মুখ ফুটে বলতে না পেরে পোস্টে লাইক নেইমারের
- আপডেট সময় : ০৫:২৭:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / ৪১২ বার পড়া হয়েছে
প্রতি বছর জানুয়ারি মাস এলেই কিলিয়ান এমবাপ্পের দলবদল নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে যায়। ২০১৭ সালে পিএসজিতে যোগ দেওয়ার পর মাত্র এক বা দুবার ব্যতিক্রম, না হলে প্রতিটি মৌসুমের শেষভাগটা এমবাপ্পের ফ্রান্স ছাড়ার খবরে কেটেছে।
এই মৌসুমেও তা চলছে। এবং বলা হচ্ছে, এবারই শেষ। অবশেষে রেয়াল মাদ্রিদে যাওয়ার স্বপ্নটা পূরণ করতে যাচ্ছেন ফ্রেঞ্চ স্ট্রাইকার। আর সে দলবদল নিয়ে নিজের মনোভাবটা প্রকাশ করেছেন নেইমার জুনিয়র।
গত মৌসুমের শেষে মেসি ও নেইমার একসঙ্গে পিএসজি ছেড়েছেন। এর পেছনে এমবাপ্পেই মূল ভূমিকা রেখেছেন বলে দাবি। দলে পর্তুগিজ ও স্প্যানিশ ভাষাভাষীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় নাকি বিরক্ত হয়েছিলেন এমবাপ্পে এবং পিএসজিকে বাধ্য করেছিলেন নেইমার ও তাঁর কাছের ফুটবলারদের ক্লাব থেকে তাড়িয়ে ফ্রান্সের ফুটবলারদের দলে নিতে।
এমন খবর বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে, তবে এতে কিছুটা হলেও সত্যের মিশেল আছে। ২০২২ সালেও যখন মাদ্রিদে যাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিল, তখন তাঁকে ধরে রাখতে চোখ কপালে তোলা বেতন –বোনাসের সঙ্গে দলের দলবদলেও মতামত দেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়েছিল। এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে কখনো কিছু না বললেও গত মৌসুম শেষে মেসি চলে যাওয়ার পরই নেইমার যেভাবে পিএসজি ক্লাব ছেড়েছিলেন, সেটা এমবাপ্পের একাধিপত্যের কথাই বলে।
সেই এমবাপ্পে এক বছর পরই পিএসজির প্রকল্প ছেড়ে বেড়িয়ে যাচ্ছেন বলে গুঞ্জন। তাতে ২০১৭ সালের পর থেকে পিএসজির সুপার টিম বানানোর চেষ্টাটা যে ব্যর্থ ছিল, সেটা প্রমাণিত হয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে গতকাল ইনস্টাগ্রামে জোগাদা এন্সায়াদা নামের ব্রাজিলিয়ান এক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্ট করা হয়েছে।
পোস্টে বলা হয়েছে, দলের চেয়ে একজন খেলোয়াড়কে বেশি গুরুত্ব দিলে এমনটাই হয়, ‘পিএসজিকে ফুটবল ম্যানেজমেন্টের উদাহরণ হিসেবে দেখা উচিত। ওরা বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের একত্র করতে এবং বিশ্বের সেরা দল বানাতে জানে। যখনই দলটি ভালো করতে শুরু করল, তখন একজন “বিশেষ ফ্রেঞ্চ ব্যক্তির” ইগো পুরো পরিবেশটা নষ্ট করেছে।’
পোস্টের এই অংশে মেসি-নেইমার-এমবাপ্পে ত্রয়ীর শেষ মৌসুমের কথা বলা হচ্ছে। ক্রিস্তফ গালতিয়েরের অধীনে ২০২২-২০২৩ মৌসুমের শুরুতে দুর্দান্ত খেলছিল পিএসজি। বিশ্বকাপের আগে নেইমার নিজের প্রায় সেরা ফর্মে আবির্ভূত হয়েছিলেন। প্রথমবারের মতো মনে হয়েছিল, চ্যাম্পিয়নস লিগে পিএসজিই ফেবারিট।
কিন্তু গালতিয়েরের পছন্দের ফরমেশনে এমবাপ্পের গুরুত্ব কমে গিয়েছিল। মেসি ও নেইমারের সেরাটা বের করে আনা সে ফরমেশনে এমবাপ্পে দলের রক্ষণে সাহায্য করতে হতো। এ নিয়ে প্রকাশ্যে কোচের সমালোচনা করেছিলেন এমবাপ্পে।
মাত্র চার-পাঁচ আগে অভূতপূর্ব আর্থিক প্রণোদনা দিয়ে ক্লাবে ধরে রাখা হয়েছে, তাঁর মন রক্ষার্থে কোচকে নিজের খেলার ফরমেশনই বদলে ফেলতে হয়েছিল। এমবাপ্পে ফর্মে ফিরলেও পিএসজি তাদের খেলার ধার হারিয়ে ফেলে এবং আরও একবার চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বাদ পড়ে ফ্রেঞ্চ চ্যাম্পিয়নরা।
জোগাদা এন্সায়াদার পোস্টে আরও বলা হয়েছে, ‘দলের অধিকাংশ খেলোয়াড় স্প্যানিশে কথা বলতেন এবং এমবাপ্পের নিজেকে কোণঠাসা মনে হচ্ছিল, তাই চলে যাওয়ার হুমকি দেন। দলের সবচেয়ে বড় সম্পদকে হারানোর ভয়ে এমবাপ্পের পছন্দ নয়, এমন খেলোয়াড়দের বিক্রি করতে শুরু করে এবং ফ্রেঞ্চ খেলোয়াড়দের আনে।’
এ মৌসুমের শুরুতে মেসি, নেইমার ছাড়াও সের্হিও রামোস, মার্কো ভেরাত্তি, লিয়ান্দ্রো পারেদেস, রেনাতো সানচেজ, মার্কো ইকার্দিদের ছেড়ে দিয়েছে পিএসজি। মার্কো আসেনসিও, মানুয়েল উগার্তে, গনসালো রামোসদের মতো স্প্যানিশ ও পর্তুগিজ ভাষার খেলোয়াড়রা যোগ দিয়েছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার ক্যাং-ইন লি গিয়েছেন। কিন্তু দলবদলের বাজারে পিএসজি মূল মনোযোগ দিয়েছে ফ্রেঞ্চ খেলোয়াড়দের পেছনে। র্যান্ডল কোলো মুয়ানিকে ১০ কোটি ইউরোতে নিয়েছে। ওউসমানে দেমবেলে, লুকাস এরনান্দেস, ব্র্যাডলি বারকোলা, উগো একিতিকের পেছনে আরও ১৭ কোটি ইউরোর মতো খরচ করেছে।
এমন ‘ফ্রেঞ্চ কলোনি’ বানিয়েও লাভ হচ্ছে না। মূল ফ্রেঞ্চ তারকাই জানিয়ে দিয়েছেন আর চুক্তি নবায়ন করবেন না। এর দায় পিএসজির দাবি করা হয়েছে জোগাদা এন্সায়াদার পোস্টে, ‘সব নিজের পক্ষে নেওয়ার পর এমবাপ্পে এখন জানিয়ে দিয়েছেন মৌসুম শেষে একদম বিনামূল্যে ক্লাব ছাড়বেন। এবং শেষ পর্যন্ত পিএসজি এটাই পেল (তারকা শূন্য ড্রেসিংরুম)। ’
সন্দেহ নেই, বেশ বিতর্কিত এক পোস্ট। সরাসরি এমবাপ্পের নাম না নিলে, কারও বুঝতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না কার কথা বলা হচ্ছে। সে পোস্টে লাইকের সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়ে গেছে। তবে ভাইরাল হওয়ার আগে যখন মাত্র ৮/৯ হাজার লাইক ছিল, সেই সীমিত সংখার মধ্যে একজন ছিলে বর্তমানে চোটের কারণে মাঠের বাইরে থাকা নেইমার!অর্থাৎ, এই পোস্টের কথা তাঁর পছন্দ হয়েছে। পিএসজিতে শেষ দিকে দুজনের সম্পর্কটা কেমন ছিল, সেটা নেইমারের এই লাইক দেওয়াতেই স্পষ্ট বোঝা গেছে।