১১:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আজ

‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি…। আজ মহান একুশে ফেব্রুয়ারি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ১৯৫২ সালের এই দিনে মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে তরুণ ছাত্র যুবকদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ঢাকার রাজপথ।

বাঙালি জাতির জীবনে চিরভাস্বর একটি দিন। যে দিনে মায়ের ভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষায় সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারের মতো ভাষাসৈনিকেরা রক্ত ঢেলেছিলেন রাজপথে। আজ রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ সারাদেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালিত হবে।

আজ রাজধানীসহ সারা দেশে শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হবে ভাষাশহিদদের। তাদের স্মরণে হবে আলোচনা সভাসহ নানা আয়োজন। মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ১ মিনিটে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্যে দিয়ে অমর একুশের কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এছাড়া, কালো ব্যাজ ধারণ, প্রভাতফেরি সহকারে আজিমপুর কবরস্থানে ভাষাশহিদদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হবে।

মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে দিবসটি পালিত হচ্ছে।

একুশে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর দুঃশাসন ও শোষণের শৃঙ্খল ভেঙে বাঙালি জাতিসত্তা বিনির্মাণের প্রথম সোপান। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে না হতেই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আমাদের মুখের ভাষা ‘বাংলা’ কেড়ে নিতে চেয়েছিল। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’। এই ঘোষণার বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলার ছাত্রসমাজ ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার হয়ে ওঠে। বিক্ষোভে ফেটে পড়ে পূর্ববাংলার ছাত্র-জনতা।

১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সর্বাত্মক সাধারণ ধর্মঘট ও হরতাল আহ্বান করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই হরতাল কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন। এর ফলে তার ওপর পুলিশি নির্যাতন চালানো হয় এবং ওই দিনই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তারের পর ছাত্রলীগের নেতৃত্বে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা পরিষদ গঠন করা হয়।

সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৪৯ সালের এপ্রিল মাসে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার ফলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ২৪ জন নেতাকে জননিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করা হয়। মুচলেকা দেওয়ার মাধ্যমে অনেকে নিজেদের মুক্ত করলেও বঙ্গবন্ধু তার নীতি ও আদর্শের প্রতি অটল ছিলেন। এরপর এই আন্দোলন কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়লেও ১৯৫২ সালের শুরু থেইে তা ভিন্ন রূপ লাভ করে। ১৯৫২ সালের জানুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধু আটক অবস্থায় গোপনে বৈঠক করে ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা দিবস পালন ও সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠনের নির্দেশনা দেন। পাশাপাশি ১৯৫২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু জেল হাসপাতালে থেকে কতিপয় নেতার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ২১ ফেব্রুয়ারি হরতাল ডেকে গণপরিষদ ঘেরাও করার পরামর্শ দেন।

বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার এই আন্দোলন দমনের লক্ষ্যে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু, বাঙালি জাতীয়তাবোধে উজ্জীবিত সংঘবদ্ধ ছাত্র-জনতাকে কোনোভাবেই দাবিয়ে রাখা যায়নি। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে বাংলার আকাশ-বাতাস। ঢাকার রাজপথ রঞ্জিত হয় রফিক, শফিক, সালাম, বরকত, জব্বারসহ নাম না-জানা অনেক শহিদের রক্তে। ভাষা আন্দোলনকে দমিয়ে রাখতে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে কারান্তরীণ রাখে। তবে, জেলে অবস্থানকালেই বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রভাষা বাংলার প্রতিষ্ঠা ও রাজবন্দিদের মুক্তির দাবিতে ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে এক সপ্তাহের অনশন করেছিলেন।

মায়ের ভাষার অধিকার ও রাষ্ট্রভাষা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ছিল বীর বাঙালি জাতির লড়াই-সংগ্রাম আর বীরত্বের গৌরবজনক অধ্যায়। শহিদের রক্তে রঞ্জিত অমর একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির আত্মপ্রতিষ্ঠা, আত্মবিকাশ ও আত্মবিশ্লেষণের দিন।

মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আজ

আপডেট : ০৫:১৯:৩০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি…। আজ মহান একুশে ফেব্রুয়ারি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ১৯৫২ সালের এই দিনে মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে তরুণ ছাত্র যুবকদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ঢাকার রাজপথ।

বাঙালি জাতির জীবনে চিরভাস্বর একটি দিন। যে দিনে মায়ের ভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষায় সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারের মতো ভাষাসৈনিকেরা রক্ত ঢেলেছিলেন রাজপথে। আজ রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ সারাদেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালিত হবে।

আজ রাজধানীসহ সারা দেশে শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হবে ভাষাশহিদদের। তাদের স্মরণে হবে আলোচনা সভাসহ নানা আয়োজন। মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ১ মিনিটে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্যে দিয়ে অমর একুশের কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এছাড়া, কালো ব্যাজ ধারণ, প্রভাতফেরি সহকারে আজিমপুর কবরস্থানে ভাষাশহিদদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হবে।

মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে দিবসটি পালিত হচ্ছে।

একুশে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর দুঃশাসন ও শোষণের শৃঙ্খল ভেঙে বাঙালি জাতিসত্তা বিনির্মাণের প্রথম সোপান। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে না হতেই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আমাদের মুখের ভাষা ‘বাংলা’ কেড়ে নিতে চেয়েছিল। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’। এই ঘোষণার বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলার ছাত্রসমাজ ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার হয়ে ওঠে। বিক্ষোভে ফেটে পড়ে পূর্ববাংলার ছাত্র-জনতা।

১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সর্বাত্মক সাধারণ ধর্মঘট ও হরতাল আহ্বান করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই হরতাল কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন। এর ফলে তার ওপর পুলিশি নির্যাতন চালানো হয় এবং ওই দিনই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তারের পর ছাত্রলীগের নেতৃত্বে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা পরিষদ গঠন করা হয়।

সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৪৯ সালের এপ্রিল মাসে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার ফলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ২৪ জন নেতাকে জননিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করা হয়। মুচলেকা দেওয়ার মাধ্যমে অনেকে নিজেদের মুক্ত করলেও বঙ্গবন্ধু তার নীতি ও আদর্শের প্রতি অটল ছিলেন। এরপর এই আন্দোলন কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়লেও ১৯৫২ সালের শুরু থেইে তা ভিন্ন রূপ লাভ করে। ১৯৫২ সালের জানুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধু আটক অবস্থায় গোপনে বৈঠক করে ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা দিবস পালন ও সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠনের নির্দেশনা দেন। পাশাপাশি ১৯৫২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু জেল হাসপাতালে থেকে কতিপয় নেতার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ২১ ফেব্রুয়ারি হরতাল ডেকে গণপরিষদ ঘেরাও করার পরামর্শ দেন।

বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার এই আন্দোলন দমনের লক্ষ্যে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু, বাঙালি জাতীয়তাবোধে উজ্জীবিত সংঘবদ্ধ ছাত্র-জনতাকে কোনোভাবেই দাবিয়ে রাখা যায়নি। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে বাংলার আকাশ-বাতাস। ঢাকার রাজপথ রঞ্জিত হয় রফিক, শফিক, সালাম, বরকত, জব্বারসহ নাম না-জানা অনেক শহিদের রক্তে। ভাষা আন্দোলনকে দমিয়ে রাখতে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে কারান্তরীণ রাখে। তবে, জেলে অবস্থানকালেই বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রভাষা বাংলার প্রতিষ্ঠা ও রাজবন্দিদের মুক্তির দাবিতে ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে এক সপ্তাহের অনশন করেছিলেন।

মায়ের ভাষার অধিকার ও রাষ্ট্রভাষা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ছিল বীর বাঙালি জাতির লড়াই-সংগ্রাম আর বীরত্বের গৌরবজনক অধ্যায়। শহিদের রক্তে রঞ্জিত অমর একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির আত্মপ্রতিষ্ঠা, আত্মবিকাশ ও আত্মবিশ্লেষণের দিন।