ঢাকা ১২:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

পোশাক রপ্তানির লক্ষ্য অর্জন নিয়ে শঙ্কা

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৭:৪৮:৪৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ৪১১ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

পোশাকের শীর্ষ গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিতে। যে কারণে সার্বিক পোশাক রপ্তানিতে ঋণাত্মক ধারা বইছে। তবে আশার আলো দেখিয়েছে নতুন কয়েকটি বাজার। নতুন বাজারে এমন সুখবরের মধ্যেই গত ২৮ জানুয়ারি রপ্তানিতে নগদ প্রণোদনা উঠিয়ে নেয়ার প্রজ্ঞাপন দেয় সরকার। নতুন বাজারে রপ্তানিতে নগদ প্রণোদনা ১ শতাংশ কমিয়ে করা হয়েছে ৩ আর সার্বিক পোশাক রপ্তানিতে নগদ সহায়তা নামানো হয়েছে অর্ধেকে। তবে এসব নিয়ে পোশাক রপ্তানিকারকরা উচ্চবাচ্য না করলেও, আপত্তি ছিল নতুন বাজারের তালিকা থেকে ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানকে বাদ দেয়ায়। তবে সার্বিক পোশাক রপ্তানিতে নগদ সহায়তা নামানো হয়েছে অর্ধেকে। এতে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভাটা পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নতুন কয়েকটি বাজারের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, জাপান, রাশিয়া এবং ভারতের মতো কয়েকটি দেশ। এই বাজারগুলোর ওপর ভর করেই দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক থেকে আয় বছর ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় ৩২ শতাংশ। এরমধ্যে জাপানে ১৫৯ কোটি, অস্ট্রেলিয়ায় ১১৫ কোটি আর ভারতে রপ্তানি হয়েছে ১০০ কোটি ডলারের পোশাক।

এছাড়া রপ্তানিতে শীর্ষে ৫টি এইচএস কোডের বেশকিছু পণ্যে নগদ সহায়তা বন্ধেও অখুশি ব্যবসায়ীরা । বিজিএমইএ’র তথ্য অনুযায়ী, গেল অর্থবছরে এই ৫টি পণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে প্রায় ২৬ বিলিয়ন ডলার। মোট পোশাক রপ্তানির ৫৫ দশমিক ২২ শতাংশ আসে এ পণ্যগুলো থেকেই।

ব্যবসায়ীদের অনড় অবস্থানের পর বেশকিছু দাবি সংশোধন করে ১১ ফেব্রুয়ারি নতুন প্রজ্ঞাপন দেয় সরকার। যার মধ্যে পহেলা জানুয়ারির পরিবর্তে নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকরের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে পহেলা ফেব্রুয়ারি। এখন সেই তারিখ নিয়েই আপত্তি রপ্তানিকারকদের।

বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘এটাকে প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য দুই বছর অর্থাৎ ২০২৬ সাল পর্যন্ত অনেক সময়। এখানে দু’টি ভাগে প্রত্যাহার করা যেতে পারে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর ও ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের সময়। এ সময় জুলাই থেকেও শুরু হতে পারে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, নগদ প্রণোদনার ৬৬ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৫ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা পায় গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল খাত। এটি বন্ধ হলে সরকারের বেঁধে দেয়া রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভাটা পড়তে পারে বলে শঙ্কা পোশাক মালিকদের।

স্প্যারো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম বলেন ‘প্রণোদনা দেয়ার চিন্তা সরকারকে একটু অন্যভাবে করতে হবে। কারণ দিনশেষে এটা কিন্তু একটা বিনিয়োগ, এটাকে প্রণোদনা হিসেবে দেখা যাবে না। আজ পর্যন্ত সরকার গার্মেন্টস খাতে যা বিনিয়োগ করেছে তার ১০ গুণ ফেরত এসেছে। হঠাৎ করে আমাদের প্রণোদনা কমে গেলে প্রতিযোগিতায় অন্য দেশগুলো এগিয়ে যাবে।’

রপ্তানিতে হঠাৎ ভাটা পড়লে শিগগিরই জোয়ারের দেখা মিলবে না ডলার যোগান কিংবা রিজার্ভ বৃদ্ধিতে। বরং এতে বাড়তে পারে সংকট। তাই ২০২৬ সাল পর্যন্ত যেহেতু প্রণোদনা দেয়ার সুযোগ রয়েছে সেটি কাজে লাগানোর পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের।

গবেষক ও অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবির বলেন, ‘অনেক গার্মেন্টস নিজেরাই সুতো থেকে শুরু করে কিছু কাঁচামাল তৈরি করছে। তাদেরকে নিরুৎসাহ করার কোনো সুযোগ নেই। এ অবস্থায় আমদানি করতে হবে। এমনিতেই রপ্তানি হার কমে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ পড়ছে।’

২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর রপ্তানিতে নগদ সহায়তা উঠে যাবে তাই এখন থেকেই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে প্রজ্ঞাপনে, তৈরি পোশাকসহ ৪৩ ধরনের পণ্যে রপ্তা‌নি‌তে নগদ সহায়তা কমিয়েছে সরকার। প্রথম ধাপে খাতভেদে নগদ সহায়তা কমেছে ১০ শতাংশ পর্যন্ত।

নিউজটি শেয়ার করুন

পোশাক রপ্তানির লক্ষ্য অর্জন নিয়ে শঙ্কা

আপডেট সময় : ০৭:৪৮:৪৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

পোশাকের শীর্ষ গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিতে। যে কারণে সার্বিক পোশাক রপ্তানিতে ঋণাত্মক ধারা বইছে। তবে আশার আলো দেখিয়েছে নতুন কয়েকটি বাজার। নতুন বাজারে এমন সুখবরের মধ্যেই গত ২৮ জানুয়ারি রপ্তানিতে নগদ প্রণোদনা উঠিয়ে নেয়ার প্রজ্ঞাপন দেয় সরকার। নতুন বাজারে রপ্তানিতে নগদ প্রণোদনা ১ শতাংশ কমিয়ে করা হয়েছে ৩ আর সার্বিক পোশাক রপ্তানিতে নগদ সহায়তা নামানো হয়েছে অর্ধেকে। তবে এসব নিয়ে পোশাক রপ্তানিকারকরা উচ্চবাচ্য না করলেও, আপত্তি ছিল নতুন বাজারের তালিকা থেকে ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানকে বাদ দেয়ায়। তবে সার্বিক পোশাক রপ্তানিতে নগদ সহায়তা নামানো হয়েছে অর্ধেকে। এতে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভাটা পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নতুন কয়েকটি বাজারের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, জাপান, রাশিয়া এবং ভারতের মতো কয়েকটি দেশ। এই বাজারগুলোর ওপর ভর করেই দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক থেকে আয় বছর ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় ৩২ শতাংশ। এরমধ্যে জাপানে ১৫৯ কোটি, অস্ট্রেলিয়ায় ১১৫ কোটি আর ভারতে রপ্তানি হয়েছে ১০০ কোটি ডলারের পোশাক।

এছাড়া রপ্তানিতে শীর্ষে ৫টি এইচএস কোডের বেশকিছু পণ্যে নগদ সহায়তা বন্ধেও অখুশি ব্যবসায়ীরা । বিজিএমইএ’র তথ্য অনুযায়ী, গেল অর্থবছরে এই ৫টি পণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে প্রায় ২৬ বিলিয়ন ডলার। মোট পোশাক রপ্তানির ৫৫ দশমিক ২২ শতাংশ আসে এ পণ্যগুলো থেকেই।

ব্যবসায়ীদের অনড় অবস্থানের পর বেশকিছু দাবি সংশোধন করে ১১ ফেব্রুয়ারি নতুন প্রজ্ঞাপন দেয় সরকার। যার মধ্যে পহেলা জানুয়ারির পরিবর্তে নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকরের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে পহেলা ফেব্রুয়ারি। এখন সেই তারিখ নিয়েই আপত্তি রপ্তানিকারকদের।

বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘এটাকে প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য দুই বছর অর্থাৎ ২০২৬ সাল পর্যন্ত অনেক সময়। এখানে দু’টি ভাগে প্রত্যাহার করা যেতে পারে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর ও ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের সময়। এ সময় জুলাই থেকেও শুরু হতে পারে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, নগদ প্রণোদনার ৬৬ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৫ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা পায় গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল খাত। এটি বন্ধ হলে সরকারের বেঁধে দেয়া রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভাটা পড়তে পারে বলে শঙ্কা পোশাক মালিকদের।

স্প্যারো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম বলেন ‘প্রণোদনা দেয়ার চিন্তা সরকারকে একটু অন্যভাবে করতে হবে। কারণ দিনশেষে এটা কিন্তু একটা বিনিয়োগ, এটাকে প্রণোদনা হিসেবে দেখা যাবে না। আজ পর্যন্ত সরকার গার্মেন্টস খাতে যা বিনিয়োগ করেছে তার ১০ গুণ ফেরত এসেছে। হঠাৎ করে আমাদের প্রণোদনা কমে গেলে প্রতিযোগিতায় অন্য দেশগুলো এগিয়ে যাবে।’

রপ্তানিতে হঠাৎ ভাটা পড়লে শিগগিরই জোয়ারের দেখা মিলবে না ডলার যোগান কিংবা রিজার্ভ বৃদ্ধিতে। বরং এতে বাড়তে পারে সংকট। তাই ২০২৬ সাল পর্যন্ত যেহেতু প্রণোদনা দেয়ার সুযোগ রয়েছে সেটি কাজে লাগানোর পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের।

গবেষক ও অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবির বলেন, ‘অনেক গার্মেন্টস নিজেরাই সুতো থেকে শুরু করে কিছু কাঁচামাল তৈরি করছে। তাদেরকে নিরুৎসাহ করার কোনো সুযোগ নেই। এ অবস্থায় আমদানি করতে হবে। এমনিতেই রপ্তানি হার কমে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ পড়ছে।’

২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর রপ্তানিতে নগদ সহায়তা উঠে যাবে তাই এখন থেকেই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে প্রজ্ঞাপনে, তৈরি পোশাকসহ ৪৩ ধরনের পণ্যে রপ্তা‌নি‌তে নগদ সহায়তা কমিয়েছে সরকার। প্রথম ধাপে খাতভেদে নগদ সহায়তা কমেছে ১০ শতাংশ পর্যন্ত।