এবার গাজায় রমজানের চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। যুদ্ধের দামামায়, পরিবারকে সাথে নিয়ে ইফতারের চিরচেনা আনন্দ এখন গাজাবাসীর জন্য শুধুই স্মৃতি। রোজার প্রথম দিন মায়ের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর পাঠানো ভয়েসমেইল শুনে শোকে ভেঙে পড়েন ইব্রাহিম হাসৌনা, যিনি ইসরায়েলি হামলায় পুরো পরিবারকে হারিয়েছেন।
রমজানের প্রথম দিন গাজার একটি কবরস্থানে প্রিয়জনদের কবর দেখতে আসেন ইব্রাহিম হাসৌনা। গাজায় ইসরায়েলের হামলায় নিহত হন মা- বাবাসহ তাঁর পরিবারের সবাই। মারা যাওয়ার আগে একটি ভয়েসমেইল পাঠিয়েছিলেন তাঁর মা। মেইলে সন্তানের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন তিনি। সেই বার্তাই বারবার শুনেছিলেন ইব্রাহিম।
এর আগে প্রতি রমজানে বাবা, ভাইদের নিয়ে একসাথে মায়ের হাতের তৈরি ইফতার খেলেও, এবার একাই ইফতার করলেন ইব্রাহিম।
ইব্রাহিম হাসৌনা বলেন, ‘আমি মনে করতে চাইনি রমজান শুরু হয়েছে। নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করেছি। আমি পুরো পরিবারকে হারিয়েছি। এমন সময়ে মানুষ তাঁর মায়ের তৈরি খাবারের কথা মনে করে। মায়ের রান্নার চেয়ে পৃথিবীতে মজার আর কোন খাবার নেই। আবার যদি পরিবারকে সাথে নিয়ে সময় কাটাতে পারতাম!’
ফোনে মায়ের কণ্ঠ শুনে, ইব্রাহিম মনে করছিলেন বাইরে গেলে তাঁকে নিয়ে কতটা উদ্বিগ্ন থাকতেন মা। ওই ভয়েসমেইলে তাঁর মা বলেছিলেন, ‘ইব্রাহিম আমার ভালবাসা, আমি তোমার খোঁজ জানতে চাই। গতকাল থেকে তোমাকে ফোন করছি, কিন্তু তুমি কোনও উত্তর দাওনি। কি সমস্যা?’
মায়ের এই কথাগুলো এখন শুধুই স্মৃতি, আর কখনই মা ফোন দিবেন না ইব্রাহিমকে। পরিবার হারা গাজার এ বাসিন্দা বলেন, ‘আমি যদি এক, দুই, বা তিন ঘণ্টার জন্যও কোথাও চলে যাই তবেই সে ফোন করা শুরু করতেন। কেউ এখন আর আমার কথা জিজ্ঞেস করবে না, আমাকে আর সান্ত্বনা দেবে না, আমার খোঁজ নেবে না। আমার মা আমাকে নিয়ে যেভাবে উদ্বিগ্ন ছিলেন সেভাবে আর কেউ আমাকে নিয়ে চিন্তা করবে না। আমি আর কিছু শুনতে চাই না, শুধু তাঁর কণ্ঠ শুনতেই চাই একবার।’
ইব্রাহিমের মতো এমন স্বজনছাড়া রমজান কাটছে অসংখ্য গাজাবাসীর। একদিকে প্রিয়জন হারানো বেদনা, অন্যদিকে তীব্র খাদ্য সংকটে গাজাবাসীর জীবন দিন দিন অসহনীয় হয়ে উঠছে।
গাজায় ৫ মাসের বেশি সময়ে ইসরায়েলি হামলায় ৩১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।