ঢাকা ০৪:৪৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

পদ্মাসহ অস্তিত্ব সংকটে আরও তিন নদী

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০১:২০:৪০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ মার্চ ২০২৪
  • / ৪০৪ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

এক সময়ের আগ্রাসী পদ্মা নদী এখন মরুসম ধু ধু বালুচর। উত্তরাঞ্চলের লাইফ লাইন পদ্মা নদীতে কোথাও হাঁটু পানি আবার কোথাও খানিকটা পানির বিস্তৃতি দৃশ্যমান। উৎস ও উজান থেকে পদ্মায় পর্যাপ্ত পানি না আসায় নদী ক্রমশ বালির নীচে চাপা পড়ছে। চারদিক থেকে ধেয়ে আসছে মরুময়তা। পদ্মায় পানি সঙ্কটের কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আরও ৩ নদীর অস্তিত্ব এখন প্রায় বিলীন। স্থানীয়রা বলছেন, নদী অববাহিকার লাখো মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে পদ্মায় স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনার অন্য কোন বিকল্প নেই।

জানা গেছে, বর্ষা মওসুমে মাস তিনেকের জন্য পানি থাকলেও বছরের নয় মাসজুড়েই তলানিতে থাকছে পদ্মা নদীর পানি। এ নদীতে ঘোলাপানি আর স্বচ্ছ পানির মায়াবি দৃশ্য আর নেই। স্রোতহীন বয়ে যাচ্ছে এক সময়ের প্রমত্ত পদ্মা। নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে বালুচরের সৃষ্টি হয়েছে। পানিশূণ্য পদ্মায় আটকে যাচ্ছে পাথরবাহী জাহাজ। মাঝ নদীতে গোসল করছে শিশুরা। পদ্মা মরে যাবার সঙ্গে সঙ্গে মহানন্দার অস্তিত্ব প্রায় বিলীন। আর পাগলা নদীর আগের পাগলামীও নেই। পূর্ণভবা নদীরও একই চিত্র। এসব নদীতে বর্ষার সময় কিছু পানি থাকলেও সারা বছর থাকে শুকনো। নৌকা নয় চলে চাষাবাদ। ফারাক্কা বাঁধ দেওয়ার ফলে উত্তরাঞ্চলের নদ-নদী অস্তিত্ব হারানোর পথে।

এবারও পদ্মায় মাস তিনেকের জন্য যৌবন এসেছিল। কিন্তু ফাল্গুন মাসেই নদীর পানি তলানিতে। সামনে রয়েছে খরা মৌসুমে চৈত্র-বৈশাখ। তখন ‘কি মরণ দশা হবে’ তা নিয়ে দুশ্চিন্তার ভাজ নদী তীরবর্তী মানুষের কপালে। বিরূপ প্রভাব পড়েছে প্রকৃতিতে। হারিয়ে গেছে অর্ধশত বেশি প্রজাতির মাছ। নৌ যোগাযোগ আর নেই। নদীর বুকে আবাদ হয় ধানসহ বিভিন্ন ফসলের।

এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বুক চিরে বয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী মহানন্দা নদী নাব্যতা হারিয়ে মরা খালে পরিণত হওয়ার পথে। বালু ও পলি জমে ক্রমশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদীর তলদেশ। কমে যাচ্ছে পানির প্রবাহ। নদীর বুকে জেগে উঠছে চর। স্থানীয় কৃষকরা সেই চরেই ফলাচ্ছেন ফসল।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পলি জমে ভরাট হওয়ার কারণে এ মহানন্দা নদীর অস্তিত্বই এখন বিলীন হওয়ার পথে। ভরাট হয়ে যাওয়া নদীর তলদেশে এখন বোরো ধান, গম, ভুট্টাসহ নানা ধরনের ফসলের চাষাবাদ করছেন কৃষকরা। নদীর বুকে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন নদীপাড়ের মানুষ।

স্থানীয়রা জানান, এক সময় এ নদীতে পর্যাপ্ত পানি প্রবাহ ছিল। তা দিয়ে চাষাবাদ করার পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করা হতো। নদীর তলদেশে পলি জমে বিস্তৃীর্ণ এলাকাজুড়ে জেগে উঠেছে বিশাল চর। মহানন্দা নদী বাংলাদেশ ভারতের একটি আন্তঃসীমানা নদী। ভারতের দার্জিলিং, কিশানগঞ্জ, কাটিহার, মালদহ অতিক্রম করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ দিয়ে বালাদেশে প্রবেশে করে। এ নদী একসময় ছিল প্রবল খরস্রোত এবং নদী পাড়ের মানুষের কাছে ছিল মূর্তিমান আতঙ্ক। কিন্তু বর্তমানে এ নদী নাব্য হারিয়ে ফেলায় বর্ষাকালে এর ভয়াল রূপ আর চোখ পড়ে না। মহানন্দা নদীর ঢেউ এখন শুধুই স্মৃতি।

স্থানীয় কৃষক কামরুল ইসলাম জানান, আমাদের জমি মহানন্দা নদী ভাঙনে তলিয়ে যায়। ১৯৭২ সালের জরিপে খাস খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত হয়। পরে আর সংশোধন করা সম্ভব হয়নি। নদীতে চর পড়ায় আমরা পৈতৃক সম্পত্তি ফিরে পেয়ে চাষাবাদ করে ভালো আছি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, উৎস থেকে পানির প্রবাহ স্বাভাবিক না থাকায় নদীর গতিপথ বদলে গেছে। দীর্ঘদিন ড্রেজিং না হওয়ায় বর্ষ মৌসুমে দুই কুল উপচে পড়ে, আবার শুষ্ক মৌসুমে এসব নদীতে পানি থাকেনা। প্রতিবছরই নদী ভাঙনের কবলে পড়ে। পদ্মা নদী তীর রক্ষায় ৬০০ কোটি টাকার প্রকল্প চলমান। মহানন্দায় পানি প্রবাহ ঠিক রাখতে রাবারড্যাম নির্মাণকাজ চলছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

পদ্মাসহ অস্তিত্ব সংকটে আরও তিন নদী

আপডেট সময় : ০১:২০:৪০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ মার্চ ২০২৪

এক সময়ের আগ্রাসী পদ্মা নদী এখন মরুসম ধু ধু বালুচর। উত্তরাঞ্চলের লাইফ লাইন পদ্মা নদীতে কোথাও হাঁটু পানি আবার কোথাও খানিকটা পানির বিস্তৃতি দৃশ্যমান। উৎস ও উজান থেকে পদ্মায় পর্যাপ্ত পানি না আসায় নদী ক্রমশ বালির নীচে চাপা পড়ছে। চারদিক থেকে ধেয়ে আসছে মরুময়তা। পদ্মায় পানি সঙ্কটের কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আরও ৩ নদীর অস্তিত্ব এখন প্রায় বিলীন। স্থানীয়রা বলছেন, নদী অববাহিকার লাখো মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে পদ্মায় স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনার অন্য কোন বিকল্প নেই।

জানা গেছে, বর্ষা মওসুমে মাস তিনেকের জন্য পানি থাকলেও বছরের নয় মাসজুড়েই তলানিতে থাকছে পদ্মা নদীর পানি। এ নদীতে ঘোলাপানি আর স্বচ্ছ পানির মায়াবি দৃশ্য আর নেই। স্রোতহীন বয়ে যাচ্ছে এক সময়ের প্রমত্ত পদ্মা। নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে বালুচরের সৃষ্টি হয়েছে। পানিশূণ্য পদ্মায় আটকে যাচ্ছে পাথরবাহী জাহাজ। মাঝ নদীতে গোসল করছে শিশুরা। পদ্মা মরে যাবার সঙ্গে সঙ্গে মহানন্দার অস্তিত্ব প্রায় বিলীন। আর পাগলা নদীর আগের পাগলামীও নেই। পূর্ণভবা নদীরও একই চিত্র। এসব নদীতে বর্ষার সময় কিছু পানি থাকলেও সারা বছর থাকে শুকনো। নৌকা নয় চলে চাষাবাদ। ফারাক্কা বাঁধ দেওয়ার ফলে উত্তরাঞ্চলের নদ-নদী অস্তিত্ব হারানোর পথে।

এবারও পদ্মায় মাস তিনেকের জন্য যৌবন এসেছিল। কিন্তু ফাল্গুন মাসেই নদীর পানি তলানিতে। সামনে রয়েছে খরা মৌসুমে চৈত্র-বৈশাখ। তখন ‘কি মরণ দশা হবে’ তা নিয়ে দুশ্চিন্তার ভাজ নদী তীরবর্তী মানুষের কপালে। বিরূপ প্রভাব পড়েছে প্রকৃতিতে। হারিয়ে গেছে অর্ধশত বেশি প্রজাতির মাছ। নৌ যোগাযোগ আর নেই। নদীর বুকে আবাদ হয় ধানসহ বিভিন্ন ফসলের।

এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বুক চিরে বয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী মহানন্দা নদী নাব্যতা হারিয়ে মরা খালে পরিণত হওয়ার পথে। বালু ও পলি জমে ক্রমশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদীর তলদেশ। কমে যাচ্ছে পানির প্রবাহ। নদীর বুকে জেগে উঠছে চর। স্থানীয় কৃষকরা সেই চরেই ফলাচ্ছেন ফসল।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পলি জমে ভরাট হওয়ার কারণে এ মহানন্দা নদীর অস্তিত্বই এখন বিলীন হওয়ার পথে। ভরাট হয়ে যাওয়া নদীর তলদেশে এখন বোরো ধান, গম, ভুট্টাসহ নানা ধরনের ফসলের চাষাবাদ করছেন কৃষকরা। নদীর বুকে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন নদীপাড়ের মানুষ।

স্থানীয়রা জানান, এক সময় এ নদীতে পর্যাপ্ত পানি প্রবাহ ছিল। তা দিয়ে চাষাবাদ করার পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করা হতো। নদীর তলদেশে পলি জমে বিস্তৃীর্ণ এলাকাজুড়ে জেগে উঠেছে বিশাল চর। মহানন্দা নদী বাংলাদেশ ভারতের একটি আন্তঃসীমানা নদী। ভারতের দার্জিলিং, কিশানগঞ্জ, কাটিহার, মালদহ অতিক্রম করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ দিয়ে বালাদেশে প্রবেশে করে। এ নদী একসময় ছিল প্রবল খরস্রোত এবং নদী পাড়ের মানুষের কাছে ছিল মূর্তিমান আতঙ্ক। কিন্তু বর্তমানে এ নদী নাব্য হারিয়ে ফেলায় বর্ষাকালে এর ভয়াল রূপ আর চোখ পড়ে না। মহানন্দা নদীর ঢেউ এখন শুধুই স্মৃতি।

স্থানীয় কৃষক কামরুল ইসলাম জানান, আমাদের জমি মহানন্দা নদী ভাঙনে তলিয়ে যায়। ১৯৭২ সালের জরিপে খাস খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত হয়। পরে আর সংশোধন করা সম্ভব হয়নি। নদীতে চর পড়ায় আমরা পৈতৃক সম্পত্তি ফিরে পেয়ে চাষাবাদ করে ভালো আছি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, উৎস থেকে পানির প্রবাহ স্বাভাবিক না থাকায় নদীর গতিপথ বদলে গেছে। দীর্ঘদিন ড্রেজিং না হওয়ায় বর্ষ মৌসুমে দুই কুল উপচে পড়ে, আবার শুষ্ক মৌসুমে এসব নদীতে পানি থাকেনা। প্রতিবছরই নদী ভাঙনের কবলে পড়ে। পদ্মা নদী তীর রক্ষায় ৬০০ কোটি টাকার প্রকল্প চলমান। মহানন্দায় পানি প্রবাহ ঠিক রাখতে রাবারড্যাম নির্মাণকাজ চলছে।