০৫:২১ পূর্বাহ্ন, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিরোধিতার মধ্যে স্থায়ী হলো দ্রুত বিচার আইন

দ্রুত বিচার আইন স্থায়ী করতে জাতীয় সংসদে বিল পাস হয়েছে। মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন ‘আইন–শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) (সংশোধন) বিল পাসের জন্য সংসদে তোলেন। বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।

বিল পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ২০০২ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার যখন আইনটি করেছিলো তখন আপনারা (তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ) বলেছিলেন, এটি নিপীড়নমূলক ও কালো আইন। এই আইনটা রাজনৈতিক কারণ বা সরকার চাইলে যেকোনো কারণে নাগরিককে হয়রানি করতে পারে। সে আইনটা আপনারা রেখেছেন। আমি জানি না কেন রেখেছেন?

মুজিবুল হক বলেন, যখন আপনারা ক্ষমতায় থাকবেন না, স্থায়ীভাবে আইনটা করবেন, অন্য কেউ ক্ষমতায় আসবেন, তখন উদ্দেশ্যতো ভালো নাও থাকতে পারে। আপনারা কি এটা বলতে চান বিএনপি যে আইনটা এনেছিল তা ভালো ছিল? এটাই আজকে স্বীকার করুন।

তিনি বলেন, র‌্যাবের যখন গঠন করেছিলো আওয়ামী লীগসহ অনেক রাজনৈতিক দল বিরোধিতা করেছিল। সে র‌্যাব এখন টিকে আছে, তারা কাজ করতেছে। সরকারের কাছে অনুরোধ, যদি প্রয়োজন পড়ে এক/দুইবছর আইনের মেয়াদ বাড়ান। কিন্তু আইনটা স্থায়ী করবেন না, করলে ভবিষ্যতে একদিন আপনাদের এমন অবস্থা হবে, সেদিন আপসোস করবেন।

জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, আইনটি এনেছিলো বিএনপির সময়। ওই সময় আমরা ও আজকের সরকার আওয়ামী লীগ বিরোধিতা করেছিলাম। তারপরও আইনটি পাশ হয়েছিলো। আজকেও পাস হবে। আমার প্রশ্ন হলো যার জন্য গর্ত খুঁড়বেন, নিজেকেই সেই গর্তে পড়তে হয়। আজকে বিএনপি সেই গর্তে পড়েছে। এখন আওয়ামী লীগ আইনটিকে স্থায়ী করতে নিয়ে এসেছে। দিন এক রকম থাকবে না।

তিনি আইনটিকে স্থায়ী না করে পাঁচবছর/চারবছর মেয়াদ বড়ানোর প্রস্তাব করেন।

বিরোধী দলের সমালোচনার জবাবে আইনটি করার সময় বাংলাদেশে অরাজক পরিস্থিতি ছিলো না বলে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, সেসময় নানা ধরণের অপরাধ হতো, তাই হয়তো আইনটি তৎকালীন সরকার করেছিলো। আমি মনে করি আইনটি করার উদ্দেশ্য ছিলো, তাৎক্ষণিক বিচার যেন মানুষ পায়। দ্রুত সময়ের মধ্যে অপরাধীরা যাতে শাস্তি পায় সেটাই মূল উদ্দেশ্য ছিলো।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মাননীয় সংসদ সদস্যরা অনেক সময় আমাদের কাছে পাঠান যেন এ আইনের মাধ্যমে বিচার হয়। শুধু সংসদ সদস্য না, অনেকেই আইনটি ব্যবহার করার জন্য আমাদের কাছে সুপারিশ পাঠান। কারণ একটাই যাতে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে অপরাধীরা শাস্তি পায়। সংসদ সদস্যদের কেউ বলেনি আইনটি বাতিল করে দেন। কেউ বলেননি আইনটি যথাযোগ্য নয়। তারা সময় বৃদ্ধি করে দিয়ে আইনটি চালু থাকার কথা বলেছেন। আইনটি একই রকম আছে আমরা কোন রকম সংশোধন করি নাই। কাউকে উদ্দেশ্য করে বা ক্ষতি করার জন্য আইনটি হয়নি। কোনো রাজনৈতিক নেতা বলতে পারবেন না এ আইনের মাধ্যমে শাস্তি হয়েছে।

সংশোধনীর আলোচনায় মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী স্ববিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন আইনটি ভালো। তাহলে বিএনপি যখন আইনটি করেছিলো আপনারা তার বিরোধিতা করেছিলেন কেন? এখন ভালো হয়ে গেল! আপনি বলেছিলেন, অপপ্রয়োগ হয় কি না- যারা আন্দোলন করতেছে তারা বলতে পারবে। আমরা যদি কখনো আপনাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাই তখন বলতে পারবো অপপ্রয়োগ হচ্ছে কি না।

পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, আইনটি কখন আনা হয়েছিলো তা মুখ্য উদ্দেশ্য নয়। শান্তির পরিবেশ তৈরির জন্য আইনটি স্থায়ী করা হচ্ছে।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ২০০২ সালে যখন দ্রুত বিচার আইন প্রথম সংসদে পাস হয়, সে সময় এ আইনের মেয়াদ ছিলো দুই বছর। পরে কয়েকবার এর মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালে এর মেয়াদ পাঁচ বছর বাড়ানো হয়। যা আগামী ৯ এপ্রিল শেষ হবে।

যখন দ্রুত বিচার আইন করা হয় তখন বিরোধী দলে থাকা আওয়ামী লীগ এর সমালোচনা করেছিলো। এরপর বিভিন্ন সময়ে এ আইনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। আওয়ামী লীগ সরকারও আইনটি রেখে দেয়।

এর মধ্যে আইনটির মেয়াদ না বাড়িয়ে তা স্থায়ী করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। গত ২৯ জানুয়ারি মন্ত্রিসভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর এ সংক্রান্ত বিল সংসদে তোলা হলো।

বিলে আইনটি স্থায়ী করা ছাড়া অন্য কোনো সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়নি। অর্থাৎ আইনটির বিদ্যমান ধারাগুলো একই থাকবে।

বিরোধিতার মধ্যে স্থায়ী হলো দ্রুত বিচার আইন

আপডেট : ০৭:৪১:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ মার্চ ২০২৪

দ্রুত বিচার আইন স্থায়ী করতে জাতীয় সংসদে বিল পাস হয়েছে। মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন ‘আইন–শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) (সংশোধন) বিল পাসের জন্য সংসদে তোলেন। বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।

বিল পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ২০০২ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার যখন আইনটি করেছিলো তখন আপনারা (তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ) বলেছিলেন, এটি নিপীড়নমূলক ও কালো আইন। এই আইনটা রাজনৈতিক কারণ বা সরকার চাইলে যেকোনো কারণে নাগরিককে হয়রানি করতে পারে। সে আইনটা আপনারা রেখেছেন। আমি জানি না কেন রেখেছেন?

মুজিবুল হক বলেন, যখন আপনারা ক্ষমতায় থাকবেন না, স্থায়ীভাবে আইনটা করবেন, অন্য কেউ ক্ষমতায় আসবেন, তখন উদ্দেশ্যতো ভালো নাও থাকতে পারে। আপনারা কি এটা বলতে চান বিএনপি যে আইনটা এনেছিল তা ভালো ছিল? এটাই আজকে স্বীকার করুন।

তিনি বলেন, র‌্যাবের যখন গঠন করেছিলো আওয়ামী লীগসহ অনেক রাজনৈতিক দল বিরোধিতা করেছিল। সে র‌্যাব এখন টিকে আছে, তারা কাজ করতেছে। সরকারের কাছে অনুরোধ, যদি প্রয়োজন পড়ে এক/দুইবছর আইনের মেয়াদ বাড়ান। কিন্তু আইনটা স্থায়ী করবেন না, করলে ভবিষ্যতে একদিন আপনাদের এমন অবস্থা হবে, সেদিন আপসোস করবেন।

জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, আইনটি এনেছিলো বিএনপির সময়। ওই সময় আমরা ও আজকের সরকার আওয়ামী লীগ বিরোধিতা করেছিলাম। তারপরও আইনটি পাশ হয়েছিলো। আজকেও পাস হবে। আমার প্রশ্ন হলো যার জন্য গর্ত খুঁড়বেন, নিজেকেই সেই গর্তে পড়তে হয়। আজকে বিএনপি সেই গর্তে পড়েছে। এখন আওয়ামী লীগ আইনটিকে স্থায়ী করতে নিয়ে এসেছে। দিন এক রকম থাকবে না।

তিনি আইনটিকে স্থায়ী না করে পাঁচবছর/চারবছর মেয়াদ বড়ানোর প্রস্তাব করেন।

বিরোধী দলের সমালোচনার জবাবে আইনটি করার সময় বাংলাদেশে অরাজক পরিস্থিতি ছিলো না বলে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, সেসময় নানা ধরণের অপরাধ হতো, তাই হয়তো আইনটি তৎকালীন সরকার করেছিলো। আমি মনে করি আইনটি করার উদ্দেশ্য ছিলো, তাৎক্ষণিক বিচার যেন মানুষ পায়। দ্রুত সময়ের মধ্যে অপরাধীরা যাতে শাস্তি পায় সেটাই মূল উদ্দেশ্য ছিলো।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মাননীয় সংসদ সদস্যরা অনেক সময় আমাদের কাছে পাঠান যেন এ আইনের মাধ্যমে বিচার হয়। শুধু সংসদ সদস্য না, অনেকেই আইনটি ব্যবহার করার জন্য আমাদের কাছে সুপারিশ পাঠান। কারণ একটাই যাতে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে অপরাধীরা শাস্তি পায়। সংসদ সদস্যদের কেউ বলেনি আইনটি বাতিল করে দেন। কেউ বলেননি আইনটি যথাযোগ্য নয়। তারা সময় বৃদ্ধি করে দিয়ে আইনটি চালু থাকার কথা বলেছেন। আইনটি একই রকম আছে আমরা কোন রকম সংশোধন করি নাই। কাউকে উদ্দেশ্য করে বা ক্ষতি করার জন্য আইনটি হয়নি। কোনো রাজনৈতিক নেতা বলতে পারবেন না এ আইনের মাধ্যমে শাস্তি হয়েছে।

সংশোধনীর আলোচনায় মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী স্ববিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন আইনটি ভালো। তাহলে বিএনপি যখন আইনটি করেছিলো আপনারা তার বিরোধিতা করেছিলেন কেন? এখন ভালো হয়ে গেল! আপনি বলেছিলেন, অপপ্রয়োগ হয় কি না- যারা আন্দোলন করতেছে তারা বলতে পারবে। আমরা যদি কখনো আপনাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাই তখন বলতে পারবো অপপ্রয়োগ হচ্ছে কি না।

পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, আইনটি কখন আনা হয়েছিলো তা মুখ্য উদ্দেশ্য নয়। শান্তির পরিবেশ তৈরির জন্য আইনটি স্থায়ী করা হচ্ছে।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ২০০২ সালে যখন দ্রুত বিচার আইন প্রথম সংসদে পাস হয়, সে সময় এ আইনের মেয়াদ ছিলো দুই বছর। পরে কয়েকবার এর মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালে এর মেয়াদ পাঁচ বছর বাড়ানো হয়। যা আগামী ৯ এপ্রিল শেষ হবে।

যখন দ্রুত বিচার আইন করা হয় তখন বিরোধী দলে থাকা আওয়ামী লীগ এর সমালোচনা করেছিলো। এরপর বিভিন্ন সময়ে এ আইনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। আওয়ামী লীগ সরকারও আইনটি রেখে দেয়।

এর মধ্যে আইনটির মেয়াদ না বাড়িয়ে তা স্থায়ী করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। গত ২৯ জানুয়ারি মন্ত্রিসভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর এ সংক্রান্ত বিল সংসদে তোলা হলো।

বিলে আইনটি স্থায়ী করা ছাড়া অন্য কোনো সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়নি। অর্থাৎ আইনটির বিদ্যমান ধারাগুলো একই থাকবে।