প্রবাসী বাড়লেও বাড়ছে না রেমিট্যান্স
- আপডেট সময় : ০৭:৪২:০১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / ৪১৬ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশি প্রবাসীর সংখ্যা দেড় কোটির কাছাকাছি। তারমধ্যে ৭৫ শতাংশই থাকে মধ্যপ্রাচ্যে। যেখানে গত ৩ বছরে শুধু সৌদি আরবে গেছেন ১৫ লাখ ৭০ হাজার কর্মী। গত বছরে এই সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। অথচ দেশটি থেকে গত ৩ বছরে রেমিট্যান্স কমেছে ২০০ কোটি ডলার। তথ্য বলছে, প্রবাসীদের ১২ শতাংশই ফেরত আসছেন মাসখানেকের মধ্যেই। তাতে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বে প্রবাসী বাড়লেও বাড়ছে না রেমিট্যান্স।
মধ্যপ্রাচ্যের আরেকটি সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাত। অথচ গত ১০ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে এই বাজার। সম্প্রতি এই বাজার খোলার খবর চাউর হলেও সেটি শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি।
২০২৩ এ প্রবাসীর তালিকায় নতুন যুক্ত হয়েছেন আরও ১৩ লাখ বাংলাদেশি। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ১১ লাখ। বছর বছর সংখ্যা বাড়লেও তুলনামূলকভাবে বাড়ছে না রেমিট্যান্স।
টাঙ্গাইলের ছোট আইনপুর গ্রামে হাফিজা খাতুন সংসারের একটু বাড়তি আয় আর অসুস্থ স্বামী ও সন্তানের সুখের জন্য কয়েক বছর আগে পাড়ি জমিয়েছিলেন আরব সাগরের দক্ষিণের দেশ ওমানে। সুখ আর সন্তুষ্টি তো দূরে কথা, দু’বছর পর দুঃখকে সঙ্গী করে নিঃস্ব হয়ে ফিরে আসেন দেশে।
হাফিজা বলেন, ‘আমি ভালোভাবে চলার জন্য গেছিলাম যে, ওখান থেকে আয় করে দেশে ভালো একটা খামার দিব। তা তো আর পারলাম না। আমার দুঃখ আগের মতোই থেকে গেলো। আমাকে বলেছিল বাড়ির কাজ করলে মাসে ৩০ হাজার টাকা বেতন দিবে। বাসার কাজ করানোর কথা ছিল। বাসার কাজই করাইছে কিন্তু আমাকে বেতন দেয়নি।’
কালিহাতী উপজেলার আক্কাস আলী নামের এক প্রবাসীও বললেন তার সাথে হওয়া অন্যায়ের সদুত্তর চান তিনি। আক্কাস বলেন, ‘গিয়ে দেখি আমার আগে আরও ৯০ জন মানুষ গেছে। ৯০ জনকে ছোট একটা রুমে রেখে দিয়েছে। দুইবেলা ভাত খেতে পারিনি। একবেলা একটা রুটি কিনে দুই থেকে তিন জন মিলে খাইছি। আর সাররাদিন না খেয়ে থাকছি।’
তিনি এখনও মেলাতে পারেননি জীবনের হিসাব। সব হারিয়ে মুদি দোকানের আয় দিয়ে কোনোরকম চলছে তার জীবনের চাকা। আক্কাস বলেন, ‘আমার কিছু জমি ছিল। তা বিক্রি করে সবার টাকা আমি দিয়ে দিছি। সবমিলিয়ে আমার ৬ থেকে ৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’
দুবাই আমের সেন্টারের কর্মকর্তা কামাল হোসাইন খান সুমন বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের শুধুমাত্র স্কিল প্রফেশনাল ভিসা, ইনভেস্টর এবং পার্টনার, ফ্যামিলি ভিসা এবং ট্যুরিস্ট ভিসা চালু রয়েছে।’
তাতে অনেকে অবলম্বন করছেন অসৎ উপায়। দেশীয় রিক্রুটিং এজেন্সি আর বিদেশি সাব এজেন্টের মাধ্যমে প্রলোভনে পড়ে দেশ ছাড়েন কেউ কেউ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনিয়ম বন্ধে সরকার কঠোর না হলে সংকটে পড়তে পারে মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজার।
রামরু’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. তাসনীম সিদ্দিকী বলেন, ‘প্রায় ১২ শতাংশ প্রবাসী কাজ না পেয়ে মাস খানেকের ভিতর চলে আসছে। ওই দেশে নিযুক্ত সাব এজেন্ট এবং আউটসোর্সিং কোম্পানি, বাংলাদেশে নিযুক্ত সাব এজেন্সি, ট্রাভেল এজেন্ট, যারা ভিজিটর ভিসায় লোক পাঠাচ্ছে। তারা এ গণ্ডোগোলটা তৈরি করছেন। সরকার শক্তহাতে এটা দমন না করায় এরা এ সুযোগ পাচ্ছে।’
তবে রিক্রুটিং এজেন্সির নেতারা বলছেন, অনিয়মের জন্য এজেন্সি একা দায়ী নয়। অনিয়ম দমনে দরকার দু’দেশের সমন্বয়। বায়রা’র সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান, ‘আমাদের ট্রেনিং সেন্টারগুলো থেকে শুধু বিল্ডিং বানালেই হবে না। ট্রেনিং কারিকুলাম ঠিক করতে হবে এবং ট্রেনিং ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। এ দু’টি একত্রিত করতে পারলে স্কিল কর্মী পাঠানোর হার বাড়বে এবং সাথে সাথে আমাদের আয়ও বাড়বে।’
অভিবাসন বিষয়ে জড়িতরা বলছেন, এই বাজারগুলো পুনরুদ্ধার জরুরি। কিন্তু নতুন প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরীও শোনালেন সেই পুরানো বুলি। এখনও নতুন শ্রমবাজার খোঁজার মধ্যেই আটকে আছেন মন্ত্রণালয়। বলেন, ‘আমরা খোঁজ করছি, এবং অনেক জায়গা থেকে আমরা নতুন শ্রমবাজারের খবরও পেয়েছি। অনুসন্ধানের লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।’