সকালে ঘুম থেকে উঠে অর্পা (ছদ্মনাম) বালিশ তুলে দেখে, ছোট্ট এক সাপ কিলবিল করছে বালিশের নিচে! ভয়ে চিৎকার করে বড়বোন স্বর্ণাকে (ছদ্মনাম) জড়িয়ে ধরে সে। স্বর্ণা হাসতে হাসতে সাপটা হাতে তুলে নিয়ে বলে, ‘এটি প্লাস্টিকের সাপ। তোমাকে এপ্রিল ফুল বানানো হয়েছে!’
স্রেফ মজা করে মানুষকে বোকা বানানোর জন্য বিশ্বব্যাপী এপ্রিলের ১ তারিখ বিশেষভাবে পরিচিত। এ দিন ঠাট্টা, কৌতুক ও মজাচ্ছলে একে অপরকে বোকা বানায়। দিবসটিকে বলা হয় ‘এপ্রিল ফুলস ডে’। পশ্চিমা বিশ্বে এই দিবস উদযাপনের জনপ্রিয়তা থাকলেও ভারতীয় উপমহাদেশে এর জনপ্রিয়তা তুলনামূলক কম। তবে ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে এপ্রিল ফুলস ডে ভারত ও এর আশপাশের দেশেও ইদানীং আলোচিত হচ্ছে।
পশ্চিমা দেশগুলো তো এ দিনটিকে ঘটা করেই পালন করে। কোনো কোনো পত্রিকা ফলাও করে ভুয়া সংবাদ ছাপায় এই দিনে। পরদিন ওই সংবাদের সংশোধনী ছাপিয়ে বলে, খবরটা আসলে এপ্রিল ফুল ছিল।
তবে কোন সময় থেকে এপ্রিল ফুল দিবস চালু হয়েছে, কিংবা এ দিবস উদযাপনের নেপথ্য কারণ কী, এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানা যায় না। বাংলাদেশের বেশির ভাগ মুসলিম মনে করেন, এ দিবসের সঙ্গে স্পেনের মুসলমানদের ট্র্যাজিক ইতিহাস জড়িত। ১৫ শতকের শেষের দিকে স্পেনের গ্রানাডায় বেশ কিছু মুসলমানকে মসজিদে আটকে রেখে আগুন দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছিল বলে কথিত রয়েছে। তবে এ ঘটনার কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায় না বলে জানিয়েছে বিবিসি।
এদিকে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, ব্রিটানিকা, হিস্ট্রি, বিবিসি, ইকনোমিক টাইমসসহ বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম ও ওয়েবসাইট জানিয়েছে, এপ্রিল ফুলের উৎপত্তি পনের শতকে ফ্রান্সে।
১৫৮২ সালে ফ্রান্স পুরোনো জুলিয়ান ক্যালেন্ডার বাদ দিয়ে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে প্রবেশ করে। জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ফ্রান্সে নববর্ষ শুরু হতো মার্চের শেষ দিন বা এপ্রিলের প্রথম দিন। কিন্তু গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে নববর্ষ শুরু হয় জানুয়ারিতে।
ওই সময়ে যোগাযোগব্যবস্থা এত সহজ ছিল না বলে ক্যালেন্ডার বদলের খবরটি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে বেশ সময় লাগে। ফলে অনেকেই এপ্রিলে নববর্ষ পালন করতে থাকেন। পরে এই বিষয়টিই হাস্যরসে পরিণত হয়। অর্থাৎ যারা এপ্রিলের প্রথম দিনে নববর্ষ পালন করেন তাদেরকে বোকা বলে ব্যাঙ্গ করতে থাকেন অন্যরা।
এভাবেই এপ্রিল ফুল দিবসের উৎপত্তি বলে মনে করা হয়।
সমাজিবিজ্ঞানীরা বলছেন, এ দিবসটির সাংস্কৃতিক তাৎপর্য রয়েছে। অস্থির এই সময়ে একটি দিনকে ঘিরে মানুষ যদি একটু হাসাহাসি করতে পারে, তাতে মানসিক প্রশান্তি আসে, মেজাজ হালকা হয় ও পারস্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়। তবে মজা করতে গিয়ে, তা যেন সীমা অতিক্রম না করে সেদিকে সবার নজর রাখা উচিত বলে মনে করেন সমাজবিজ্ঞানীরা।