সবজিতে স্বস্তি, বেড়েছে পেঁয়াজের দাম
- আপডেট সময় : ০৭:২৩:২০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / ৪৩৬ বার পড়া হয়েছে
সপ্তাহের ব্যবধানে এখন কিছুটা কমেছে সবজির দাম। তবে দেশি পেঁয়াজ সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। করোলা, ঢেঁড়সসহ দুই একটি সবজির দাম চড়া থাকলেও বেশিরভাগ সবজি কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে। শীতকালীন প্রতিটি সবজি আগের দামে বিক্রি হলেও নতুন আলুর দাম কমেছে।
শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মহাখালীর কাঁচা বাজার, তালতলা ও শেওড়াপাড়া বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল। দেশি পুরোনো পেঁয়াজ ১৪০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েছে বলে জানান শেওড়াপাড়া বাজারের খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা আব্দুল খালেক। তিনি বলেন, হঠাৎ করেই দাম বাড়ার কারণে বিক্রি কিছুটা কমেছে।
কারওয়ান বাজারে পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী গফুর মন্ডল বলেন, গত বুধবার রাতে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৭৮ থেকে ৮২ টাকা। বৃহস্পতিবার সকালেই কেজিতে ১৫ টাকার মতো দর বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৯৩ থেকে ৯৭ টাকা পর্যন্ত
পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, মুড়ি কাটা পেঁয়াজের মৌসুম শেষ। বেশির ভাগ এলাকার কৃষকরা ওই পেঁয়াজ তুলে ফেলেছেন। আর হালি পেঁয়াজের ভরপুর মৌসুম শুরু হতে কিছুদিন বাকি রয়েছে। মাঝখানের এ সময়ে চলছে সরবরাহ ঘাটতি। যে কারণে বাজারে দাম বাড়ছে।
আমদানির সবচেয়ে বড় বাজার ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ। আমদানি না থাকায় কয়েক মাস ধরে আগাম জাতের এ পেঁয়াজ দিয়ে চাহিদা মেটানো হচ্ছে। ফলে দেশীয় এ পেঁয়াজের সরবরাহ প্রায় শেষ পর্যায়ে। অন্যান্য বছরের এ সময়ের সঙ্গে তুলনা করলে এখন পেঁয়াজের দর থাকার কথা ৩০ থেকে ৩৫ টাকার মধ্যে। কিন্তু সে চিত্র এখন আর নেই। এত চড়া দামে পেঁয়াজ কিনতে বিরক্ত ক্রেতারা। তাদের বেশির ভাগ পেঁয়াজের এ বাড়তি দামে উষ্মা জানিয়েছেন।
বাজারে দেখা গেছে, শীতকালীন সব ধরনের সবজি আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। তবে নতুন আলুর দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
আজ বাজারে বেগুন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০ টাকা যা কিছু দিন আগে ৮০ থেকে ১০০ টাকা ছিল, সিম প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ৭০ টাকা, তবে বিঁচিযুক্ত সিম প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, লাউ প্রতি পিস ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে যা আগে ছিল সর্বনিম্ন ৮০ টাকা। ফুলকপি, বাঁধাকপি প্রতি পিস ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হলেও গত সপ্তাহে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
অন্যদিকে টমেটোর দাম কিছুটা কমে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়, মিস্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকা,কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৪০ টাকা, করোলা প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, কাঁচা কলা প্রতি হালি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ৮০ টাকা, ব্রুকলি প্রতি পিস ৪০ টাকা, শালগম প্রতি কেজি ৪০ টাকা এবং শসা প্রতি কেজি ৭০ টাকা, মুলা প্রতি কেজি ৫০ টাকা এবং পেঁয়াজের ফুল প্রতি আঁটি ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
লাল শাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকায়। লাউ শাক ৪০ টাকা, মূলা শাক ১৫ থেকে ১৫ টাকা, পালং শাক ১৫ টাকা, কলমি শাক ১০ টাকা।
রাজধানীর মহাখালীর কাঁচা বাজারে ঘুরে ঘুরে সবজি কিনছিলেন আরেক ক্রেতা হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, এবার শীতের মৌসুমে অর্থাৎ যে সময় সবজির ভরা মৌসুম ছিল তখন আমরা অতিরিক্ত বাড়তি দামে সব ধরনের সবজি কিনেছি। আগে কোন বছরেও সবজির দাম এতটা বেশি ছিল না। তবে কি কারণে এই সময় সবজির দাম এত বাড়তি গেল তা আমার মতো সাধারণ ক্রেতাদের জানা নেই। এর পাশাপাশি বাজার মনিটরিংয়ের কোনো উদ্যোগ দেখিনি।
তিনি আরও বলেন, গত সপ্তাহেও সবজির দাম অনেক বেশি ছিল, সে তুলনায় আজকের বাজারে সবজিগুলোর দাম অল্প কিছু করে কমেছে। তবে সেই কমা একেবারে খুব বেশি নয়, ৫ থেকে ১০ টাকা করে প্রতিটি সবজির দাম কমেছে। কিন্তু এই সময় সবজিগুলোর দাম আরো কম হওয়া উচিত ছিল।
চলতি সপ্তাহে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। গত সপ্তাহে একই দামে বিক্রি হয়েছিল। তবে সোনালি, সোনালি হাইব্রিড মুরগির দাম কমেছে। বাজারগুলোতে সোনালি ২৮০ টাকা, সোনালি হাইব্রিড ২৬০ টাকা, দেশি মুরগি ৫০০ থেকে ৫২০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
গরুর মাংস কেজি প্রতি ৬২০ থেকে ৭৫০ টাকা এবং খাসির মাংস কেজি প্রতি ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম ১৩০ টাকা, হাঁসের ডিম ২০০ টাকা, দেশি মুরগির ডিমের হালি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি প্রতি ৮০০ টাকা। চাষের শিং (আকারভেদে) মাছের কেজি ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা, প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি মাগুর ৭০০ থেকে এক হাজার টাকা, মৃগেল ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাঙাশ ২০০ থেকে ২২০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা, বোয়াল ৫০০ থেকে ৯০০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, পোয়া ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কই ২২০ থেকে ২৪০ টাকা, মলা ৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১ হাজার ৬০০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি ৬০০ টাকা, পাঁচমিশালি ২২০ টাকা, রূপচাঁদা ১ হাজার ২০০ টাকা, বাইম এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা, দেশি কই এক হাজার টাকা, মেনি ৭০০ টাকা, শোল ৬০০ থেকে এক হাজার টাকা, আইড় ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা এবং কাইক্ক্যা ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
গুলশান লেকপার কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা আবুল কালাম বলেন, কিছুদিন আগের চেয়ে সবজির বাজার কমতে শুরু করেছে। দুই একটি ছাড়া আজকে প্রায় সবগুলো সবজির দাম গত কিছুদিনের চেয়ে কমেছে। কিছুদিন আগে সবজির সরবরাহ কমে গিয়েছিল, যে কারণে বাড়তি ছিল সবজির দাম। আসলে সে সময় ক্ষেতের ফসলগুলো শেষ দিকে ছিল, সরবরাহ কমে গিয়েছিল বাজারে; সবমিলিয়ে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় বাড়তি দাম ছিল। কিন্তু এখন আগের চেয়ে বাজারে সরবরাহ বেড়েছে , সে কারণে কিছুটা কমে আসতে শুরু করেছে সবজির দাম।
তিনি আরও বলেন, এখন পাইকারি বাজারে তুলনামূলক কম দামে সবজি পাচ্ছি, সে কারণে খুচরা বাজারেও আগের চেয়ে কম দামে বিক্রি করছি।