ঢাকা ১২:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

রাশিয়ার পুতিনবিরোধী কে এই নাভালনি?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৫:৪৬:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ৪১৯ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

অবশেষে কারাগারেই মৃত্যু হলো অ্যালেক্সাই নাভালনির। তিনি সেই ব্যাক্তি, যিনি আজীবন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের ‘দুর্নীতি’ ও ‘অপশাসন’ নিয়ে কথা বলে গেছেন। তিনি সেই ব্যাক্তি, যাঁকে ভয় পেতেন বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, আজ শুক্রবার রাশিয়ার ইয়ামালো-নেনেটস অঞ্চলের কারাগারে নাভালরি মারা গেছেন বলে জানিয়েছে রুশ কর্তৃপক্ষ। তবে কী কারণে তিনি মারা গেছেন, সে ব্যাপারে এখনো স্পষ্টভাবে কিছু জানা যায়নি।

এর আগে ২০২০ সালে একবার নাভালনিকে বিষ প্রয়োগে হত্যার অভিযোগ উঠেছিল। ওই বছরের আগস্টে রাশিয়ার সাইবেরিয়া এলাকা থেকে উড়োজাহাজে যাত্রার সময় ফ্লাইটের ভেতর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ার পর তাঁকে উড়োজাহাজে করে বার্লিনে নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসার জন্য। এরপর দীর্ঘ সময় তিনি কোমায় ছিলেন। তখন অভিযোগ উঠেছিল, নাভালনিকে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে। যদিও রুশ কর্তৃপক্ষ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

এরপর নাভালনি আরও একবার আলোচনায় এসেছিলেন ‘কারাগার থেকে নিখোঁজ’ হওয়ার মাধ্যমে। গত বছরের ডিসেম্বরের শুরুর দিকে তাঁর আইনজীবীরা বলেন, ‘কারাবন্দী নাভালনির কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁর সঙ্গে কোনোভাবে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।’

এ অভিযোগের প্রায় ২৫ দিন পর নাভালনির সন্ধান পাওয়া যায়। নাভালনির মুখপাত্র কিরা ইয়ারমিশ জানান, নাভালনি বেঁচে আছেন। তাঁকে সাইবেরিয়ার একটি কারাগারে (পেনাল কলোনি) আটক রাখা হয়েছে।

আজ শুক্রবার সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানাল পুতিনের সরকার। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে জার্মানি থেকে স্বেচ্ছায় রাশিয়ায় ফিরে এলে বিমানবন্দর থেকেই গ্রেপ্তার করা হয় নাভালনিকে। এর পরের মাসে অর্থ আত্মসাতের পুরোনো একটি মামলায় তাঁকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এরপর উগ্রপন্থায় উসকানি ও অর্থায়ন এবং একটি উগ্রপন্থী সংগঠন প্রতিষ্ঠার দায়ে নাভালনিকে গত বছরের আগস্টে ১৯ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। অবশেষে কারাগারেই তাঁর মৃত্যু হলো।

নাভালনির সমর্থকেরা তাঁকে আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসনস ম্যান্ডেলার সঙ্গে তুলনা করতেন। তাঁরা আশায় ছিলেন, খুব শিগগিরই তিনি কারামুক্ত হবেন। কিন্তু সমর্থকদের সেই আশা আর পূরণ হলো না।

২০১৮ সালে প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এক নিবন্ধে বলেছিল, পুতিন সবচেয়ে বেশি ভয় পান যে ব্যক্তিকে, তিনি হলেন নাভালনি। তখন নাভানির বয়স ছিল মাত্র ৩৭। এর দশ বছর পর মাত্র ৪৭ বছর বয়সে রহস্যজনক মৃত্যু হলো তাঁর। মৃত্যুর সময় তিনি স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনায়া, দুটি সন্তান ও অসংখ্য সমর্থক রেখে গেছেন।

এই সংক্ষিপ্ত সময়ের জীবনেই তিনি পুতিনের সবচেয়ে কট্টোর সমালোচক হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর উত্থান মূলত ব্লগ লেখার মধ্য দিয়ে। তিনি তাঁর ব্লগে একের পর পুতিন সরকারের দুর্নীতি নিয়ে লিখতে শুরু করেছিলেন। তিনি পুতিনকে ‘দুষ্টু’ ও ‘চোর’ বলে অভিহিত করেছিলেন।

এ ছাড়াও তিনি পুতিনের বিরুদ্ধে সরাসরি বিক্ষোভ করেছিলেন। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে পুতিনবিরোধী বিক্ষোভের সময়ে তিনি একবার গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন। এরপর ২০১৩ সালে মস্কোর মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছিলেন। রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরোধিতা সত্ত্বেও তিনি ২৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। এ ছাড়া ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পুতিনের সবচেয়ে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন নাভালনি। কিন্তু তাঁকে নানাভাবে বাধা দেওয়া হয়।

এরপর রাষ্ট্রের প্রায় সব গণমাধ্যমই নাভালনিকে বয়কট করেছিল। নাভালনির কোনো ধরনের খবর প্রকাশ করত না। সেটি বরং নাভালনির জন্য শাপে বরই হয়েছিল। তিনি ও তাঁর সমর্থকেরা পুতিনের আভিজাত্যকে উলঙ্গ করতে ইউটিউবকে বেছে নিয়েছিলেন। তাঁরা ইউটিউবে চ্যানেল খুলে পুতিনবিরোধী কর্মকাণ্ড চালাতেন।

পুতিনের প্রশাসন বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং নাভালনিকে একজন মার্কিন গুপ্তচর ও চরমপন্থী হিসেবে অভিযুক্ত করেছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, নাভালনি ছিলেন একগুঁয়ে, ব্যঙ্গাত্মক ও ক্যারিশম্যাটিক নেতা। তাঁর একটি ডাকেই হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসত। তিনি ছিলেন জনতাবাদী, তাই তরুণরা তাঁকে অসম্ভব পছন্দ করত। ইউক্রেন যুদ্ধেরও ঘোর বিরোধিতা করেছিলেন তিনি। আপাতদৃষ্টিতে ৪৭ বছর বয়সে তাঁর জীবনাবসান হলেও, পুতিনের শাসনামলের ওপর এক অমোচনীয় দাগ হিসেবে থেকে যাবেন অ্যালেক্সাই নাভালনি। তথ্যসূত্র: বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএন, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও স্কাই নিউজ

নিউজটি শেয়ার করুন

রাশিয়ার পুতিনবিরোধী কে এই নাভালনি?

আপডেট সময় : ০৫:৪৬:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

অবশেষে কারাগারেই মৃত্যু হলো অ্যালেক্সাই নাভালনির। তিনি সেই ব্যাক্তি, যিনি আজীবন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের ‘দুর্নীতি’ ও ‘অপশাসন’ নিয়ে কথা বলে গেছেন। তিনি সেই ব্যাক্তি, যাঁকে ভয় পেতেন বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, আজ শুক্রবার রাশিয়ার ইয়ামালো-নেনেটস অঞ্চলের কারাগারে নাভালরি মারা গেছেন বলে জানিয়েছে রুশ কর্তৃপক্ষ। তবে কী কারণে তিনি মারা গেছেন, সে ব্যাপারে এখনো স্পষ্টভাবে কিছু জানা যায়নি।

এর আগে ২০২০ সালে একবার নাভালনিকে বিষ প্রয়োগে হত্যার অভিযোগ উঠেছিল। ওই বছরের আগস্টে রাশিয়ার সাইবেরিয়া এলাকা থেকে উড়োজাহাজে যাত্রার সময় ফ্লাইটের ভেতর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ার পর তাঁকে উড়োজাহাজে করে বার্লিনে নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসার জন্য। এরপর দীর্ঘ সময় তিনি কোমায় ছিলেন। তখন অভিযোগ উঠেছিল, নাভালনিকে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে। যদিও রুশ কর্তৃপক্ষ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

এরপর নাভালনি আরও একবার আলোচনায় এসেছিলেন ‘কারাগার থেকে নিখোঁজ’ হওয়ার মাধ্যমে। গত বছরের ডিসেম্বরের শুরুর দিকে তাঁর আইনজীবীরা বলেন, ‘কারাবন্দী নাভালনির কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁর সঙ্গে কোনোভাবে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।’

এ অভিযোগের প্রায় ২৫ দিন পর নাভালনির সন্ধান পাওয়া যায়। নাভালনির মুখপাত্র কিরা ইয়ারমিশ জানান, নাভালনি বেঁচে আছেন। তাঁকে সাইবেরিয়ার একটি কারাগারে (পেনাল কলোনি) আটক রাখা হয়েছে।

আজ শুক্রবার সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানাল পুতিনের সরকার। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে জার্মানি থেকে স্বেচ্ছায় রাশিয়ায় ফিরে এলে বিমানবন্দর থেকেই গ্রেপ্তার করা হয় নাভালনিকে। এর পরের মাসে অর্থ আত্মসাতের পুরোনো একটি মামলায় তাঁকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এরপর উগ্রপন্থায় উসকানি ও অর্থায়ন এবং একটি উগ্রপন্থী সংগঠন প্রতিষ্ঠার দায়ে নাভালনিকে গত বছরের আগস্টে ১৯ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। অবশেষে কারাগারেই তাঁর মৃত্যু হলো।

নাভালনির সমর্থকেরা তাঁকে আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসনস ম্যান্ডেলার সঙ্গে তুলনা করতেন। তাঁরা আশায় ছিলেন, খুব শিগগিরই তিনি কারামুক্ত হবেন। কিন্তু সমর্থকদের সেই আশা আর পূরণ হলো না।

২০১৮ সালে প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এক নিবন্ধে বলেছিল, পুতিন সবচেয়ে বেশি ভয় পান যে ব্যক্তিকে, তিনি হলেন নাভালনি। তখন নাভানির বয়স ছিল মাত্র ৩৭। এর দশ বছর পর মাত্র ৪৭ বছর বয়সে রহস্যজনক মৃত্যু হলো তাঁর। মৃত্যুর সময় তিনি স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনায়া, দুটি সন্তান ও অসংখ্য সমর্থক রেখে গেছেন।

এই সংক্ষিপ্ত সময়ের জীবনেই তিনি পুতিনের সবচেয়ে কট্টোর সমালোচক হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর উত্থান মূলত ব্লগ লেখার মধ্য দিয়ে। তিনি তাঁর ব্লগে একের পর পুতিন সরকারের দুর্নীতি নিয়ে লিখতে শুরু করেছিলেন। তিনি পুতিনকে ‘দুষ্টু’ ও ‘চোর’ বলে অভিহিত করেছিলেন।

এ ছাড়াও তিনি পুতিনের বিরুদ্ধে সরাসরি বিক্ষোভ করেছিলেন। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে পুতিনবিরোধী বিক্ষোভের সময়ে তিনি একবার গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন। এরপর ২০১৩ সালে মস্কোর মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছিলেন। রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরোধিতা সত্ত্বেও তিনি ২৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। এ ছাড়া ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পুতিনের সবচেয়ে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন নাভালনি। কিন্তু তাঁকে নানাভাবে বাধা দেওয়া হয়।

এরপর রাষ্ট্রের প্রায় সব গণমাধ্যমই নাভালনিকে বয়কট করেছিল। নাভালনির কোনো ধরনের খবর প্রকাশ করত না। সেটি বরং নাভালনির জন্য শাপে বরই হয়েছিল। তিনি ও তাঁর সমর্থকেরা পুতিনের আভিজাত্যকে উলঙ্গ করতে ইউটিউবকে বেছে নিয়েছিলেন। তাঁরা ইউটিউবে চ্যানেল খুলে পুতিনবিরোধী কর্মকাণ্ড চালাতেন।

পুতিনের প্রশাসন বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং নাভালনিকে একজন মার্কিন গুপ্তচর ও চরমপন্থী হিসেবে অভিযুক্ত করেছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, নাভালনি ছিলেন একগুঁয়ে, ব্যঙ্গাত্মক ও ক্যারিশম্যাটিক নেতা। তাঁর একটি ডাকেই হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসত। তিনি ছিলেন জনতাবাদী, তাই তরুণরা তাঁকে অসম্ভব পছন্দ করত। ইউক্রেন যুদ্ধেরও ঘোর বিরোধিতা করেছিলেন তিনি। আপাতদৃষ্টিতে ৪৭ বছর বয়সে তাঁর জীবনাবসান হলেও, পুতিনের শাসনামলের ওপর এক অমোচনীয় দাগ হিসেবে থেকে যাবেন অ্যালেক্সাই নাভালনি। তথ্যসূত্র: বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএন, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও স্কাই নিউজ