রোহিঙ্গাদের নিশ্চিহ্ন করার নতুন কৌশল জান্তা সরকারের
- আপডেট সময় : ০৯:২৪:২৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / ৪৭০ বার পড়া হয়েছে
আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে নিতে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের আহ্বানকে প্রতারণা বলে মনে করছেন রোহিঙ্গারা। তারা বলছেন, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব না দেওয়া, সব সুযোগ-সুবিধা কেড়ে নেওয়া জান্তা সরকারের আহ্বানে সাড়া দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। সম্প্রতি মিয়ানমারের গণমাধ্যম নারিনজার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের অস্ত্র হাতে নেওয়ার অনুরোধ জানায় জান্তা সরকার।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. জোবাইর। নিজেদের জনগোষ্ঠীর অধিকার এবং প্রত্যাবাসন নিয়ে বেশ সোচ্চার তিনি। মিয়ানমারে চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন অনেকটা অনিশ্চিত বলে মনে করছেন রোহিঙ্গাদের এই নেতা।
এদিকে মিয়ানমারের গণমাধ্যম নারিনজার এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জান্তা সরকার রোহিঙ্গাদের অস্ত্র হাতে নেওয়ার অনুরোধ করেছে। নাগরিকত্ব না দিয়ে জান্তার এ ধরনের আহ্বানকে জোবাইর মনে করেন রোহিঙ্গাদের নিশ্চিহ্ন করার নতুন এক কৌশল।
মো. জোবাইর বলেন, ‘এখন তারা আরেকটা নতুন খেলা এনেছে। আমাদের আকিয়াবের মুসলমান রোহিঙ্গা কমিউনিটিকে জান্তার সঙ্গে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। তা না হলে রোহিঙ্গাদের সরাসরি গিয়ে মারতে বেশি সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। কারণ সাধারণ নাগরিকদের মারলে পৃথিবী জান্তাকে খারাপ বলবে। রোহিঙ্গারা হাতে হাতিয়ার তুলে নিলে তাদের সুবিধা হবে আবারও মারতে এবং কয়েকজন যারা আছে তারাও বাংলাদেশে পালিয়ে আসবে। এটা হচ্ছে তাদের নতুন খেলা।’
ক্যাম্পে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা জানান, নিজ দেশ রক্ষায় তারা কাজ করবেন। তবে আগে মিয়ানমারে নাগরিকত্বসহ সব ধরনের সুযোগ দিতে হবে বলেও জানান তারা।
এক রোহিঙ্গা বলেন, ‘জান্তা সরকার আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা চেয়েছে। যদি সরকারের আমাদের প্রয়োজন হয় তাহলে প্রথমে আমাদের যে নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়েছিল তা ফেরত দিতে হবে। নাগরিকত্ব দিলে আমাদের দেশকে রক্ষা করতে আমরা প্রস্তুত আছি।’
আরেক রোহিঙ্গা বলেন, ‘আমরা আমাদের দেশ রক্ষার জন্য যুদ্ধে যেতে প্রস্তুত আছি। কিন্তু আমাদের নিবন্ধিত দেশের নাগরিকত্ব দিতে হবে। সেটা পার্লামেন্টে নিয়ে গিয়ে নিবন্ধন করতে হবে।’
মিয়ানমারের চলমান গৃহযুদ্ধে দেশটির বেশিরভাগ অঞ্চল দখলে নেয় আরাকান আর্মি। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল দেশটির বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) সদস্যসহ ৩৩০ জন। বিপর্যস্ত মিয়ানমারকে শক্তিশালী করতে জান্তা সরকার দেশের সকল যুবক-যুবতীর সেনাবাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক করেছে। এর পরপরই জান্তা সরকারের পক্ষ হয়ে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের লড়াই করার আহ্বান জানানো হয়।
উল্লেখ্য, গেল ২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে শুরু হয় যুদ্ধ। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে তমব্রু রাইট ও লেফট ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। দু-তিন দিন তীব্র লড়াইয়ের পর তমব্রু ও ঢেঁকিবনিয়া সীমান্তচৌকি দখলে নেয় আরাকান আর্মি।
এ ছাড়া মিয়ানমারের দুই বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলিতে ৫ ফেব্রুয়ারি নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামের একটি রান্নাঘরের ওপর মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেল পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই দুজন মারা যান। এ সময় গোলাগুলিতে আহত হন আরও নয় জন।