০৯:২৬ পূর্বাহ্ন, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের পথপ্রদর্শক বঙ্গবন্ধু

শত বছর আগে, যখন মুজিবের জন্ম হয়, তখন সুসময় ছিলো না। পরাধীন ভারতীয় উপমহাদেশে লাগামহীন রাজত্ব করছিলো, হাজার মাইল দূর থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসা ব্রিটিশ বেনিয়ারা। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের আজকের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি পরিবার থেকে রাজনীতি সংগঠন কিংবা রাষ্ট্র, সবদিক থেকে অনবদ্য ছিলেন।

টুঙ্গিপাড়ার খোকা রাজনীতির কঠিন পথ পেরিয়ে হন স্বাধীনতার মহানায়ক। স্কুলজীবন থেকেই তাঁর নেতৃত্বের বিকাশ শুরু। কলকাতায় কলেজ জীবনে বরেণ্য রাজনীতিকদের সান্নিধ্যে হয়ে ওঠেন দক্ষ সংগঠক। তাঁর মতো বলিষ্ঠ নেতা শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের ইতিহাসেই বিরল।

উত্তরে বাঘিয়ার আর দক্ষিণে কালিগঙ্গা নামে বয়ে যাওয়া মধুমতি তীরের এক গ্রাম টুঙ্গিপাড়া। যেখানে পাচুরিয়া খাল, তার পাড়ের হিজল গাছটির সঙ্গে খোকা থেকে ইতিহাসের বঙ্গবন্ধু হওয়ার অভিযাত্রা শুরু হয় বাঙালির শ্রেষ্ঠ সন্তানের।

ডানপিঠে শৈশব, গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে শেরে বাংলার সঙ্গে পরিচয়, সবই মহিরুহ মুজিবের কৈশোর স্মৃতি। ১৯৩২ সালে পিতাহারা রেণুর সঙ্গে মুজিবের বিয়ে হয়। নিভৃত গ্রাম, প্রান্তের মানুষ, তাদের শ্রম ও ঘাম সংস্কৃতি ভিত গড়ে দিয়েছিলো বিশাল হৃদয় মুজিবের।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, বঙ্গবন্ধুর পরিবার বেশ অভিজাত ছিল। কারো গায়ে কাপড় না থাকলে তিনি নিজের জামা দিয়ে চলে এসেছেন। খালি গাড়ে ফিরে আসলেও তার বাবা-মা তাকে কিন্তু বকতেন না।

নুরুল হুদা আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুই ৭ মার্চের ভাষণে বাঙালির সব ধরনের মুক্তির কথা বলেছিলেন।’

কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, ‘গ্রামে জন্মগ্রহণ করার ফলে গ্রামীণ যে বৈশিষ্ট্য আছে, জীবনযাপনের যে ধরণ আছে সবকিছু নিয়ে তিনি অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ধারণ করতে পেরেছিলেন।

সেলিনা হোসেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি জাতির স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে। আর এর মধ্য দিয়ে আমরা বিশ্ব দরবারে একটি বড় জায়গা গ্রহণ করতে পেরেছি।’

বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাঙালি জাতির পিতা যে অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিলেন তা আজও প্রাসঙ্গিক।

মাত্র ৫৫ বছরের বর্ণাঢ্য জীবনে একজন মুজিব পরিবার থেকে সমাজ, রাজনীতি, সংগঠন থেকে রাষ্ট্র সবখানে একজন অনুকরণীয় আদর্শ। যার পথ অনুসরণ করেই অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় লাল সবুজের বাংলাদেশ।

১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাব উত্থাপনের পর মুসলিম লীগ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য মাঠে নেমে পড়ে। মুসলিম লীগের তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিব এ সময় পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নিজেকে যুক্ত করেছিলেন। পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন অর্জনের প্রয়াস এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পেছনের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে বাংলাদেশের ‘জাতির জনক’ বা ‘জাতির পিতা’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। এছাড়াও তাকে প্রাচীন বাঙালি সভ্যতার আধুনিক স্থপতি ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জনসাধারণের কাছে তিনি ‘শেখ মুজিব’ বা ‘শেখ সাহেব’ নামে এবং তার উপাধি ‘বঙ্গবন্ধু’ হিসেবেই অধিক পরিচিত।

ভারতে শিক্ষাজীবনে ইসলামিয়া কলেজে ছাত্রনেতা কিংবা বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়াকে মুজিবের আনুষ্ঠানিক রাজনৈতিক জীবনের সূচনা বলা যায়। এরপর একজন মুজিব দেখেছেন, ভয়ংকর ও নৃশংস ১৯৪৬ এর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। ১৯৪৭ এর ভারত ভাগের আন্দোলনেও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে শেখ মুজিব স্বাধীন বাংলা গড়ার পক্ষে ছিলেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন, ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে নির্বাচন একজন মুজিবকে বাঙালির নেতা হিসেবে আবির্ভূত করে। রাজনীতির যে অভিযাত্রায় স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তিনি ধানমন্ডির বাসভবনে কতিপয় সেনা কর্মকর্তার হাতে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নিহত হন।

এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের পথপ্রদর্শক বঙ্গবন্ধু

আপডেট : ০১:২৭:৫৪ অপরাহ্ন, রোববার, ১৭ মার্চ ২০২৪

শত বছর আগে, যখন মুজিবের জন্ম হয়, তখন সুসময় ছিলো না। পরাধীন ভারতীয় উপমহাদেশে লাগামহীন রাজত্ব করছিলো, হাজার মাইল দূর থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসা ব্রিটিশ বেনিয়ারা। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের আজকের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি পরিবার থেকে রাজনীতি সংগঠন কিংবা রাষ্ট্র, সবদিক থেকে অনবদ্য ছিলেন।

টুঙ্গিপাড়ার খোকা রাজনীতির কঠিন পথ পেরিয়ে হন স্বাধীনতার মহানায়ক। স্কুলজীবন থেকেই তাঁর নেতৃত্বের বিকাশ শুরু। কলকাতায় কলেজ জীবনে বরেণ্য রাজনীতিকদের সান্নিধ্যে হয়ে ওঠেন দক্ষ সংগঠক। তাঁর মতো বলিষ্ঠ নেতা শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের ইতিহাসেই বিরল।

উত্তরে বাঘিয়ার আর দক্ষিণে কালিগঙ্গা নামে বয়ে যাওয়া মধুমতি তীরের এক গ্রাম টুঙ্গিপাড়া। যেখানে পাচুরিয়া খাল, তার পাড়ের হিজল গাছটির সঙ্গে খোকা থেকে ইতিহাসের বঙ্গবন্ধু হওয়ার অভিযাত্রা শুরু হয় বাঙালির শ্রেষ্ঠ সন্তানের।

ডানপিঠে শৈশব, গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে শেরে বাংলার সঙ্গে পরিচয়, সবই মহিরুহ মুজিবের কৈশোর স্মৃতি। ১৯৩২ সালে পিতাহারা রেণুর সঙ্গে মুজিবের বিয়ে হয়। নিভৃত গ্রাম, প্রান্তের মানুষ, তাদের শ্রম ও ঘাম সংস্কৃতি ভিত গড়ে দিয়েছিলো বিশাল হৃদয় মুজিবের।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, বঙ্গবন্ধুর পরিবার বেশ অভিজাত ছিল। কারো গায়ে কাপড় না থাকলে তিনি নিজের জামা দিয়ে চলে এসেছেন। খালি গাড়ে ফিরে আসলেও তার বাবা-মা তাকে কিন্তু বকতেন না।

নুরুল হুদা আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুই ৭ মার্চের ভাষণে বাঙালির সব ধরনের মুক্তির কথা বলেছিলেন।’

কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, ‘গ্রামে জন্মগ্রহণ করার ফলে গ্রামীণ যে বৈশিষ্ট্য আছে, জীবনযাপনের যে ধরণ আছে সবকিছু নিয়ে তিনি অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ধারণ করতে পেরেছিলেন।

সেলিনা হোসেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি জাতির স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে। আর এর মধ্য দিয়ে আমরা বিশ্ব দরবারে একটি বড় জায়গা গ্রহণ করতে পেরেছি।’

বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাঙালি জাতির পিতা যে অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিলেন তা আজও প্রাসঙ্গিক।

মাত্র ৫৫ বছরের বর্ণাঢ্য জীবনে একজন মুজিব পরিবার থেকে সমাজ, রাজনীতি, সংগঠন থেকে রাষ্ট্র সবখানে একজন অনুকরণীয় আদর্শ। যার পথ অনুসরণ করেই অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় লাল সবুজের বাংলাদেশ।

১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাব উত্থাপনের পর মুসলিম লীগ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য মাঠে নেমে পড়ে। মুসলিম লীগের তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিব এ সময় পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নিজেকে যুক্ত করেছিলেন। পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন অর্জনের প্রয়াস এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পেছনের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে বাংলাদেশের ‘জাতির জনক’ বা ‘জাতির পিতা’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। এছাড়াও তাকে প্রাচীন বাঙালি সভ্যতার আধুনিক স্থপতি ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জনসাধারণের কাছে তিনি ‘শেখ মুজিব’ বা ‘শেখ সাহেব’ নামে এবং তার উপাধি ‘বঙ্গবন্ধু’ হিসেবেই অধিক পরিচিত।

ভারতে শিক্ষাজীবনে ইসলামিয়া কলেজে ছাত্রনেতা কিংবা বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়াকে মুজিবের আনুষ্ঠানিক রাজনৈতিক জীবনের সূচনা বলা যায়। এরপর একজন মুজিব দেখেছেন, ভয়ংকর ও নৃশংস ১৯৪৬ এর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। ১৯৪৭ এর ভারত ভাগের আন্দোলনেও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে শেখ মুজিব স্বাধীন বাংলা গড়ার পক্ষে ছিলেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন, ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে নির্বাচন একজন মুজিবকে বাঙালির নেতা হিসেবে আবির্ভূত করে। রাজনীতির যে অভিযাত্রায় স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তিনি ধানমন্ডির বাসভবনে কতিপয় সেনা কর্মকর্তার হাতে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নিহত হন।