০১:৪৫ পূর্বাহ্ন, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাকিস্তানে সমঝোতায় আটকে আছে সরকার গঠন

পাকিস্তানের সরকার গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলছে নানা রকম দেন-দরবার আর আলোচনা। এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে ১০ দিন— কোন দল সরকার গঠন করবে তা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হয়নি!

নির্বাচন শেষ হওয়ার পরপর সরকার গঠনের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছিলো নওয়াজ শরিফের পিমএলএন। তারা বিলাওয়াল ভু্ট্টোর পিপিপির সঙ্গে জোট গঠনের চেষ্টা শুরু করে। এরপর জোট করে সরকারে আসার বিষয়ে একমতও হয়েছিলো পিপিপি, পিএমএল-এন সহ মোট ৬টি দল। পরবর্তীতে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লীগের সঙ্গে বিলাওয়াল ভুট্টোর দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) জোট সরকার গঠনের ঘোষণা এলেও বারবার দুই দলের মধ্যে আলোচনা স্থগিত হয়ে যাচ্ছে। এমনকি নওয়াজের দলের মধ্যেই দেখা দিয়েছে বিভক্তি। তাদের বৈঠকগুলো বারবার সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হচ্ছে। যদিও দুই দলই দাবি করেছে, আলোচনায় ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ হয়েছে।

বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পিপিপি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সাংবিধানিক পদের বিনিময়ে সরকার গঠন করতে পারলে পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে পিএমএল-এনকে সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছে। দলটি ঘোষণা দিয়েছে, কেন্দ্রে সরকার গঠনে পিএমএল-এন’কে সমর্থন দিলেও তারা কোনো মন্ত্রিত্ব নেবে না। পিপিপির এক নেতা জানিয়েছেন, দলটি জাতীয় পরিষদের স্পিকার এবং সিনেট চেয়ারম্যানের পদ চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু পিএমএল-এন তাতে অনিচ্ছুক বলে মনে হচ্ছে। তারা স্পিকারের পদটি নিজেদের কাছে রাখতে চায়। পাশাপাশি শাহবাজের ওপর মোটেও আস্থা রাখতে পারছে না বিলাওয়ালের দল। পিপিপি আশঙ্কা করছে, পিএমএল-এনের অধীনে পাকিস্তানের পার্লামেন্ট তার ‘হারানো মর্যাদা অর্জন করতে পারবে না’। আর এরকমই নানা সমঝোতা ও বোঝাপড়ার সমীকরণে আটকে আছে জোটের ভাগ্য।

এর মধ্যেই পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পদে বাবা আসিফ আলি জারদারির নাম ঘোষণা করেছেন পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো। বিলাওয়াল বলেছেন, আসিফ আলিই দেশকে বাঁচাতে পারবেন। দেশের রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রশমিত করতে পারবেন। এছাড়া পাকিস্তানের সব রাজনৈতিক দলকে তাদের উদ্দেশ্যের চেয়ে জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিলাওয়াল।

আসিফ আলি বর্তমানে পিপিপির কো-চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পিএমএল-এন ও পিপিপি জোট যদি আলোর মুখ দেখে তাহলে হিসাব অনুযায়ী শাহবাজ শরিফ প্রধানমন্ত্রী এবং আসিফ আলি জারদারি প্রেসিডেন্ট হবেন বলেই ধারণা করা যায়। এছাড়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নওয়াজের মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ হবেন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী।

চলমান সংকটের মধ্যেই এক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে ভারতীয় সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া। তাদের দাবি, পাকিস্তানের রাজনীতিতে এখন কলকাঠি নাড়ছে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। নওয়াজকে ঠেকাতে ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ এবং আসিফ আলি জারদারির দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি হাত মেলাতে পারে বলে জল্পনা শুরু হয়েছে। সূত্রের দাবি, জেলেই ইমরানের সঙ্গে গোপন বৈঠক হয়েছে আইএসআই কর্মকর্তাদের।

এমন দাবিকে মোটেই উড়িয়ে দেয়া যায় না, কারণ এরই মধ্যে ইমরানকে নিয়ে এক বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন নওয়াজ কন্যা মরিয়ম নওয়াজ। ২০১৪ সালে চীনা প্রেসিডেন্টের পাকিস্তান সফরকালে সরকার পতনের আন্দোলন করেছিল ইমরানের দল। ওই সময় ইমরানের শিরশ্ছেদ করা উচিত ছিলো বলে মন্তব্য করেছেন মরিয়ম। যদিও এই বিতর্কিত মন্তব্যের পর তোপের মুখে পড়েন তিনি।

সব কিছু মিলিয়ে এখন টালমাটাল অবস্থায় আছে পাকিস্তানের রাজনীতি। শেষ পর্যন্ত সরকার গঠন হলে সেই সরকার কতোদিন টিকবে তা নিয়ে সংশয় রয়েই যাচ্ছে। সরকার গঠন নিয়ে প্রতিদিনই রাজনীতিকদের চরিত্র বদলাচ্ছে যা অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত দেশটিকে নতুন সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

পাকিস্তানে সমঝোতায় আটকে আছে সরকার গঠন

আপডেট : ০৬:৫০:৩৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

পাকিস্তানের সরকার গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলছে নানা রকম দেন-দরবার আর আলোচনা। এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে ১০ দিন— কোন দল সরকার গঠন করবে তা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হয়নি!

নির্বাচন শেষ হওয়ার পরপর সরকার গঠনের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছিলো নওয়াজ শরিফের পিমএলএন। তারা বিলাওয়াল ভু্ট্টোর পিপিপির সঙ্গে জোট গঠনের চেষ্টা শুরু করে। এরপর জোট করে সরকারে আসার বিষয়ে একমতও হয়েছিলো পিপিপি, পিএমএল-এন সহ মোট ৬টি দল। পরবর্তীতে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লীগের সঙ্গে বিলাওয়াল ভুট্টোর দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) জোট সরকার গঠনের ঘোষণা এলেও বারবার দুই দলের মধ্যে আলোচনা স্থগিত হয়ে যাচ্ছে। এমনকি নওয়াজের দলের মধ্যেই দেখা দিয়েছে বিভক্তি। তাদের বৈঠকগুলো বারবার সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হচ্ছে। যদিও দুই দলই দাবি করেছে, আলোচনায় ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ হয়েছে।

বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পিপিপি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সাংবিধানিক পদের বিনিময়ে সরকার গঠন করতে পারলে পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে পিএমএল-এনকে সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছে। দলটি ঘোষণা দিয়েছে, কেন্দ্রে সরকার গঠনে পিএমএল-এন’কে সমর্থন দিলেও তারা কোনো মন্ত্রিত্ব নেবে না। পিপিপির এক নেতা জানিয়েছেন, দলটি জাতীয় পরিষদের স্পিকার এবং সিনেট চেয়ারম্যানের পদ চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু পিএমএল-এন তাতে অনিচ্ছুক বলে মনে হচ্ছে। তারা স্পিকারের পদটি নিজেদের কাছে রাখতে চায়। পাশাপাশি শাহবাজের ওপর মোটেও আস্থা রাখতে পারছে না বিলাওয়ালের দল। পিপিপি আশঙ্কা করছে, পিএমএল-এনের অধীনে পাকিস্তানের পার্লামেন্ট তার ‘হারানো মর্যাদা অর্জন করতে পারবে না’। আর এরকমই নানা সমঝোতা ও বোঝাপড়ার সমীকরণে আটকে আছে জোটের ভাগ্য।

এর মধ্যেই পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পদে বাবা আসিফ আলি জারদারির নাম ঘোষণা করেছেন পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো। বিলাওয়াল বলেছেন, আসিফ আলিই দেশকে বাঁচাতে পারবেন। দেশের রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রশমিত করতে পারবেন। এছাড়া পাকিস্তানের সব রাজনৈতিক দলকে তাদের উদ্দেশ্যের চেয়ে জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিলাওয়াল।

আসিফ আলি বর্তমানে পিপিপির কো-চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পিএমএল-এন ও পিপিপি জোট যদি আলোর মুখ দেখে তাহলে হিসাব অনুযায়ী শাহবাজ শরিফ প্রধানমন্ত্রী এবং আসিফ আলি জারদারি প্রেসিডেন্ট হবেন বলেই ধারণা করা যায়। এছাড়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নওয়াজের মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ হবেন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী।

চলমান সংকটের মধ্যেই এক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে ভারতীয় সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া। তাদের দাবি, পাকিস্তানের রাজনীতিতে এখন কলকাঠি নাড়ছে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। নওয়াজকে ঠেকাতে ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ এবং আসিফ আলি জারদারির দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি হাত মেলাতে পারে বলে জল্পনা শুরু হয়েছে। সূত্রের দাবি, জেলেই ইমরানের সঙ্গে গোপন বৈঠক হয়েছে আইএসআই কর্মকর্তাদের।

এমন দাবিকে মোটেই উড়িয়ে দেয়া যায় না, কারণ এরই মধ্যে ইমরানকে নিয়ে এক বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন নওয়াজ কন্যা মরিয়ম নওয়াজ। ২০১৪ সালে চীনা প্রেসিডেন্টের পাকিস্তান সফরকালে সরকার পতনের আন্দোলন করেছিল ইমরানের দল। ওই সময় ইমরানের শিরশ্ছেদ করা উচিত ছিলো বলে মন্তব্য করেছেন মরিয়ম। যদিও এই বিতর্কিত মন্তব্যের পর তোপের মুখে পড়েন তিনি।

সব কিছু মিলিয়ে এখন টালমাটাল অবস্থায় আছে পাকিস্তানের রাজনীতি। শেষ পর্যন্ত সরকার গঠন হলে সেই সরকার কতোদিন টিকবে তা নিয়ে সংশয় রয়েই যাচ্ছে। সরকার গঠন নিয়ে প্রতিদিনই রাজনীতিকদের চরিত্র বদলাচ্ছে যা অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত দেশটিকে নতুন সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।