মুসলমানদের বিরুদ্ধে চলমান সহিংসতা বন্ধ ও ইসলামোফবিয়া (ইসলাম বিরোধী বিদ্বেষ) প্রতিহত করার জন্য জাতিসংঘের বিশেষ দূত নিয়োগের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে নতুন একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় অনুযায়ী গত ১৫ মার্চ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬ তম অধিবেশনে ওআইসির পক্ষে পাকিস্তান প্রস্তাবটি উত্থাপিত করে। প্রস্তাবের পক্ষে সৌদি আরব, তুরস্ক, ইরান, কাতার, কুয়েত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, বাংলাদেশের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন ভোট দিয়েছে। ভোটদানে বিরত থেকেছে ভারত, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্সসহ ৪৪টি দেশ।
২০১৯ সালে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক দিবসে ইসলামোফবিয়া বিরোধী প্রস্তাবটি পাশ হলো। ২০১৯ সালের ১৫ মার্চ জুমার নামাজের সময় ব্রেন্টন ট্যারান্ট নামের এক বন্দুকধারী ক্রাইস্টচার্চের আল নূর মসজিদ ও লিনউড ইসলামিক সেন্টারে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ৫১জনকে হত্যা করেছিলেন।
জাতিসংঘের গণমাধ্যম শাখা থেকে প্রচারিত এক খবরে বলা হয়েছে, ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার পক্ষে পাকিস্তানের আনা ওই প্রস্তাবটি পাস হওয়ার আগে কিছু বক্তব্য সংশোধনের পক্ষে মত দিয়েছিল ইউরোপসহ পাশ্চাত্যের বেশ কয়েকটি দেশ। কিন্তু প্রস্তাবে সংশোধনীর মতামত শেষ পর্যন্ত দুবার ভোটের বৈতরণি পেরুতে পারেনি। সংশোধনীতে জাতিসংঘের বিশেষ দূতের পরিবর্তে ফোকাল পয়েন্ট ও কোরান অবমাননার বিষয়গুলোবাদ দেওয়ার মত বিষয়গুলো উল্লেখ ছিল।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস দিবসটি উপলক্ষে বলেছেন, বিভাজন সৃষ্টিকারী বক্তব্য এবং ভুলভাবে উপস্থাপনার মাধ্যমে বিভিন্ন সম্প্রদায়কে কলঙ্কিত করছে। অসহিষ্ণুতা, স্টেরিওটাইপ এবং পক্ষপাতের বিরুদ্ধে লড়াইতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
ইসলামোফবিয়া বিরোধী আন্তর্জাতিক দিবসের বিবৃতিতে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, অনলাইনে হিংসাত্মক বক্তব্য বাস্তব জীবনের সহিংসতাকে উসকে দিচ্ছে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলিকে অবশ্যই ঘৃণাপ্রসূত নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীদের হয়রানি হাত থেকে সুরক্ষা দিতে হবে।
তিনি বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য এবং অন্যান্য বাধার কারণে মুসলিমদের মানবাধিকার ও মর্যাদা লঙ্ঘন করছে। বিরক্তিকর এই প্রবণতা ইহুদি জনগণ, সংখ্যালঘু খ্রিষ্টান সম্প্রদায়সহ ধর্মীয় জনগোষ্ঠী ও অন্যান্য দুর্বল জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিস্তৃত আক্রমণেরই অংশ।
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, অবশ্যই সব ধরনের ধর্মান্ধতার মোকাবিলা করতে হবে ও তা নির্মূল করতে হবে। নেতাদের অবশ্যই উসকানিমূলক বক্তব্যের নিন্দা করতে হবে ও ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে। আমরা পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়ার প্রচার, সামাজিক সংহতি গড়ে তুলতে এবং সবার জন্য শান্তিপূর্ণ, ন্যায়সংগত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হই।
এদিকে ভারতের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা পিটিআইয়ের এক খবরে বলা হয়েছে, ইসলামোফবিয়া নিয়ে পাকিস্তানের উত্থাপিত ও চীনের সমর্থনকৃত প্রস্তাবের খসড়া থেকে ভারত ভোট দানে বিরত থেকেছে। ভোটদানে বিরত থাকার ব্যাখ্যায় জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি রুচিরা কাম্বোজ বলেন, একটি ধর্মের বিরুদ্ধে বৈষম্যকে আলাদা করে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিবর্তে, হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন সহ অন্যান্য ধর্মালম্বীদের বিরুদ্ধে বৈষম্যেরও স্বীকৃতি দেয়াটা জরুরি।