ঘরের মাঠে প্রতিপক্ষ লা লিগার পাঁচ নম্বর দল। অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের বিপক্ষে হার এড়াতে পারলেই বড় অর্জন হতো আলমেরিয়ার। গতকাল সোমবার লিগের ম্যাচে বিলবাওর বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র করে এক পয়েন্ট পেয়েছে গাইসকা গারিতানোর শিষ্যরা। এতেই লজ্জার এক রেকর্ডে উঠেছে আলমেরিয়ার নাম।
কেবল বিলবাওর বিপক্ষেই নয়, লা লিগাতে এ মৌসুমে খেলা ২৪টি ম্যাচের একটিও জিততে পারেনি আলমেরিয়া। সবমিলিয়ে লিগে টানা ২৭ম্যাচ ধরে জয়হীন ক্লাবটি। স্প্যানিশ লিগের ইতিহাসে এরচেয়ে বেশি ম্যাচ জয়শূন্য থাকেনি আর কোনো ক্লাব। তবে লজ্জার এ রেকর্ডে একা নয়, আপাতত সঙ্গী হিসেবে লেভান্তেকে পাচ্ছে আলমেরিয়া।
এর আগে ২০২১ থেকে ২০২২ সাল- এই সময়টায় টানা ২৭ ম্যাচ জয় পায়নি লেভান্তে। ১১ ড্রয়ের বিপরীতে ১৬ ম্যাচ হেরেছিল এখন দ্বিতীয় বিভাগে খেলা দলটি। পয়েন্টের বিচারে লেভান্তের চেয়ে বাজে অবস্থানে আলমেরিয়া। এই মৌসুমে সাত পয়েন্ট পাওয়া আলমেরিয়া সর্বশেষ ২৭ ম্যাচে মাত্র ৯টিতে ড্র করতে পেরেছে আলমেরিয়া।
লিগের পরের ম্যাচে গ্রানাডার মাঠে আতিথ্য নেবে আলমেরিয়া। সে ম্যাচ জিততে না পারলে লজ্জার রেকর্ডটি পুরোপুরি লেভান্তের হয়ে যাবে। আরও একটি লজ্জার রেকর্ডের হুমকিতে আছে ক্লাবটি। ১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে লা লিগায় মাত্র ১৩ পয়েন্ট নিয়ে মৌসুম শেষ করেছিল স্পোর্তিং গিহন। আলমেরিয়া যেভাবে এগুচ্ছে, লজ্জার রেকর্ডটিও হুমকির মুখে পড়েছে তাতে!
অবশ্য ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগে সবচেয়ে কম পয়েন্ট নিয়ে মৌসুম শেষ করার শঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে সবচেয়ে কম পয়েন্ট পাওয়ার রেকর্ডটি ডার্বি কান্টির দখলে। প্রিমিয়ার লিগে ২০০৭-২০০৮ মৌসুমে মাত্র ১১ পয়েন্ট পেয়েছিল ক্লাবটি। সম্ভাব্য ১১৪ পয়েন্টের মধ্যে ১১ পয়েন্ট!
ক্লাবটির এমন দুরাবস্থার কথা কি স্বপ্নেও ভেবেছিলেন এর মালিকপক্ষ? এর আগে সৌদির উচ্চাভিলাসী উদ্যোক্তা তুর্কি আল শেখ মালিকানা নেওয়ার পর ২০২২ সালে দ্বিতীয় স্তর থেকে লা লিগাতে উন্নীত হয় আলমেরিয়ার। এরপর নতুন করে স্বপ্ন বুনছিল ক্লাবটি।
গত মৌসুমের শেষদিনে এস্পানিওলের সঙ্গে ৩-৩ গোলে নাটকীয় ড্র-তে কোনোরকমে অবনমন এড়িয়েছিল আলমেরিয়া।
গত গ্রীষ্মে ক্লাবটির তৎকালীন কোচ রুবি কোন ধরনের পূর্বাভাস ছাড়া হঠাৎ পদত্যাগ করে বসেন। অবশ্য এর পেছনে কারণও আছে। নতুন খেলোয়াড় কিনতে উল্লেখযোগ্য হারে বিনিয়োগ করেছিল আরব ধনকুবের। কিন্তু কোনো দৃশ্যমান ফল দেখাতে পারেননি রুবির শিষ্যরা।
নতুন কোচ ভিসেন্তে মোরেনো ক্লাবের শীর্ষ স্তরের সঙ্গে পেরে উঠতে পারেননি। তাঁর অধীনে সাত ম্যাচ খেলে মাত্র দুই পয়েন্ট পায় আলমেরিয়া। এমন হতাশাজনক পারফরম্যান্সে মোরেনোকে বরখাস্ত করে ক্লাবটি। এরপর অন্তবর্তীকালীন দায়িত্ব দেওয়া হয় আলমেরিয়ার বয়সভিত্তিক দলের কোচ আলবার্তো লাসার্তেকে। তাঁর অধীনে খেলা এক ম্যাচের উদাহরণ দিয়ে আলমেরিয়ার সামগ্রিক অবস্থার ধারণা পাওয়া যাবে।
গ্রানাডার বিপক্ষে ম্যাচটিতে স্ট্রাইকার লুইস সুয়ারেসের ৫ মিনিটের হ্যাটট্রিকে প্রথমার্ধে ৩-০ গোলে এগিয়ে ছিল আলমেরিয়া। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে পুরোনো চেনা রূপে ফেরে দলটি! ডিফেন্ডারদের হতশ্রী পারফরম্যান্সের সুযোগ নিয়ে সমতায় ফেরে গ্রানাডা। এ ম্যাচে চোট পান সুয়ারেস, যা তাঁকে তিন মাসের জন্য ছিটকে দেয়।
এরপর গারিতানোকে নতুন কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয় আলমেরিয়া। ৪৮ বছর বয়সী এ স্প্যানিশ কোচের অধীনে ডিফেন্সে উন্নতি হলেও লিগে প্রথম ছয় ম্যাচে হারের স্বাদ পাদ তিনি। শুধু লিগে নয়, কোপা দেল রেতেও শুরুতে ধাক্কা খেয়েছেন গারিতানো। চতুর্থ স্তরের দলের সঙ্গে হেরে কাপ থেকে বিদায় নিশ্চিত হয় আলমেরিয়ার।
ক্লাবটি এখন পর্যন্ত লিগে কোনো ম্যাচ না জিতলেও শীর্ষ দলগুলোর বিপক্ষে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। আতলেতিকো মাদ্রিদের মাঠে প্রায় এক ঘণ্টা ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ আলমেরিয়ার হাতে ছিল। কিন্তু শেষদিকে ২-১ গোলে হেরে বসে। বার্সেলোনার বিপক্ষেও প্রায় একটি পয়েন্ট পেয়ে যাচ্ছিল তারা। এমনকি সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে এসে রেয়ালের বিপক্ষে ম্যাচে ২-০ তে এগিয়েও গিয়েছিল দলটি। কিন্তু ভিএআর নাটকীয়তায় শেষ পর্যন্ত ৩-২ গোলে হেরে বসেছে গ্যারিতানোর শিষ্যরা।
এবারের লিগে বেশিরভাগ ম্যাচে এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও অবিশ্বাস্য কারণে শেষমেষ ম্যাচ থেকে শূন্য হাতে ফিরতে হচ্ছে মিলোভানোভিচ-লোপিদের। ‘প্রত্যাশিত গোলের’ পরিসংখ্যান অনুসারে, আলমেরিয়ার অবনমন অঞ্চলে থাকাই উচিত নয়।
তাহলে আলমেরিয়ার সমস্যাটা কোথায়? অবশ্য এ প্রশ্নেই উত্তরটা আছে। স্ট্রাইকারদের ফিনিশিং ব্যর্থতায় ঠিকঠাক গোল পাচ্ছে না দলটি। বিপরীতে বেশি গোল হজম করে হেরে যাচ্ছে। এ মৌসুমে লিগে ২৪ ম্যাচে ২২ গোলের বিপরীতে ৫১ গোল খেয়েছে দলটি।