ্যপ্রাচ্যনির্ভর ছিল। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ১৫ বছরের মেয়াদী আমদানি চুক্তি হয়। ক্যারবীয় অঞ্চলের সংঘাত জ্বালানি নিরাপত্তার পরিকল্পনাকে ভেস্তে দিতে পারে। কিন্তু জলের কিনারার কুটকৌশলে বদলে যাচ্ছে সমুদ্রপথের রুট আর পণ্যের ভাগ্য। এরই মধ্যে কন্টেইনার প্রতি খাদ্য বীমায় যোগ হয়েছে ৫০ থেকে ১০০ মার্কিন ডলার যুদ্ধ বীমা। আর ইসরাইল হয়ে যেসব পণ্য আনা হয় তাতে যুদ্ধ বীমা বেড়েছে ২৫০ শতাংশ।

ঝুঁকি বিবেচনায় এখন পর্যন্ত হাজার জাহাজ তাদের গতিপথ বদল করেছে। মধ্যপ্রাচ্য হয়ে আসা-যাওয়া বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানির পণ্য আটকে আছে। যেগুলো গন্তব্যে পৌঁছাতে প্রয়োজন মালয়েশিয়া, হংকংয়ের মতো তৃতীয় দেশের সাহায্য।

শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশনের সভাপতি খায়রুল আলম সুজন বলেন, ‘এখন ইউরোপ-আমরিকা, কানাডার পথগুলোতে যেতে হচ্ছে। এতে করে যে পথ ঘুরতে হচ্ছে, এজন্য আলাদা ভাড়াও নির্ধারণ করেছে।”

এলএবিসিসিআই-এর সভাপতি আনোয়ার শওকত আফসার বলেন, ‘শিপিংগুলোর প্রবলেম হচ্ছে। আর অন্য পোর্ট হয়ে আসা কন্টেইনারের মালগুলো ধীরগতিতে আসছে, সামনে অনিশ্চয়তাও আসতে পারে।’

এই মুহূর্তে মধ্যপ্রাচ্যকে এড়িয়ে যেসব রুট জাহাজগুলো বেছে নিচ্ছে তাতে স্বাভাবিক সময় থেকে এক মাসের বেশি লাগবে শিপিং কোম্পানিগুলোর। খরচে কিছুটা ভারসাম্য আনতে বড় সংখ্যক আমদানি পণ্যে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তাতেও ঝুঁকি দেখছে শিপিং কোম্পানিগুলো।

আনোয়ার শওকত আফসার আরও বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক যে আমাদের আমদানি-রপ্তানি রয়েছে, এখানে সংকট তৈরি হবে।’

সংকট কাটাতে আমদানি পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে স্পট মার্কেটে এখন থেকেই প্রডাক্ট সোর্সিংয়ে দেন-দরবার প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছুটা স্তিমিত হয়ে এলেও লোহিত সাগরের ব্যয়বহুলতা আবারও মূল্যস্ফীতিকে বিশ্বে বিলাসী করে তুলতে পারে। সামাল দিতে যার ভার আবারও পড়বে দেশের ঘরের দুয়ারে, শঙ্কা বাণিজ্য বিশ্লেষকদের।

অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবির বলেন, ‘মনে হচ্ছে, সাগরের এই উত্তেজনা সামনে আরও বেড়ে যেতে পারে। আর এটির যদি সমাধান না হয় তাহলে বিশ্ব বাণিজ্যের খরচ আরেক দফা বাড়বে। সেখানে আবার সুদহার বাড়াতে বাধ্য হবে, এটি হলে ব্যবসা-বাণিজ্যের খরচ আরও বেড়ে যাবে।’

এমন পরিস্থিতিতে রেমিট্যান্স আয়ে গতিশীলতা আনার সাথে সাথে রপ্তানি আয় ধরে রাখতে এখন থেকেই পণ্যের বৈচিত্রতা নিয়ে নতুন গন্তব্য নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।