ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশ। এই প্রদেশের মাদরাসা বা ইসলামিক স্কুলগুলোতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন দেশটির একটি আদালত। এর ফলে রাজ্যটিতে ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের কার্যক্রম চালাতে পারবে না। ২৩ মার্চ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে লন্ডনভিত্তিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স। তারা বলছে, ভারতের মুসলমানদের নরেন্দ্র মোদির হিন্দুত্ববাধী সরকার থেকে দূরে রাখতে নির্বাচনের আগে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আদালতের শুক্রবারের রায়টি উত্তর প্রদেশের মাদরাসা পরিচালনাকারী ২০০৪ সালের আইনটিকে বাতিল করে দিয়েছে। আদালত রায়ে জানিয়েছেন, এই আইন ভারতের সাংবিধানিক ধর্মনিরপেক্ষতা লঙ্ঘন করে। ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের প্রচলিত স্কুলে স্থানান্তরিত করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
উত্তর প্রদেশে ২৪ কোটি মানুষের বাস। এর এক পঞ্চমাংশই মুসলিম। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় উত্তর প্রদেশের মাদরাসা পরিচালনাকারী বোর্ডের প্রধান ইফতেখার আহমেদ জাবেদ বলেন, এলাহাবাদ হাইকোর্টের এই আদেশের ফলে প্রভাবিত হবে ২৭ লাখ শিক্ষার্থী, ১০ হাজার শিক্ষক ও ২৫ হাজার মাদরাসার ভবিষ্যৎ।
মাদরাসা বন্ধে আদালতে আপিল করেছিলেন আইনজীবী অংশুমান সিং রাঠোর। তার আপিলের জেরে এই রায় দেওয়া হয়েছে। রায়ে বিচারক সুভাষ ভিদ্যার্থি ও ভিবেক চৌধুরী বলেন, ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়টি রাজ্য সরকার নিশ্চিত করবে। কোনো শিশুই যেন শিক্ষার বাইরে না থাকে তা দেখতে হবে। আইনজীবী রাঠোর কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত কি না তা স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স। এমনকি এই আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে।
ভারতের অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচন হবে সাত দফায়। নির্বাচন শুরু হবে আগামী ১৯ এপ্রিল ও শেষ হবে ১ জুন। ভারতে মোট ৫৪৩টি লোকসভা আসনে এ নির্বাচনের পাশাপাশি বিধানসভা নির্বাচন হবে চার রাজ্যে। একইসঙ্গে বিধানসভা উপনির্বাচন হবে ১৩টি রাজ্যে। ভোট গণনা ও ফল প্রকাশিত হবে ৪ জুন। এই নির্বাচনেও মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি -বিজেপি জিতবে এমন দাবি করছে তারা।
মুসলিম ও অধিকার গোষ্ঠীগুলো বিজেপির লোকজনের বিরুদ্ধে ইসলাম বিরোধী বিদ্বেষমূলক বক্তৃতার অভিযোগ করেছে। পাশাপাশি মুসলমান মালিকানাধীন সম্পত্তি ধ্বংসেরও অভিযোগ করছে। তবে, এসব অভিযোগ বার বার অস্বীকার করে আসছেন মোদি। বিজেপি বলছে, ক্ষমতাসীন সরকার ঐতিহাসিক ভুলগুলোকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনছে। যার মধ্যে রয়েছে ১৯৯২ সালে ধ্বংস করা ১৬০০ শতকের একটি মসজিদের জায়গায় হিন্দু মন্দির উদ্বোধন। অনেক হিন্দু বিশ্বাস করেন, মুঘল শাসক বাবর মন্দির ভেঙে মসজিদটি তৈরি করেছেন।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় উত্তর প্রদেশ বিজেপির মুখপাত্র রাকেশ ত্রিপাঠি বলেন, এই রায় মাদরাসার বিরুদ্ধে নয়। এমনকি আমরা মাদরাসার বিরুদ্ধে না। আমরা বৈষম্যমূলক অনুশীলনের বিরুদ্ধে। আমরা অবৈধ অর্থায়নের বিরুদ্ধে। আদালতের আদেশের পর সরকার পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।’ এ বিষয়ে মোদির কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে মেইলের মাধ্যমে রয়টার্স থেকে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো সাড়া দেননি।