ঢাকা ০২:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

রিজার্ভ ফোর্স ডেকে পাঠাল মিয়ানমারের জান্তা সরকার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৫:৩৯:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ৫২৯ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

তরুণ–তরুণীর জন্য সেনাবাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক ঘোষণা করার তিন দিন পরে এবার সাবেক সেনা সদস্যদের কাজে ফেরার আহ্বান জানিয়েছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। গতকাল মঙ্গলবার রিজার্ভ ফোর্স আইন পুনরায় চালু করতে স্বাক্ষর করেন দেশটির সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং।

২০১০ সালে স্টেট পিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের অধীনে ঐ আইন করা হয়েছিল। এই আইনের অধীনে যারা গত ৫ বছরের মধ্যে অবসরে গেছেন তারা আবারও কাজে ফিরতে পারবেন। বাধ্যতামূলক সেনা নিয়োগের আইনটি ২০১০ সালে প্রণয়ন করা হলেও, এখন পর্যন্ত তা কার্যকর করা হয়নি। ওই আইন অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে বাধ্যতামূলকভাবে নিয়োগ করা সেনাদের সময়সীমা পাঁচ বছর পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে। যারা এই সমন উপেক্ষা করবে, তাদের পাঁচ বছর মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হবে বলে ওই আইনে উল্লেখ আছে বলে জানায় বিবিসি।

এর আগে, সব তরুণ-তরুণীর জন্য সেনাবাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক ঘোষণা করে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। দেশটিতে অস্থিরতা অব্যাহত থাকায় গত শনিবার এই আইন প্রয়োগের ঘোষণা দেওয়া হয়। ওই ঘোষণায় বলা হয়, ‘দেশটির ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী সব পুরুষ ও ১৮ থেকে ২৭ বছর বয়সী নারীদের সামরিক বাহিনীর অধীনে অন্তত দুই বছর কাজ করতে হবে। এ জন্য শিগগিরই প্রয়োজনীয় উপবিধি, পদ্ধতি, ঘোষণাপত্র, বিজ্ঞপ্তি এবং নির্দেশাবলি প্রকাশ করবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।’

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বেসামরিক সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এর পর থেকেই মিয়ানমারজুড়ে নৃশংসতা চালাতে শুরু করে তারা। বেসামরিক নাগরিকদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়ে এবং বিভিন্ন এলাকায় হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় স্থাপনাগুলোতেও বোমাবর্ষণ করে জান্তা বাহিনী। সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে দেশজুড়ে তীব্র বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। জান্তা সরকার কঠোর হাতে ওই বিক্ষোভ দমন করে। বহু বিক্ষোভকারী প্রাণ হারান। গ্রেপ্তার করা হয় আরো অনেককে।

সেনাবাহিনী প্রতিরোধে লড়ছে মিয়ানমারের গণতন্ত্রকামী ও বিভিন্ন জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর যোদ্ধারা। রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে দেশটি। সম্প্রতি জাতিগত প্রতিরোধযোদ্ধা ও জান্তাবিরোধীদের সাথে একের পর এক সংঘাতে জড়িয়ে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে সেনাবাহিনীর পরাজিত হওয়ার খবর আসছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে।

জান্তা বিরোধী লড়াইয়ে মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকা ও সেনাঘাঁটি দখলে নিয়েছে বিদ্রোহীরা। এ সময় কয়েক হাজার সেনা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের আটক করে তারা। তবে তাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করেছে প্রতিরোধ বাহিনীর সদস্যরা।

জান্তা বিরোধীদের রুখতে ভিন্ন পথ বেছে নিয়েছে বিদ্রোহীদের আক্রমণে কোণঠাসা সেনাবাহিনী। ইয়াঙ্গুন, বাগো, তানিনথারি অঞ্চল এবং মোন রাজ্যে ‘পিপলস মিলিশিয়াস’ নামে নতুন বাহিনী গঠন করেছে তারা। তাদের দেওয়া হচ্ছে নগদ অর্থ, খাবার ও অস্ত্র সহায়তা। ২৭ অক্টোবর মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর জোট- থ্রি ব্রাদারহুড, সেনা বিরোধী অপারেশন শুরুর পর থেকেই জান্তা বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে, মিয়ানমারের রাখাইনে জান্তা বাহিনীকে অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ ২০ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টার মধ্যে আত্মসমর্পণের জন্য সময় বেঁধে দিয়েছে দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠি আরাকান আর্মি।

১৯৬২ সালে মিয়ানমারের ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর থেকে এটিকেই দেশটির সেনাবাহিনীর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করা হচ্ছে। আর এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবার সাবেক সেনাদের ফেরাতে পদক্ষেপ নিল মিয়ানমারের জান্তা সরকার।

নিউজটি শেয়ার করুন

রিজার্ভ ফোর্স ডেকে পাঠাল মিয়ানমারের জান্তা সরকার

আপডেট সময় : ০৫:৩৯:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

তরুণ–তরুণীর জন্য সেনাবাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক ঘোষণা করার তিন দিন পরে এবার সাবেক সেনা সদস্যদের কাজে ফেরার আহ্বান জানিয়েছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। গতকাল মঙ্গলবার রিজার্ভ ফোর্স আইন পুনরায় চালু করতে স্বাক্ষর করেন দেশটির সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং।

২০১০ সালে স্টেট পিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের অধীনে ঐ আইন করা হয়েছিল। এই আইনের অধীনে যারা গত ৫ বছরের মধ্যে অবসরে গেছেন তারা আবারও কাজে ফিরতে পারবেন। বাধ্যতামূলক সেনা নিয়োগের আইনটি ২০১০ সালে প্রণয়ন করা হলেও, এখন পর্যন্ত তা কার্যকর করা হয়নি। ওই আইন অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে বাধ্যতামূলকভাবে নিয়োগ করা সেনাদের সময়সীমা পাঁচ বছর পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে। যারা এই সমন উপেক্ষা করবে, তাদের পাঁচ বছর মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হবে বলে ওই আইনে উল্লেখ আছে বলে জানায় বিবিসি।

এর আগে, সব তরুণ-তরুণীর জন্য সেনাবাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক ঘোষণা করে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। দেশটিতে অস্থিরতা অব্যাহত থাকায় গত শনিবার এই আইন প্রয়োগের ঘোষণা দেওয়া হয়। ওই ঘোষণায় বলা হয়, ‘দেশটির ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী সব পুরুষ ও ১৮ থেকে ২৭ বছর বয়সী নারীদের সামরিক বাহিনীর অধীনে অন্তত দুই বছর কাজ করতে হবে। এ জন্য শিগগিরই প্রয়োজনীয় উপবিধি, পদ্ধতি, ঘোষণাপত্র, বিজ্ঞপ্তি এবং নির্দেশাবলি প্রকাশ করবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।’

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বেসামরিক সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এর পর থেকেই মিয়ানমারজুড়ে নৃশংসতা চালাতে শুরু করে তারা। বেসামরিক নাগরিকদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়ে এবং বিভিন্ন এলাকায় হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় স্থাপনাগুলোতেও বোমাবর্ষণ করে জান্তা বাহিনী। সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে দেশজুড়ে তীব্র বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। জান্তা সরকার কঠোর হাতে ওই বিক্ষোভ দমন করে। বহু বিক্ষোভকারী প্রাণ হারান। গ্রেপ্তার করা হয় আরো অনেককে।

সেনাবাহিনী প্রতিরোধে লড়ছে মিয়ানমারের গণতন্ত্রকামী ও বিভিন্ন জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর যোদ্ধারা। রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে দেশটি। সম্প্রতি জাতিগত প্রতিরোধযোদ্ধা ও জান্তাবিরোধীদের সাথে একের পর এক সংঘাতে জড়িয়ে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে সেনাবাহিনীর পরাজিত হওয়ার খবর আসছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে।

জান্তা বিরোধী লড়াইয়ে মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকা ও সেনাঘাঁটি দখলে নিয়েছে বিদ্রোহীরা। এ সময় কয়েক হাজার সেনা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের আটক করে তারা। তবে তাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করেছে প্রতিরোধ বাহিনীর সদস্যরা।

জান্তা বিরোধীদের রুখতে ভিন্ন পথ বেছে নিয়েছে বিদ্রোহীদের আক্রমণে কোণঠাসা সেনাবাহিনী। ইয়াঙ্গুন, বাগো, তানিনথারি অঞ্চল এবং মোন রাজ্যে ‘পিপলস মিলিশিয়াস’ নামে নতুন বাহিনী গঠন করেছে তারা। তাদের দেওয়া হচ্ছে নগদ অর্থ, খাবার ও অস্ত্র সহায়তা। ২৭ অক্টোবর মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর জোট- থ্রি ব্রাদারহুড, সেনা বিরোধী অপারেশন শুরুর পর থেকেই জান্তা বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে, মিয়ানমারের রাখাইনে জান্তা বাহিনীকে অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ ২০ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টার মধ্যে আত্মসমর্পণের জন্য সময় বেঁধে দিয়েছে দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠি আরাকান আর্মি।

১৯৬২ সালে মিয়ানমারের ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর থেকে এটিকেই দেশটির সেনাবাহিনীর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করা হচ্ছে। আর এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবার সাবেক সেনাদের ফেরাতে পদক্ষেপ নিল মিয়ানমারের জান্তা সরকার।