প্রধানমন্ত্রীর কাছে থেকে একুশে পদক নিলেন দই বিক্রেতা জিয়াউল হক
- আপডেট সময় : ০২:২০:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / ৪১৬ বার পড়া হয়েছে
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) একুশে পদক বিজয়ী ও তাদের স্বজনদের হাতে পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে পদক বুঝিয়ে দেয়া হয় সমাজসেবায় বিশেষ অবদান রাখায় ২০২৪ একুশে পদকজয়ী চাঁপাইনবাবগঞ্জের দই বিক্রেতা জিয়াউল হককেও।
প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে একুশে পদক বুঝে পাওয়ার পর আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন জিয়াউল। তিনি বলেন, আমার মনটা আজ ভরে গেছে। আমি আজ পৃথিবীর একজন সুখী মানুষ। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমিই বেশি গুরুত্ব পেয়েছি। মনে হচ্ছে, অনুষ্ঠানটি আমারই ছিল।
এ সময় পদক নেয়ার সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কী কথা হয়েছে জানতে চাইলে জিয়াউল হক বলেন, আমি জিয়াউল সাধারণ পাঠাগারের জন্য একখণ্ড জমির ওপর ভবন নির্মাণ এবং আমার বাড়ির পাশের বিদ্যালয় মুসরীভূজা ইউসুফ আলী হাইস্কুলকে সরকারি করার দাবি জানিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী আমার কথা আন্তরিকতার সঙ্গে শোনেন এবং আশ্বাস দেন।
প্রধানমন্ত্রীর এমন আশ্বাসে বেজায় খুশি জিয়াউল হক বলেন, আমি স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি, আমার পাঠাগারটি একটু বড় পরিসরে হবে। অনেক মানুষ আসবে, বই পড়বে, জ্ঞান চর্চা হবে। এলাকা আলোকিত হবে, সমাজ ভালো হবে। আমার বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা বেড়ে গেছে। মানুষের জন্য আরও কাজ করার ইচ্ছা জাগছে।
একুশে পদ অনুষ্ঠানে ভাষণ দেয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিয়াউল হকের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে সকলকে তাকে (জিয়াউল হক) অনুসরণ করার আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, জিয়াউল হক ফেরি করে দই বিক্রি করে কোনোমতে সংসার চালিয়ে জমানো টাকা দিয়ে গরিব শিক্ষার্থীদের বই কিনে দিতেন। কাউকে আবার আর্থিক সহায়তাও দিতেন। টাকার অভাবে পঞ্চম শ্রেণির পর আর পড়াশোনা করতে পারেননি তিনি। তখনই তার ভাবনা জাগে আশপাশের কোনো ছাত্র যেন টাকার অভাবে পড়াশোনা না ছাড়ে, সে জন্য বিনামূল্যে বই দেবেন। কথা মতোই কাজ করলেন তিনি। যার ফলস্বরূপ আজ পেলেন একুশে পদক।
জিয়াউল হক নিজের বাড়িতে ১৯৬৯ সালে ‘জিয়াউল হক সাধারণ পাঠাগার’ স্থাপন করেন, যেখানে রয়েছে ১৪ হাজার বই। বিদ্যালয়ে সরকারিভাবে বিনামূল্যে বই দেয়ার পর তিনি কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বই দিতে শুরু করেন। পরবর্তীতে দুস্থ নারীদের বাড়ি বানিয়ে দেয়াসহ নানা সমাজসেবামূলক কাজে যুক্ত হন। অনেক প্রবাসী ও স্থানীয় হৃদয়বান মানুষ তার দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন।
তার একুশে পদক পাওয়ার খবরে আশপাশের মানুষ যখন তার বাড়িতে ভিড় জমিয়েছিলেন, তখন তিনি দই বিক্রিতে ব্যস্ত ছিলেন।