সারাদেশে কালবৈশাখী ঝড় ও বৃষ্টিতে গাছপালা ভেঙে পড়ে এবং বজ্রপাতে অন্তত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের চার জেলাতেই সাত জন মারা গেছেন। এসময় আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। রোববার (৭ এপ্রিল) সকালে এসব ঘটনা ঘটে।
পিরোজপুরে নিহত ২
ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে পিরোজপুর পৌরসভা ও সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকা। রোববার (৭ এপ্রিল) সকাল পৌনে ১০টার দিকে হঠাৎ আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে অন্ধকার নেমে আসে, শুরু হয় কালবৈশাখী ঝড়। এসময় সদর উপজেলার মরিচাল এলাকায় তীব্র বাতাসে বড় গাছ ভেঙে পড়ে ইউপি সদস্য হারুন শেখের বাড়ির ওপর। ফলে দুইতলা টিনের বাড়ি মাঝ বরাবর ধসে যায়। এতে গাছচাপায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন রুবি বেগম (২৫) নামের এক নারী। এ ঘটনায় আরও ২ জন আহত হয়েছেন। ঝড়ের তাণ্ডবে নলবুনিয়া গ্রামের খালে পড়ে মৃত কানাই লাল পালের ছেলে অনিল পাল (৮২) মারা গেছেন। ঝড়ে পিরোজপুর পৌরসভা ও সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় শত শত গাছ উপরে ও ভেঙে পড়ে, তাতে অসংখ্য ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এসময় বন্ধ হয়ে যায় সড়ক যোগাযোগ। ঝড়ে গাছ উপড়ে পড়ে বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ।
পটুয়াখালীতে নিহত ২
পটুয়াখালীতে কালবৈশাখী ঝড় ও বজ্রপাতে দুজন নিহত হয়েছেন। এ সময় বিভিন্ন স্থানে গাছপালা ভেঙে ও উপড়ে পড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বাউফল উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের তাতেরকাঠী গ্রামে বজ্রপাতে নবম শ্রেণির ছাত্র রাতুল (১৪) নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে দাসপাড়া ইউনিয়নের বাহের দাসপাড়া গ্রামে গাছচাপা পড়ে নিহত হয়েছেন বৃদ্ধা সাফিয়া বেগম (৮৫)। বাউফল পৌর শহরের থানার সামনে ছালেহিয়া ফাজিল মাদরাসার একটি ভবনের টিনের চালা উপড়ে রাস্তায় পরে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গোসিংগা গ্রামের আফসেরের গ্রেজ এলাকায় ঘরের উপর গাছ ভেঙে পড়ে মা সাবিহা (৩০), তার মেয়ে ইভা (১২) ও দুই বছর বয়সি শিশু মারাত্মক আহত হয়েছে।
ঝালকাঠিতে নিহত ৩
ঝালকাঠিতে বজ্রপাতে দুই নারী ও এক শিশু নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- হেলেনা বেগম (৪০), মিনারা বেগম (৩৫) ও মাহিয়া আক্তার ঈশানা ( ১১)। রোববার (৭ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে মাঠ থেকে গরু আনতে গিয়ে এ ঘটনা ঘটে। নিহত হেলেনা বেগমের বাড়ি ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলার উত্তর তালগাছিয়া গ্রামে। মিনারা বেগমের বাড়ি ঝালকাঠি সদর উপজেলার শেখেরহাট গ্রামে ও মাহিয়া আক্তার ঈশানার বাড়ি পোনাবালিয়া গ্রামে। নিহতদের মধ্যে হেলেনা বেগম ও মিনারা বেগম গৃহিণী এবং মাহিয়া আক্তার ঈশানা আফসার মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। ঝালকাঠির পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আফরুজুল হক টুটুল বলেন, কালবৈশাখী ঝড়ে মাঠ থেকে গবাদি পশু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে তাদের মৃত্যু হয়েছে।
ভোলায় নিহত ২
ভোলার ঝড়ে ঘরচাপা পড়ে ও বজ্রপাতে দুই জন নিহত হয়েছেন। রোববার (৭ এপ্রিল) সকালে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- হারেস (৬৮) এবং বাচ্চু (৪০)। এদের মধ্যে হারেস ঘরচাপায় এবং বাচ্চু বজ্রপাতে নিহত হন। তাদের বাড়ি উপজেলার বদরপুর ও চরভূতা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে। এছাড়াও ঝড়ে ২ শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ভোলার লালমোহন, তজুমদ্দিন এবং মনপুরা উপজেলায়ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও অনেকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঘর বিধ্বস্ত হওয়ার পাশাপাশি উপজেলার মনোয়ারা বেগম মহিলা কলেজের টিনশেড ক্লাসরুমটি বিধ্বস্ত হয়। বিভিন্ন চরে থাকা কৃষকের ৩০টি গরু নদীতে পড়ে নিখোঁজ রয়েছে বলে জানা গেছে। ভোলার জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান জানান, নিহতের পরিবারকে নগদ ২৫ হাজার টাকা করে মোট ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত ৩ উপজেলায় ১৬ মেট্রিক টন চাল তাৎক্ষণিক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ঝড়ে হতাহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে বলেও জানান জেলা প্রসাশক।
নেত্রকোনায় নিহত ১
নেত্রকোনায় খালিয়াজুরিতে হাওরে বজ্রপাতে এক কৃষক নিহত হয়েছেন। রোববার (৭ এপ্রিল) বেলা পৌনে ১২টার দিকে উপেজলার রাজঘাট হাওরে এ ঘটনা ঘটে। নিহত কৃষক ৫২ বছর বয়সী শহীদ মিয়া উপজেলার মেন্দীপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের কফিল উদ্দিনের ছেলে। নিহতের ভাই রেজাউল করিম জানান, সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে গ্রামের সামনে রাজঘাট হাওরে মরিচ ক্ষেতে কাজ করছিলেন শহীদ মিয়া। বেলা ১২টার দিকে হঠাৎ বজ্রসহ বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এ সময় বজ্রপাতে গুরুতর আহত হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান শহীদ মিয়া। খালিয়াজুরী থানার ওসি উত্তম কুমার সাহা জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। নিহত শহীদ মিয়ার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাগেরহাটে নিহত ১
রোববার সকাল ৯টার দিকে বাগেরহাটে আকস্মিক ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলার বিভিন্নস্থানে কয়েকশ কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। প্রচুর গাছপালা উপড়ে ও বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। আকস্মিক ঝড় চলাকালে জেলার কচুয়া উপজেলার চর সোনাকুড় গ্রামে বজ্রপাতে লিকসান সরদার (৩২) নামে মাদরাসার দপ্তরি নিহত হয়েছেন। এছাড়া জেলা কেন্দ্রীয় বাস-টার্মিনালে একটি সাইনবোর্ডের টাওয়ার ভেঙে দাঁড়িয়ে থাকা একটি যাত্রীবাহীবাসেরওপর পড়ে এক বাস শ্রমিকসহ বিভিন্ন স্থানে ১৫ জন আহত হয়েছেন। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালিদ হোসেন জানান, আকস্মিক ঝড়ে বাগেরহাটের দেড় শতাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক এলাকায় ঘরবাড়ি ও গাছপালা উপড়ে পড়েছে।
রাঙামাটিতে নিহত ১
জেলার রাজস্থলী উপজেলায় বজ্রপাতে সাজেউ খিয়াং (৪৮) নামে একজন মারা গেছেন। রোববার (৭ এপ্রিল) বিকেলে এ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। সাজেউ খিয়াং রাজস্থলী উপজেলার ১নং ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ধনুছড়ি পাড়া গ্রামের অংসাউ খিয়াং এর ছেলে। বিকেলে ধনুছড়ি পাড়া গ্রামের নিজের বাড়ির সামনে কাজ করছিলেন সাজেউ খিয়াং। এ সময় বজ্রপাতসহ বৃষ্টি শুরু হলে তিনি নিজের ঘরে অবস্থান নেন। তখন ঘরে বজ্রপাত হলে মারা যান তিনি। রাজস্থলী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল হোসেন বজ্রপাতে যুবকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
খুলনায় নিহত ১
জেলার ডুমুরিয়ায় বজ্রপাতে মো. ওবায়দুল্লাহ গাজী (২৯) নামের এক মৎস্যচাষির মৃত্যু হয়েছে। রোববার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়ার কোমলপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ওবায়দুল্লাহ গাজী ওই গ্রামের মো. দেলোয়ার হোসেন গাজীর ছেলে। ডুমুরিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত কুমার সাহা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নিহতের ফুফাতো ভাই আবু সুফিয়ান বলেন, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ওবায়দুল্লাহ পাশের কানাইডাঙ্গা বিলে গরুর জন্য ঘাস কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা যান। মরদেহ বাড়িতে আনা হয়েছে।
যশোরে নিহত ১
জেলার ঝিকরগাছা উপজেলায় ধান ক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। সকালে উপজেলার বড়পোদাউলিয়া গ্রামের বিলে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান ঝিকরগাছার শংকরপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য পোদাউলিয়া গ্রামের জাহান আলি। নিহত আব্দুল মালেক পাটোয়ারী (৬০) উপজেলার বড়পোদাউলিয়া গ্রামের মৃত ওমর আলি পাটোয়ারীর ছেলে। জাহান আলি বলেন, সকালে বাড়ির পাশের বিলে নিজের ধানক্ষেতে কাজ করতে গিয়েছিলেন আব্দুল মালেক। এ সময় বৃষ্টিপাতের সঙ্গে হঠাৎ বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।