১১:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মিয়ানমারের সংঘাতে জড়িয়ে যেতে পারে বাংলাদেশ

  • অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট : ০৭:১১:০১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • ১১০ দেখেছেন

মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাত ঠেকাতে দেশটির দুই পক্ষের মধ্যে রাজনৈতিক সংলাপ জরুরি। এ উদ্যোগ ভারত, চীন বা যুক্তরাষ্ট্র নিতেই পারে। কিন্তু এই সুযোগে পরাশক্তি কোনো দেশ যাতে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে না পারে, তা নিয়ে সতর্ক করেছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, এতে বাংলাদেশের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার শঙ্কা তৈরি হবে।

মিয়ানমারের যে অঞ্চলে আরাকান আর্মির সঙ্গে সামরিক বাহিনীর যুদ্ধ হচ্ছে, তা বাংলাদেশ সীমান্তের লাগোয়া। ফলে বিদ্রোহীদের নেপিদো থেকে শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করা জান্তা বাহিনীর জন্য কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

গত চারদিনে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কাছে আরও কয়েকটি সামরিক ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে সেনাবাহিনী। কাচিন, রাখাইন, মন প্রদেশ এবং সাগাইং ও বাগো অঞ্চলে জান্তা সরকার এসব ঘাঁটি হারিয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে থাইল্যান্ড ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ইরাবতী।

এতে বলা হয়েছে, পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস এবং এথেনিক আর্মড অর্গানাইজেশনের অব্যাহত হামলায় ঘাঁটি ছাড়তে বাধ্য হয় সেনারা। এ সময় কিছু সেনা প্রাণ হারান এবং অনেকে বিদ্রোহীদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।

এদিকে, বুধবার রাখাইন রাজ্যে বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে ব্যাপক বোমা হামলা চালিয়েছে সামরিক বাহিনী। এতে রামরি শহরের সরকারি হাসপাতাল ও বাজার ধ্বংস হয়। এছাড়া, বেশ কিছু আবাসিক ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মিয়ানমারের এই সংঘাতের পরোক্ষ প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের বান্দরবান ও কক্সবাজার এলাকায়। এ পরিস্থিতিতে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে পরাশক্তি চীন, আমেরিকা এবং আঞ্চলিক বড় শক্তি ভারত। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ও ভারতের নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে উৎকণ্ঠা জানিয়েছেন মার্কিন সরকারের বড় কর্তা ডোনাল্ড লু। এ ইস্যুতে ঢাকা সফরে আসছেন দেশটির দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তার।

পরাশক্তিগুলোর বাড়তি আগ্রহ নিয়ে ভিন্ন হিসাব করছেন বিশ্লেষকেরা। তাদের শঙ্কা, রোহিঙ্গা সংকট ও মিয়ানমারের সংঘাত ইস্যুতে ভারত, চীন বা যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা বাংলাদেশকে বিপদে ফেলতে পারে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক আবদুর রশীদ বলেন, ‘এই সংঘাত যত বাড়ছে, তৃতীয় শক্তির উপস্থিতির সুযোগ ততই বাড়ছে। সেখানে আমেরিকা কেন তার সুযোগ নিতে চাইবে না? সে তার সুযোগ ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। হয়ত নতুন একটা পারসেপশন নিয়ে আসবে। মিয়ানমারের নেপিদো থেকে সামরিক অভিযান পরিচালনা যতটা না কষ্ট, বাংলাদেশ থেকে অনেক সোজা। এরা অনেকেই বাংলাদেশকে উৎসাহিত করার চেষ্টা করবে। বাংলাদেশকে ব্যবহার করার প্রক্রিয়াটা ওখান থেকেই তোলা হয়েছে। সামরিক সংঘাত কোনো সমাধান নয়।’

তবে মিয়ানমারের সংঘাত বন্ধে বড় দেশগুলো সংলাপের উদ্যোগ নিতে পারে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বার্থ যাতে ক্ষুণ্ন না হয় সেদিকে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, ‘মিয়ানমারের বিবাদমান অংশ যদি চায়, তাহলেই অন্যান্য যারা প্রতিবেশিরা আছে, ভুক্তভোগী যারা আছে, তারা এখানে অংশ নিয়ে সমাধানের একটা পথ রচনা করতে পারে। সেখানে মিয়ানমারকেই প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে। কাজেই এখানে একক কোনো দেশের সুযোগ আছে বলে আমি মনে করছি না। একটা সমন্বিত প্রয়াস দরকার হবে। কারণ এটা অনেক পুরানো সমস্যা।’

এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে আঞ্চলিক ফোরামে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান বিশেষজ্ঞরা।

গত বছরের ১৩ নভেম্বর থেকে উত্তর রাখাইন ও প্রতিবেশী দক্ষিণ চিন রাজ্যে মিয়ানমার জান্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে আসছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। গোষ্ঠীটি বলছে, রাখাইনের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহর ও সেনা সদরদপ্তরের দখল নিয়েছে তারা।

সামরিক জান্তা ও বিদ্রোহীদের এ সংঘর্ষে বাংলাদেশ সীমান্তেও উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। মিয়ানমার থেকে আসা গোলার আঘাতে একজন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। দিনভর সংঘর্ষ, আর ওপার থেকে ভেসে আসা তীব্র গোলা–বারুদের শব্দে আতঙ্ক কাটছে না মিয়ানমার সীমান্তে থাকা বাংলাদেশি জনপদগুলোতে।

আরাকান আর্মির সঙ্গে চলমান সংঘাতে টিকতে না পেরে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী–বিজিপি, সেনা সদস্যসহ বিভিন্ন বিভাগের ৩৩০ কর্মকর্তা। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দুই ধাপে সমুদ্রপথে তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়।

রাখাইনে সংঘাত তীব্র হওয়ায় সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে নতুন করে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে রোহিঙ্গারাও। তবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ডের শক্ত অবস্থানের কারণে তারা আসতে পারছে না।

মিয়ানমারের সংঘাতে জড়িয়ে যেতে পারে বাংলাদেশ

আপডেট : ০৭:১১:০১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাত ঠেকাতে দেশটির দুই পক্ষের মধ্যে রাজনৈতিক সংলাপ জরুরি। এ উদ্যোগ ভারত, চীন বা যুক্তরাষ্ট্র নিতেই পারে। কিন্তু এই সুযোগে পরাশক্তি কোনো দেশ যাতে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে না পারে, তা নিয়ে সতর্ক করেছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, এতে বাংলাদেশের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার শঙ্কা তৈরি হবে।

মিয়ানমারের যে অঞ্চলে আরাকান আর্মির সঙ্গে সামরিক বাহিনীর যুদ্ধ হচ্ছে, তা বাংলাদেশ সীমান্তের লাগোয়া। ফলে বিদ্রোহীদের নেপিদো থেকে শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করা জান্তা বাহিনীর জন্য কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

গত চারদিনে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কাছে আরও কয়েকটি সামরিক ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে সেনাবাহিনী। কাচিন, রাখাইন, মন প্রদেশ এবং সাগাইং ও বাগো অঞ্চলে জান্তা সরকার এসব ঘাঁটি হারিয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে থাইল্যান্ড ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ইরাবতী।

এতে বলা হয়েছে, পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস এবং এথেনিক আর্মড অর্গানাইজেশনের অব্যাহত হামলায় ঘাঁটি ছাড়তে বাধ্য হয় সেনারা। এ সময় কিছু সেনা প্রাণ হারান এবং অনেকে বিদ্রোহীদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।

এদিকে, বুধবার রাখাইন রাজ্যে বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে ব্যাপক বোমা হামলা চালিয়েছে সামরিক বাহিনী। এতে রামরি শহরের সরকারি হাসপাতাল ও বাজার ধ্বংস হয়। এছাড়া, বেশ কিছু আবাসিক ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মিয়ানমারের এই সংঘাতের পরোক্ষ প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের বান্দরবান ও কক্সবাজার এলাকায়। এ পরিস্থিতিতে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে পরাশক্তি চীন, আমেরিকা এবং আঞ্চলিক বড় শক্তি ভারত। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ও ভারতের নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে উৎকণ্ঠা জানিয়েছেন মার্কিন সরকারের বড় কর্তা ডোনাল্ড লু। এ ইস্যুতে ঢাকা সফরে আসছেন দেশটির দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তার।

পরাশক্তিগুলোর বাড়তি আগ্রহ নিয়ে ভিন্ন হিসাব করছেন বিশ্লেষকেরা। তাদের শঙ্কা, রোহিঙ্গা সংকট ও মিয়ানমারের সংঘাত ইস্যুতে ভারত, চীন বা যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা বাংলাদেশকে বিপদে ফেলতে পারে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক আবদুর রশীদ বলেন, ‘এই সংঘাত যত বাড়ছে, তৃতীয় শক্তির উপস্থিতির সুযোগ ততই বাড়ছে। সেখানে আমেরিকা কেন তার সুযোগ নিতে চাইবে না? সে তার সুযোগ ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। হয়ত নতুন একটা পারসেপশন নিয়ে আসবে। মিয়ানমারের নেপিদো থেকে সামরিক অভিযান পরিচালনা যতটা না কষ্ট, বাংলাদেশ থেকে অনেক সোজা। এরা অনেকেই বাংলাদেশকে উৎসাহিত করার চেষ্টা করবে। বাংলাদেশকে ব্যবহার করার প্রক্রিয়াটা ওখান থেকেই তোলা হয়েছে। সামরিক সংঘাত কোনো সমাধান নয়।’

তবে মিয়ানমারের সংঘাত বন্ধে বড় দেশগুলো সংলাপের উদ্যোগ নিতে পারে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বার্থ যাতে ক্ষুণ্ন না হয় সেদিকে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, ‘মিয়ানমারের বিবাদমান অংশ যদি চায়, তাহলেই অন্যান্য যারা প্রতিবেশিরা আছে, ভুক্তভোগী যারা আছে, তারা এখানে অংশ নিয়ে সমাধানের একটা পথ রচনা করতে পারে। সেখানে মিয়ানমারকেই প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে। কাজেই এখানে একক কোনো দেশের সুযোগ আছে বলে আমি মনে করছি না। একটা সমন্বিত প্রয়াস দরকার হবে। কারণ এটা অনেক পুরানো সমস্যা।’

এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে আঞ্চলিক ফোরামে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান বিশেষজ্ঞরা।

গত বছরের ১৩ নভেম্বর থেকে উত্তর রাখাইন ও প্রতিবেশী দক্ষিণ চিন রাজ্যে মিয়ানমার জান্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে আসছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। গোষ্ঠীটি বলছে, রাখাইনের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহর ও সেনা সদরদপ্তরের দখল নিয়েছে তারা।

সামরিক জান্তা ও বিদ্রোহীদের এ সংঘর্ষে বাংলাদেশ সীমান্তেও উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। মিয়ানমার থেকে আসা গোলার আঘাতে একজন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। দিনভর সংঘর্ষ, আর ওপার থেকে ভেসে আসা তীব্র গোলা–বারুদের শব্দে আতঙ্ক কাটছে না মিয়ানমার সীমান্তে থাকা বাংলাদেশি জনপদগুলোতে।

আরাকান আর্মির সঙ্গে চলমান সংঘাতে টিকতে না পেরে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী–বিজিপি, সেনা সদস্যসহ বিভিন্ন বিভাগের ৩৩০ কর্মকর্তা। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দুই ধাপে সমুদ্রপথে তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়।

রাখাইনে সংঘাত তীব্র হওয়ায় সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে নতুন করে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে রোহিঙ্গারাও। তবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ডের শক্ত অবস্থানের কারণে তারা আসতে পারছে না।