০৯:৩৪ পূর্বাহ্ন, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘মুক্তিপণ না পেলে জিম্মিদের মেরে ফেলা হবে’

  • অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট : ০১:১৩:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ মার্চ ২০২৪
  • ৭০ দেখেছেন

ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশের পতাকাবাহী ‘এমভি আবদুল্লাহ’ নামের জাহাজটি সোমালিয়া উপকূলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশি এই কার্গো ক্যারিয়ারটি উদ্ধারে যেতে পারে ভারতীয় নৌবাহিনী। এমনটাই পরামর্শ দিয়েছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক মার্টিন কেলি।

ভারতীয় মহাসাগরের যে অঞ্চলে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজটিকে জিম্মি করা হয়েছে সেখানকার আশপাশে ভারতীয় নৌবাহিনীর শক্তিশালী উপস্থিতি আছে। আর এ কারণে, দেশটির নৌবাহিনী ‘এমভি আবদুল্লাহ’ উদ্ধারে হস্তক্ষেপ করতে পারে বলে পরামর্শ দিয়েছেন যুক্তরাজ্যভিত্তিক সামুদ্রিক নিরাপত্তা বিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইওএস রিস্ক গ্রুপের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক মার্টিন কেলি। সূত্র: ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস

কেলি বলেছেন, তার জানা মতে, গত ৩ মার্চ সোমালিয়া উপকূল থেকে একটি জলদস্যু বিরোধী গোষ্ঠী গভীর সমুদ্রের উদ্দেশ্য রওনা হয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, ভারত মহাসাগরের যে অঞ্চলে এই হামলা সংঘটিত হয়েছে সেই এলাকায় ভারতীয় নৌবাহিনীর শক্তিশালী উপস্থিতি আছে।

ইতোমধ্যে জিম্মি জাহাজের ২৩ নাবিকের পরিচয় জানা গেছে। বাঁচার আকুতি জানিয়ে গোপন অডিও বার্তা দিয়েছেন তাদের কেউ কেউ। জিম্মি জাহাজটির প্রধান কর্মকর্তা (চিফ অফিসার) মো. আতিক উল্লাহ খান গতকাল মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বাংলাদেশ সময় ইফতারের পরপর মুঠোফোনে তার স্ত্রীর কাছে একটি অডিও বার্তা পাঠিয়েছেন।

অডিও বার্তায় আতিক জানিয়েছেন, ‘এই বার্তাটা সবাইকে পৌঁছে দিয়ো। আমাদের সবার কাছ থেকে মোবাইল ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছে। ফাইনাল কথা হচ্ছে, তাদের (জলদস্যু) যদি টাকা (মুক্তিপণের অর্থ) না দেয়া হয়, তবে আমাদের একজন একজন করে মেরে ফেলতে বলা হয়েছে। তাদের যত তাড়াতাড়ি টাকা দেবে, তত তাড়াতাড়ি ছাড়বে বলেছে। এই বার্তাটা সবদিকে পৌঁছে দিয়ো।’

মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রামের নন্দনকাননে আতিক উল্লাহ খানের বাসায় গেলে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো তার বার্তাটি স্বজনেরা সাংবাদিকদের দেখিয়েছেন।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টার দিকে জলদস্যুরা জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। জাহাজটি মোজাম্বিক থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাচ্ছিল। জলদস্যুদের কবলে পড়া চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের এই জাহাজটি পরিচালনা করছে গ্রুপটির সহযোগী সংস্থা এস আর শিপিং লিমিটেড। জাহাজে আতিক উল্লাহসহ ২৩ বাংলাদেশি নাবিক রয়েছেন। তারা জিম্মি হওয়ার খবর পাওয়ার পর থেকে প্রতিটি মুহূর্ত উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় পার করছেন নাবিকদের স্বজনেরা।

ভারত মহাসাগরে জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়েই জলদস্যুরা সেটিকে সোমালিয়ার উপকূলের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। বর্তমানে জাহাজটি সোমালিয়ার বন্দরে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন জাহাজটির এক নাবিক।

এদিকে, পণ্যবাহী জাহাজটির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান কবির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। মঙ্গলবার (মার্চ ১২) দুপুর ১টার দিকে জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়ার খবর জানতে পারে বাংলাদেশের অন্যতম শিল্পগোষ্ঠীটির কর্তৃপক্ষ।

আফ্রিকার মোজাম্বিক থেকে কয়লাবোঝাই জাহাজটির গন্তব্য ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে। ওই জাহাজের ক্রু লিস্ট থেকে জানা যায়, এম ভি আবদুল্লাহর মাস্টার বা ক্যাপ্টেন হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের রাশেদ মোহাম্মদ আব্দুর, চিফ অফিসার হিসেবে রয়েছেন চট্টগ্রামের খান মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ এবং সেকেন্ড অফিসার হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের চৌধুরী মাজহারুল ইসলাম। সেই সঙ্গে থার্ড অফিসার হিসেবে রয়েছেন ফরিদপুরের ইসলাম মো. তারেকুল, ডেক ক্যাডেট হিসেবে আছেন টাঙ্গাইলের হোসাইন মো. সাব্বির।

বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে এমভি আবদুল্লাহ সোমালীয় জলদস্যুদের কবলে পড়ে। এরপর অন্তত ১০০ জলদস্যু জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। বর্তমানে ২৩ নাবিককে কেবিনে রাখা হয়েছে। ঘটনাটি জানার পর নাবিকদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে বলে জানান ওই শীর্ষ কর্মকর্তা। তবে যোগাযোগ না করেই কীভাবে নাবিকদের অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন সে প্রশ্ন এড়িয়ে যান তিনি।

এর আগে, ২০১০ সালের ডিসেম্বরে আরব সাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল বাংলাদেশি জাহাজ ‘জাহান মণি’। নিকেলভর্তি ওই জাহাজের ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীকে জিম্মি করা হয়েছিল।

দীর্ঘ চেষ্টার পর ১০০ দিনের মাথায় জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পান তারা। পরে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। মুক্তিপণ বাবদ জলদস্যুদের অনেক টাকা দিতে হয়েছিলে বলে জানায় কেএসআরএম কর্তৃপক্ষ।

‘মুক্তিপণ না পেলে জিম্মিদের মেরে ফেলা হবে’

আপডেট : ০১:১৩:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ মার্চ ২০২৪

ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশের পতাকাবাহী ‘এমভি আবদুল্লাহ’ নামের জাহাজটি সোমালিয়া উপকূলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশি এই কার্গো ক্যারিয়ারটি উদ্ধারে যেতে পারে ভারতীয় নৌবাহিনী। এমনটাই পরামর্শ দিয়েছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক মার্টিন কেলি।

ভারতীয় মহাসাগরের যে অঞ্চলে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজটিকে জিম্মি করা হয়েছে সেখানকার আশপাশে ভারতীয় নৌবাহিনীর শক্তিশালী উপস্থিতি আছে। আর এ কারণে, দেশটির নৌবাহিনী ‘এমভি আবদুল্লাহ’ উদ্ধারে হস্তক্ষেপ করতে পারে বলে পরামর্শ দিয়েছেন যুক্তরাজ্যভিত্তিক সামুদ্রিক নিরাপত্তা বিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইওএস রিস্ক গ্রুপের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক মার্টিন কেলি। সূত্র: ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস

কেলি বলেছেন, তার জানা মতে, গত ৩ মার্চ সোমালিয়া উপকূল থেকে একটি জলদস্যু বিরোধী গোষ্ঠী গভীর সমুদ্রের উদ্দেশ্য রওনা হয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, ভারত মহাসাগরের যে অঞ্চলে এই হামলা সংঘটিত হয়েছে সেই এলাকায় ভারতীয় নৌবাহিনীর শক্তিশালী উপস্থিতি আছে।

ইতোমধ্যে জিম্মি জাহাজের ২৩ নাবিকের পরিচয় জানা গেছে। বাঁচার আকুতি জানিয়ে গোপন অডিও বার্তা দিয়েছেন তাদের কেউ কেউ। জিম্মি জাহাজটির প্রধান কর্মকর্তা (চিফ অফিসার) মো. আতিক উল্লাহ খান গতকাল মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বাংলাদেশ সময় ইফতারের পরপর মুঠোফোনে তার স্ত্রীর কাছে একটি অডিও বার্তা পাঠিয়েছেন।

অডিও বার্তায় আতিক জানিয়েছেন, ‘এই বার্তাটা সবাইকে পৌঁছে দিয়ো। আমাদের সবার কাছ থেকে মোবাইল ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছে। ফাইনাল কথা হচ্ছে, তাদের (জলদস্যু) যদি টাকা (মুক্তিপণের অর্থ) না দেয়া হয়, তবে আমাদের একজন একজন করে মেরে ফেলতে বলা হয়েছে। তাদের যত তাড়াতাড়ি টাকা দেবে, তত তাড়াতাড়ি ছাড়বে বলেছে। এই বার্তাটা সবদিকে পৌঁছে দিয়ো।’

মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রামের নন্দনকাননে আতিক উল্লাহ খানের বাসায় গেলে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো তার বার্তাটি স্বজনেরা সাংবাদিকদের দেখিয়েছেন।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টার দিকে জলদস্যুরা জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। জাহাজটি মোজাম্বিক থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাচ্ছিল। জলদস্যুদের কবলে পড়া চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের এই জাহাজটি পরিচালনা করছে গ্রুপটির সহযোগী সংস্থা এস আর শিপিং লিমিটেড। জাহাজে আতিক উল্লাহসহ ২৩ বাংলাদেশি নাবিক রয়েছেন। তারা জিম্মি হওয়ার খবর পাওয়ার পর থেকে প্রতিটি মুহূর্ত উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় পার করছেন নাবিকদের স্বজনেরা।

ভারত মহাসাগরে জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়েই জলদস্যুরা সেটিকে সোমালিয়ার উপকূলের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। বর্তমানে জাহাজটি সোমালিয়ার বন্দরে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন জাহাজটির এক নাবিক।

এদিকে, পণ্যবাহী জাহাজটির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান কবির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। মঙ্গলবার (মার্চ ১২) দুপুর ১টার দিকে জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়ার খবর জানতে পারে বাংলাদেশের অন্যতম শিল্পগোষ্ঠীটির কর্তৃপক্ষ।

আফ্রিকার মোজাম্বিক থেকে কয়লাবোঝাই জাহাজটির গন্তব্য ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে। ওই জাহাজের ক্রু লিস্ট থেকে জানা যায়, এম ভি আবদুল্লাহর মাস্টার বা ক্যাপ্টেন হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের রাশেদ মোহাম্মদ আব্দুর, চিফ অফিসার হিসেবে রয়েছেন চট্টগ্রামের খান মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ এবং সেকেন্ড অফিসার হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের চৌধুরী মাজহারুল ইসলাম। সেই সঙ্গে থার্ড অফিসার হিসেবে রয়েছেন ফরিদপুরের ইসলাম মো. তারেকুল, ডেক ক্যাডেট হিসেবে আছেন টাঙ্গাইলের হোসাইন মো. সাব্বির।

বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে এমভি আবদুল্লাহ সোমালীয় জলদস্যুদের কবলে পড়ে। এরপর অন্তত ১০০ জলদস্যু জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। বর্তমানে ২৩ নাবিককে কেবিনে রাখা হয়েছে। ঘটনাটি জানার পর নাবিকদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে বলে জানান ওই শীর্ষ কর্মকর্তা। তবে যোগাযোগ না করেই কীভাবে নাবিকদের অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন সে প্রশ্ন এড়িয়ে যান তিনি।

এর আগে, ২০১০ সালের ডিসেম্বরে আরব সাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল বাংলাদেশি জাহাজ ‘জাহান মণি’। নিকেলভর্তি ওই জাহাজের ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীকে জিম্মি করা হয়েছিল।

দীর্ঘ চেষ্টার পর ১০০ দিনের মাথায় জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পান তারা। পরে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। মুক্তিপণ বাবদ জলদস্যুদের অনেক টাকা দিতে হয়েছিলে বলে জানায় কেএসআরএম কর্তৃপক্ষ।