ঢাকা ১২:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी
ব্রেকিং নিউজ ::
ইসরায়েল ও ইরানের সংঘাত: বাংলাদেশিদের জন্য হটলাইন সেবা চালু করা হয়েছে দুতাবাস। ইরানে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের + ৯৮৯908577368 ও + ৯৮৯১22065745 নম্বরে (হোয়াটসঅ্যাপ সহ) যোগাযোগ করতে বলেছে দূতাবাস কর্তৃপক্ষ।

বেইলি রোডে আগুন: মৃত বেড়ে ৪৬, শঙ্কামুক্ত নন দগ্ধরাও

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৬:২৮:৪৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১ মার্চ ২০২৪
  • / ৫৬৬ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

রাজধানীর বেইলি রোডের বহুতল ভবনে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. সামন্ত লাল সেন। এছাড়া, এ ঘটনায় দ্বগ্ধ চিকিৎসাধীন ব্যক্তিরাও শঙ্কামুক্ত নন বলেও জানিয়েছেন তিনি। শুক্রবার (১ মার্চ) শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক বিফ্রিং তিনি এ তথ্য জানান।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন, গতকাল রাতে অত্যন্ত মর্মান্তিক একটি দুর্ঘটনা ঘটে, যেটি কখনো কাম্য ছিল না। এই দুর্ঘটনায় সর্বমোট ৪৬ জন মারা গেছেন। বাকি যে কয়জন হাসপাতালের চিকিৎসাধীন রয়েছেন, তারা কেউ শঙ্কামুক্ত নন। আমরা সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিয়ে তাদের জন্য চেষ্টা করছি। আমি এখন আবার চিকিৎসকদের নিয়ে বসব। একটি পরিকল্পনা করব কীভাবে কী করা যায়।

ডা. সামন্তলাল সেন বলেন, বেইলি রোডে আগুনের ঘটনায় নিহতদের মধ্যে অধিকাংশরাই কার্বন মনোক্সাইড পয়জনে মারা গেছেন। আগুন লাগলে বদ্ধ ঘরে যখন কেউ বের হতে না পারে তখন সেখানে সৃষ্ট ধোঁয়া তাদের শ্বাসনালীতে চলে যায়। এখানেও প্রত্যেকেরই তাই হয়েছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল পৌণে সাতটার সময় আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, যা যা করা প্রয়োজন সেগুলো করতে। রোগীদের সর্বাত্মক দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী নিয়েছেন। এদের চিকিৎসার জন্য যা প্রয়োজন সবকিছু সরকারের পক্ষ থেকে করা হবে।

এর আগে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে দগ্ধ রোগীদের দেখতে যান।

এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পৌঁছে যায় অগ্নিকাণ্ডের খবর। আহত অনেকে আসতে পারেন, এ কারণে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানের নির্দেশে আগে থেকেই চিকিৎসকরা প্রস্তুতি নিয়ে রাখেন। এরই মধ্যে রাত সাড়ে ১১টা থেকে আসতে থাকেন আহতরা। চিকিৎসক ও নার্সরা তাদের চিকিৎসাসেবা দিতে থাকেন। এরই মধ্যে অচেতন অবস্থায় একে একে আনা হয় অনেককে। তাদের আনা হয় ফায়ার সার্ভিসের একটি বড় কার্গোতে করে। জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে একে একে মৃত ঘোষণা করতে থাকেন। একপর্যায়ে লাশের মিছিলে পরিণত হয় জরুরি বিভাগ।

অন্যদিকে রাতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাসপাতালে এসে সাংবাদিকদের বলেন, দুই হাসপাতাল মিলে মোট ৪৪ জন বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডে মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ১০ জন শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে মারা গেছেন আর ঢাকা মেডিকেলে ৩৬ জন মারা গেছেন।

ঢাকা মেডিকেল হাসপাতাল থেকে অপর একটি সূত্র জানায়, বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় হাসপাতালে চিকিৎসকরা যাদের মৃত ঘোষণা করেছেন, তাদের প্রায় সবাই হাসপাতালে আনার আগেই মারা গেছেন। হাসপাতালে আনার পর তাদের নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষা নিরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করা হয়। ঢাকা মেডিকেলে মৃতদের মধ্যে দুজনের শরীর পুরোপুরি দগ্ধ হয়েছে।

এদিকে ফায়ার সার্ভিস বলছে, বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আগুনে দগ্ধ হওয়ার চেয়ে বেশিরভাগ মানুষ শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা অনুযায়ী, আগুন লাগা ভবনটির নাম গ্রিন কজি কটেজ। ভবনটির নিচ তলায় চায়ের চুমুক নামে একটি রেস্টুরেন্ট থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। পরে সারা ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। মাত্র এক মাস আগে ভবনটির নিচ তলায় এই রেস্টুরেন্টেটি যাত্রা শুরু করে।

মো. নাবিল নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, আমার বাসা শান্তিনগরে। প্রায় প্রতিদিন বেইলি রোডে আসা হয়। গতকাল রাতে আমি বেইলি রোডে পাঞ্জাবি কিনতে আসি। রাত ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে দেখি চায়ের চুমুক নামে রেস্টুরেন্টের এক কর্মচারী চুলায় যেন কী করছেন। পরে হঠাৎ দেখি গ্যাসের চুলায় আগুন লেগে যায়। তখন নিচে থাকা অনেকেই আগুন নেভাতে চেষ্টা করেন। কিন্তু আগুন নেভানো সম্ভব হয়নি। দ্রুত আগুন সারা ভবনে ছড়িয়ে পড়ে।

দুলাল হোসেন নামে আরেক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, প্রথমে এসে দেখি নিচে চায়ের চুমুকে আগুন লেগেছে। তখন রেস্টুরেন্টেটির কর্মচারীরা ও একজন পুলিশ সদস্য আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা কোনোভাবেই আগুন নেভাতে পারেননি। অল্প সময়ের মধ্যে আগুন ভবনটিতে ছড়িয়ে পড়ে৷ চায়ের চুমুক রেস্টুরেন্টেটি মাত্র এক মাস আগে যাত্রা শুরু করে।

আব্দুল্লাহ আল নাসের নামে আরেক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, আগুন লাগার পর অনেক মানুষ দুই তলায় অবস্থিত কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে আটকা পড়েন। তাদের মধ্যে কয়েকজন লাফিয়ে নিচে নামেন। বাকি কয়েকজন জীবন বাঁচাতে ছাদে চলে যান। তবে সিঁড়ি ছোট থাকায় অনেক মানুষ ছাদে যেতে পারেনি।

বনটিতে পর্যাপ্ত অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা ছিল না বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ভবনটিতে কাচ্চি ভাই, পিৎজা ইন, স্ট্রিট ওভেন, খানাসসহ বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এছাড়া ইলিয়েন, ক্লোজেস্ট ক্লাউডসহ বেশকিছু জনপ্রিয় পোশাকের দোকানও রয়েছে। ঘটনা তদন্তে এরই মধ্যে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে ফায়ার সার্ভিস।

নিউজটি শেয়ার করুন

বেইলি রোডে আগুন: মৃত বেড়ে ৪৬, শঙ্কামুক্ত নন দগ্ধরাও

আপডেট সময় : ০৬:২৮:৪৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১ মার্চ ২০২৪

রাজধানীর বেইলি রোডের বহুতল ভবনে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. সামন্ত লাল সেন। এছাড়া, এ ঘটনায় দ্বগ্ধ চিকিৎসাধীন ব্যক্তিরাও শঙ্কামুক্ত নন বলেও জানিয়েছেন তিনি। শুক্রবার (১ মার্চ) শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক বিফ্রিং তিনি এ তথ্য জানান।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন, গতকাল রাতে অত্যন্ত মর্মান্তিক একটি দুর্ঘটনা ঘটে, যেটি কখনো কাম্য ছিল না। এই দুর্ঘটনায় সর্বমোট ৪৬ জন মারা গেছেন। বাকি যে কয়জন হাসপাতালের চিকিৎসাধীন রয়েছেন, তারা কেউ শঙ্কামুক্ত নন। আমরা সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিয়ে তাদের জন্য চেষ্টা করছি। আমি এখন আবার চিকিৎসকদের নিয়ে বসব। একটি পরিকল্পনা করব কীভাবে কী করা যায়।

ডা. সামন্তলাল সেন বলেন, বেইলি রোডে আগুনের ঘটনায় নিহতদের মধ্যে অধিকাংশরাই কার্বন মনোক্সাইড পয়জনে মারা গেছেন। আগুন লাগলে বদ্ধ ঘরে যখন কেউ বের হতে না পারে তখন সেখানে সৃষ্ট ধোঁয়া তাদের শ্বাসনালীতে চলে যায়। এখানেও প্রত্যেকেরই তাই হয়েছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল পৌণে সাতটার সময় আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, যা যা করা প্রয়োজন সেগুলো করতে। রোগীদের সর্বাত্মক দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী নিয়েছেন। এদের চিকিৎসার জন্য যা প্রয়োজন সবকিছু সরকারের পক্ষ থেকে করা হবে।

এর আগে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে দগ্ধ রোগীদের দেখতে যান।

এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পৌঁছে যায় অগ্নিকাণ্ডের খবর। আহত অনেকে আসতে পারেন, এ কারণে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানের নির্দেশে আগে থেকেই চিকিৎসকরা প্রস্তুতি নিয়ে রাখেন। এরই মধ্যে রাত সাড়ে ১১টা থেকে আসতে থাকেন আহতরা। চিকিৎসক ও নার্সরা তাদের চিকিৎসাসেবা দিতে থাকেন। এরই মধ্যে অচেতন অবস্থায় একে একে আনা হয় অনেককে। তাদের আনা হয় ফায়ার সার্ভিসের একটি বড় কার্গোতে করে। জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে একে একে মৃত ঘোষণা করতে থাকেন। একপর্যায়ে লাশের মিছিলে পরিণত হয় জরুরি বিভাগ।

অন্যদিকে রাতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাসপাতালে এসে সাংবাদিকদের বলেন, দুই হাসপাতাল মিলে মোট ৪৪ জন বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডে মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ১০ জন শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে মারা গেছেন আর ঢাকা মেডিকেলে ৩৬ জন মারা গেছেন।

ঢাকা মেডিকেল হাসপাতাল থেকে অপর একটি সূত্র জানায়, বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় হাসপাতালে চিকিৎসকরা যাদের মৃত ঘোষণা করেছেন, তাদের প্রায় সবাই হাসপাতালে আনার আগেই মারা গেছেন। হাসপাতালে আনার পর তাদের নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষা নিরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করা হয়। ঢাকা মেডিকেলে মৃতদের মধ্যে দুজনের শরীর পুরোপুরি দগ্ধ হয়েছে।

এদিকে ফায়ার সার্ভিস বলছে, বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আগুনে দগ্ধ হওয়ার চেয়ে বেশিরভাগ মানুষ শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা অনুযায়ী, আগুন লাগা ভবনটির নাম গ্রিন কজি কটেজ। ভবনটির নিচ তলায় চায়ের চুমুক নামে একটি রেস্টুরেন্ট থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। পরে সারা ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। মাত্র এক মাস আগে ভবনটির নিচ তলায় এই রেস্টুরেন্টেটি যাত্রা শুরু করে।

মো. নাবিল নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, আমার বাসা শান্তিনগরে। প্রায় প্রতিদিন বেইলি রোডে আসা হয়। গতকাল রাতে আমি বেইলি রোডে পাঞ্জাবি কিনতে আসি। রাত ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে দেখি চায়ের চুমুক নামে রেস্টুরেন্টের এক কর্মচারী চুলায় যেন কী করছেন। পরে হঠাৎ দেখি গ্যাসের চুলায় আগুন লেগে যায়। তখন নিচে থাকা অনেকেই আগুন নেভাতে চেষ্টা করেন। কিন্তু আগুন নেভানো সম্ভব হয়নি। দ্রুত আগুন সারা ভবনে ছড়িয়ে পড়ে।

দুলাল হোসেন নামে আরেক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, প্রথমে এসে দেখি নিচে চায়ের চুমুকে আগুন লেগেছে। তখন রেস্টুরেন্টেটির কর্মচারীরা ও একজন পুলিশ সদস্য আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা কোনোভাবেই আগুন নেভাতে পারেননি। অল্প সময়ের মধ্যে আগুন ভবনটিতে ছড়িয়ে পড়ে৷ চায়ের চুমুক রেস্টুরেন্টেটি মাত্র এক মাস আগে যাত্রা শুরু করে।

আব্দুল্লাহ আল নাসের নামে আরেক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, আগুন লাগার পর অনেক মানুষ দুই তলায় অবস্থিত কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে আটকা পড়েন। তাদের মধ্যে কয়েকজন লাফিয়ে নিচে নামেন। বাকি কয়েকজন জীবন বাঁচাতে ছাদে চলে যান। তবে সিঁড়ি ছোট থাকায় অনেক মানুষ ছাদে যেতে পারেনি।

বনটিতে পর্যাপ্ত অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা ছিল না বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ভবনটিতে কাচ্চি ভাই, পিৎজা ইন, স্ট্রিট ওভেন, খানাসসহ বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এছাড়া ইলিয়েন, ক্লোজেস্ট ক্লাউডসহ বেশকিছু জনপ্রিয় পোশাকের দোকানও রয়েছে। ঘটনা তদন্তে এরই মধ্যে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে ফায়ার সার্ভিস।