কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করেও জন্মহার বাড়াতে পারছে না দক্ষিণ কোরিয়া সরকার। বছরের ব্যবধানে দেশটির জন্মহার কমেছে ৮ শতাংশ। দিন দিন কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা হারিয়ে দিশেহারা দেশটির অর্থনীতি। ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে সন্তান নিতে আগ্রহী না কোরিয়ান নারীরা।
বিশ্বের সবচেয়ে কম জন্মহারের দেশ দক্ষিণ কোরিয়ায় জনসংখ্যা সংকট তীব্র হচ্ছে। ২০২৩ সালে দেশটিতে জন্মহার কমেছে ৮ শতাংশ। টানা চার বছর ধরে জন্মহার নিম্নমুখী। কোটি কোটি ডলারের সরকারি প্রকল্প নেয়ার পরও কোনো ফল আসছে না। শুধু তাই না, জনসংখ্যা কমার সঙ্গে কমেছে বিয়ের হারও। দক্ষিণ কোরিয়ার মোট ৫ কোটি ১০ লাখ জনসংখ্যা টিকিয়ে রাখতে গড়ে ২ দশমিক ১ শতাংশ হারে জন্মহার দরকার।
দেশটির প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, একজন নারী তার জীবদ্দশায় গড়ে সন্তান নিচ্ছেন দশমিক ৭২ জন। আর নারীরা তাদের প্রথম বাচ্চা নিচ্ছেন গড়ে ৩৩ বছর বয়সে। এশিয়ার পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিতে দিন দিন কমছে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা । এ ধারা চলতে থাকলে ২১০০ সাল নাগাদ দেশটির জনসংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসবে। এর পেছনে জীবনযাত্রার অত্যধিক ব্যয় ও অস্বাভাবিক দীর্ঘ কর্মঘণ্টাকে দায়ী করছেন দক্ষিণ কোরিয়ার নারীরা।
একজন নারী বলেন, 'সন্তানের দেখভাল ও যত্ন নেওয়ার জন্য বাবা-মাকে অফিস ছেড়ে দিতে হয়। এতে চাকরিজীবনে অনেক বাধার মুখে পড়তে হয়। তরুণদের সন্তান না নেয়ার এটি বড় কারণ।'
একজন বাবা বলেন, 'বাসায় বাচ্চা রেখে অফিসে নিশ্চিত মনে কাজ করা সম্ভব না। এক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর আরও বেশি সহযোগিতা দরকার।'
আরেকজন নারী বলেন, 'সন্তান জন্ম দেয়ার জন্য কর্মজীবনে বিরতি দেয়ার কারণে অনেক নারীকে আর্থিক সমস্যায় পড়তে দেখা গেছে।'
শিশু জন্মহার হ্রাস মানে দেশে শ্রমশক্তি কমছে ও বয়স্ক জনগোষ্ঠী বাড়ছে। যা নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে দেশের অর্থনীতিতে। ২০০৬ সালে থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার ভর্তুকি, নগদ অর্থ, সন্তান লালন-পালনের খরচ ও চিকিৎসার জন্য সহায়তা দিয়ে আসছে। দম্পতিদের সন্তান নিতে উৎসাহিত করতে বিনিয়োগ করেছে ২৭ হাজার কোটি ডলার। তবে আর্থিক ও অন্যান্য সুবিধা দিয়েও দম্পতিদের বোঝাতে ব্যর্থ হচ্ছে সরকার। কারণ দেশটিতে সন্তান লালন-পালনের খরচ আকাশ ছোঁয়া।
জন্মহার কমার এ প্রবণতাকে জাতীয় জরুরি অবস্থা বলে ঘোষণা করেছেন দেশটির রাজনীতিবিদরা। আগামী এপ্রিলে দক্ষিণ কোরিয়ায় জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে দেশটিতে জন্মহার বাড়াতে বড় বড় রাজনৈতিক দল বাসস্থান ও সহজ শর্তে ঋণ দেয়াসহ নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।
প্রতিবেশী দেশগুলোও একই সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। জাপানে জন্মহার রেকর্ড ১ দশমিক ২৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। চীনে তা ১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। ২০২৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার জন্মহার আরো কমে দশমিক ৬৮ শতাংশে নেমে যাওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।