মাত্র ২৫ বছর বয়সেই পরপারে পাড়ি জমালেন অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় নারী দলের ফুটবলার রাজিয়া সুলতানা। সন্তান প্রসবের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে স্ট্রোক করে মারা যান তিনি। বুধবার (১৩ মার্চ) দিবাগত রাতে ছেলে সন্তান জন্ম দেয়ার পর নিজ বাড়িতে মারা যান এই ‘রাইট উইংগার’।
রাজিয়া সুলতানা লক্ষ্মীনাথপুর গ্রামের মৃত নুর আলী সরদারের মেয়ে। তার মা মোছাম্মাত আবিরুন্নেসা জানান, রাজিয়া ছেলে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মাতৃমৃত্যুর দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে।
রাজিয়া সুলতানার পরিবারের বরাত দিয়ে কালিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদ মেহেদি জানান, ফুটবলার রাজিয়া দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। বুধবার (১৩ মার্চ) রাত ১০টার দিকে তিনি একটি পুত্র সন্তান প্রসব করেন। পরে রাত ৩টায় হঠাৎ রাজিয়া স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। পরবর্তীতে কালিগঞ্জ হাসপাতালে নেয়ার পথে ভোর চারটার দিকে তার মৃত্যু হয়।
এদিকে, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে রাজিয়ার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার স্বামী ইয়াম রহমান। এই মৃত্যুর জন্য তার শ্বশুরবাড়ির অবহেলাকে দায়ী করলেন তিনি। ইয়াম বলেন, আমি গাজীপুরে চাকরি করি। ইফতারির সময় বাসায় গিয়ে ফোন দিয়েছিলাম। কিন্তু ফোনটা ওর ছোট ভাই রিসিভ করে বলে ব্যস্ত আছি। কিন্তু কেউ আমাকে জানায়নি যে ওর পেইন (প্রসব ব্যথা) উঠেছে। আসলে প্রচুর ব্লাড ভেঙেছে (রক্তক্ষরণ)। কিন্তু কেউ বিষয়টা গুরুত্ব দেয়নি।
স্বামী ইয়াম আরও বলেন, ওরা আমাকে রাত ১১টার সময় জানায় ছেলে ও মা সুস্থ আছে। কিন্তু পরে ওর প্রচুর রক্ত ঝরেছে। অচেতন হয়ে ছিল অনেক সময়। পরে ভোরবেলা হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা গেছে।
রাজিয়ার মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ সাতক্ষীরার ক্রীড়াঙ্গন। শোক জানিয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন, নাসরিন স্পোর্টিংয়ের কোচ গোলাম রায়হান, জাতীয় দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন, সানজিদা আক্তার।
জানা গেছে, ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত রাজিয়া খেলেছেন জাতীয় ও বয়সভিত্তিক বিভিন্ন টুর্নামেন্টে। ২০১৭ সালে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্টের চূড়ান্ত পর্বে খেলেছেন। ভুটানে ২০১৮ সালের অনূর্ধ্ব-১৮ সাফে ছিলেন চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। এছাড়া ২০১৯ সালে নেপালে অনুষ্ঠিত সাফে জাতীয় দলে সাবিনা খাতুনদের সঙ্গে খেলেছেন রাজিয়া। নারী ফুটবল লিগে খেলেছেন নাসরিন স্পোর্টিং ও এএফসি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জার্সিতে।