Dhaka ১০:০৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইঁদুর দমনে হেলিকপ্টার ব্যবহার

২০০ বছর আগে অ্যান্টার্কটিকার পার্শ্ববর্তী একটি জনমানবহীন দ্বীপে ছাড়া হয় ইঁদুর। এই প্রাণীটিই এখন দ্বীপটির দুর্ভাগ্যে পরিণত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে সেখানে ইঁদুরের প্রজনন মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে। খাবার সংকটে জীবিত সামুদ্রিক পাখি খাচ্ছে ইঁদুরগুলো। জীববৈচিত্র্যে ব্যাপক ক্ষতি করছে তারা। খবর এপির।

প্রতিবেদনে মার্কিন সংবাদ সংস্থাটি জানিয়েছে, প্রত্যন্ত দ্বীপটির নাম ম্যারিয়ন। ১১৫ স্কয়ার মাইল বা ২৯৭ কিলোমিটারের দ্বীপটির প্রত্যেক অংশে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে শত শত টন বিষ ব্যবহারের কথা ভাবছে সংরক্ষণবাদীরা। ইঁদুর ঠেকাতেই তাদের এমন উদ্যোগের কথা চিন্তা করা হচ্ছে। তবে, একটিও গর্ভবতী ইঁদুর বেঁচে গেলে তাদের এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হিসেবে গণ্য হবে।

ইঁদুর দমাতে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘দ্য মাউস ফ্রি ম্যারিয়ন প্রজেক্ট’। একটি পরিমিত পর্যায়ে দ্বীপটির ভূখণ্ডে বিষ প্রয়োগ করা। তবে, বিষয়টি বলতে যতটুকু সহজ মনে হয় ততটাই কঠিন। জনবসতিহীন দক্ষিণ আফ্রিকান অঞ্চল ও বৃহত্তর দক্ষিণ মহাসাগরের বাস্তুসংস্থান জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হয়। ইঁদুর নির্মূলের পদক্ষেপটি সফল হলে এটি হবে তার ধরণের সবচেয়ে বড় অর্জন।

নির্জন দ্বীপটিতে ৩০ প্রকারের পাখির আবাসস্থল। এই ৩০ প্রজাতির পাখির বেশিরভাগই এই অঞ্চলে থাকে। এ ছাড়া দ্বীপটিতে বিরল প্রজাতির অ্যালবাট্রোজ থাকে। পাশাপাশি ১০ ফুট ডানা থাকা উইং স্প্যানের আবাসস্থল এই দ্বীপটি।

১৮০০ দশকের শুরুতে জাহাজে করে ম্যারিয়ন দ্বীপে বাসাবাড়িতে থাকা ইঁদুরের আগমন ঘটে। এর মাধ্যমে জনমানবহীন দ্বীপটিতে প্রথম স্তন্যপায়ী শিকারি হিসেবে আবির্ভূত হয় ইঁদুরের।

দ্য মাইস ফ্রি ম্যারিয়ন প্রজেক্টের ম্যানেজার ড. অ্যন্টন ওলফার্ড বলেন, ‘বিগত কয়েক দশকে ইঁদুরের কারণে দ্বীপটিতে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইঁদুরের প্রজনন ব্যাপকহারে হয়েছে। এর মূলে ছিল তাপমাত্রা বৃদ্ধি। দ্বীপটি এক সময় শীত প্রধান হলেও জলবায়ু পরিবর্তনে সেখানে তাপমাত্রা বেড়েছে। এতে করে প্রাণীটির প্রাদুর্ভাব বেড়েছে।’

ওলফার্ড বলেন, ‘ইঁদুর সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে সফল প্রাণীদের মধ্যে একটি। বিশ্বের সবখানেই তাদের অস্তিত্ব রয়েছে। ম্যারিয়ন দ্বীপে তাদের প্রজনন মৌসুমের সময় বেড়েছে। এতেই সেখানে ইঁদুর ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।’

ইঁদুর প্রচুর সন্তান জন্ম দিতে পারে। গরম আবহাওয়ায় প্রজনন আরও বেশি হয়। জন্মের ৬০ দিন বয়স থেকেই ইঁদুর প্রজনন দিতে সক্ষম। এক জুটি ইঁদুর সাধারণত ১২ মাসে এক হাজার ২৫০ টি নতুন ইঁদুরের জন্ম দিতে পারে।

অনুমান করা হচ্ছে, ম্যারিয়ন দ্বীপে কয়েক লাখ ইঁদুর রয়েছে। ক্ষুধা মেটানোয় অমেরুদণ্ডী প্রাণী খাচ্ছে তারা। এমনকি, জীবিত পাখি ও তাদের বাচ্চাও খাচ্ছে তারা।

ইঁদুরের পাখি খাওয়ার বিষয়টি বিশ্বে বিরল। বিশ্বের কয়েকটি দ্বীপে বিষয়টি দেখা গেছে। ম্যারিয়ন দ্বীপে ইঁদরের পাখি খাওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে ২০০৩ সালে।

ওলফার্ড বলেন, ‘সামুদ্রিক পাখিগুলোকে ইঁদুরের খাবারে পরিণত করা উদ্বেগজনকভাবে হারে বেড়েছে। নিজেদের আবাসস্থলে অচেনা শিকারিদের আক্রমণের বিষয়ে অবগত নয় পাখিরা। এ জন্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় মনোযোগী নয় তারা।’ কখনও কখনও ইঁদুরের ঝাঁক পাখিগুলো আক্রমণ করে বলেও জানান তিনি।

সংরক্ষণবাদীদের অনুমান, এমনটি চলতে থাকলে আগামী ৫০ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে দ্বীপটি থেকে ১৯ প্রজাতির পাখি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

ইঁদুর দমনে হেলিকপ্টার ব্যবহার

আপডেট : ০২:৫২:২৫ অপরাহ্ন, রোববার, ১৭ মার্চ ২০২৪

২০০ বছর আগে অ্যান্টার্কটিকার পার্শ্ববর্তী একটি জনমানবহীন দ্বীপে ছাড়া হয় ইঁদুর। এই প্রাণীটিই এখন দ্বীপটির দুর্ভাগ্যে পরিণত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে সেখানে ইঁদুরের প্রজনন মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে। খাবার সংকটে জীবিত সামুদ্রিক পাখি খাচ্ছে ইঁদুরগুলো। জীববৈচিত্র্যে ব্যাপক ক্ষতি করছে তারা। খবর এপির।

প্রতিবেদনে মার্কিন সংবাদ সংস্থাটি জানিয়েছে, প্রত্যন্ত দ্বীপটির নাম ম্যারিয়ন। ১১৫ স্কয়ার মাইল বা ২৯৭ কিলোমিটারের দ্বীপটির প্রত্যেক অংশে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে শত শত টন বিষ ব্যবহারের কথা ভাবছে সংরক্ষণবাদীরা। ইঁদুর ঠেকাতেই তাদের এমন উদ্যোগের কথা চিন্তা করা হচ্ছে। তবে, একটিও গর্ভবতী ইঁদুর বেঁচে গেলে তাদের এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হিসেবে গণ্য হবে।

ইঁদুর দমাতে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘দ্য মাউস ফ্রি ম্যারিয়ন প্রজেক্ট’। একটি পরিমিত পর্যায়ে দ্বীপটির ভূখণ্ডে বিষ প্রয়োগ করা। তবে, বিষয়টি বলতে যতটুকু সহজ মনে হয় ততটাই কঠিন। জনবসতিহীন দক্ষিণ আফ্রিকান অঞ্চল ও বৃহত্তর দক্ষিণ মহাসাগরের বাস্তুসংস্থান জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হয়। ইঁদুর নির্মূলের পদক্ষেপটি সফল হলে এটি হবে তার ধরণের সবচেয়ে বড় অর্জন।

নির্জন দ্বীপটিতে ৩০ প্রকারের পাখির আবাসস্থল। এই ৩০ প্রজাতির পাখির বেশিরভাগই এই অঞ্চলে থাকে। এ ছাড়া দ্বীপটিতে বিরল প্রজাতির অ্যালবাট্রোজ থাকে। পাশাপাশি ১০ ফুট ডানা থাকা উইং স্প্যানের আবাসস্থল এই দ্বীপটি।

১৮০০ দশকের শুরুতে জাহাজে করে ম্যারিয়ন দ্বীপে বাসাবাড়িতে থাকা ইঁদুরের আগমন ঘটে। এর মাধ্যমে জনমানবহীন দ্বীপটিতে প্রথম স্তন্যপায়ী শিকারি হিসেবে আবির্ভূত হয় ইঁদুরের।

দ্য মাইস ফ্রি ম্যারিয়ন প্রজেক্টের ম্যানেজার ড. অ্যন্টন ওলফার্ড বলেন, ‘বিগত কয়েক দশকে ইঁদুরের কারণে দ্বীপটিতে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইঁদুরের প্রজনন ব্যাপকহারে হয়েছে। এর মূলে ছিল তাপমাত্রা বৃদ্ধি। দ্বীপটি এক সময় শীত প্রধান হলেও জলবায়ু পরিবর্তনে সেখানে তাপমাত্রা বেড়েছে। এতে করে প্রাণীটির প্রাদুর্ভাব বেড়েছে।’

ওলফার্ড বলেন, ‘ইঁদুর সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে সফল প্রাণীদের মধ্যে একটি। বিশ্বের সবখানেই তাদের অস্তিত্ব রয়েছে। ম্যারিয়ন দ্বীপে তাদের প্রজনন মৌসুমের সময় বেড়েছে। এতেই সেখানে ইঁদুর ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।’

ইঁদুর প্রচুর সন্তান জন্ম দিতে পারে। গরম আবহাওয়ায় প্রজনন আরও বেশি হয়। জন্মের ৬০ দিন বয়স থেকেই ইঁদুর প্রজনন দিতে সক্ষম। এক জুটি ইঁদুর সাধারণত ১২ মাসে এক হাজার ২৫০ টি নতুন ইঁদুরের জন্ম দিতে পারে।

অনুমান করা হচ্ছে, ম্যারিয়ন দ্বীপে কয়েক লাখ ইঁদুর রয়েছে। ক্ষুধা মেটানোয় অমেরুদণ্ডী প্রাণী খাচ্ছে তারা। এমনকি, জীবিত পাখি ও তাদের বাচ্চাও খাচ্ছে তারা।

ইঁদুরের পাখি খাওয়ার বিষয়টি বিশ্বে বিরল। বিশ্বের কয়েকটি দ্বীপে বিষয়টি দেখা গেছে। ম্যারিয়ন দ্বীপে ইঁদরের পাখি খাওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে ২০০৩ সালে।

ওলফার্ড বলেন, ‘সামুদ্রিক পাখিগুলোকে ইঁদুরের খাবারে পরিণত করা উদ্বেগজনকভাবে হারে বেড়েছে। নিজেদের আবাসস্থলে অচেনা শিকারিদের আক্রমণের বিষয়ে অবগত নয় পাখিরা। এ জন্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় মনোযোগী নয় তারা।’ কখনও কখনও ইঁদুরের ঝাঁক পাখিগুলো আক্রমণ করে বলেও জানান তিনি।

সংরক্ষণবাদীদের অনুমান, এমনটি চলতে থাকলে আগামী ৫০ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে দ্বীপটি থেকে ১৯ প্রজাতির পাখি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।