ঢাকা ০৬:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

ঈদের কেনাকাটায় ধনী-গরিবের বৈষম্যে

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৩:০৯:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ এপ্রিল ২০২৪
  • / ৪৪৩ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ঈদ এমন একটি উৎসব, যেখানে ধনী-গরিব একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অংশ নেয়। তবে ঈদের কেনাকাটায় যেন বৈষম্যের শেষ নেই। উদযাপন আর আনন্দ ভাগাভাগিতে কমতি না পড়লেও শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ব্যবধান বেড়েই চলেছে। এমন বৈষম্য কমাতে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ বিশ্লেষকদের।

দেশে ধনী-গরিবের ব্যবধান ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। ঈদ উদযাপনে মানুষের যে বাড়তি আগ্রহ তা কখনোই নির্দ্দিষ্ট আয় কিংবা সীমানার গণ্ডিতে থেমে থাকেনি। সময়ের সাথে আনন্দের মাত্রায় যেমন এসেছে ভিন্নতা, তেমন বেড়েছে বৈষম্যের মাধ্যম আর সমাধানে দৈন্যতা।

সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘রাষ্ট্রে ধনী-গরিবের বৈষম্য কমিয়ে আনার বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। আর যার টাকা আছে সে যেন টাকার প্রদর্শনী করতে না পারে সেটি বিবেচনা করতে হবে। এতে করে যার টাকা নেই তার মাঝে হাহাকার তৈরি হবে না। সবাই একসঙ্গে এগিয়ে যেতে পারছে না সেটি উপলব্ধি করতে হবে। আর এর কারণগুলো বের করে সমাধানের চেষ্টাও করতে হবে।’

অনেক পরিবার আছে, যারা চেয়ে থাকে ধনীদের দিকে। তারা যদি যাকাতের কাপড় দেয়। তাদের নেই কোন বাজেট। অল্পতেই এরা খুশি। ইট পাথরের এই শহরে যান্ত্রীক জীবনে সকলেই ছুটছে টাকার পেছনে। ঈদের আনন্দ খুঁজতে ধনীরা অভিজাত এলাকায় টাকা ঢালে পছন্দের কাপড়ে। আর গরীবরা চেয়ে থাকে অন্যর দিকে।

সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে অভিজাত এলাকা খ্যাত গুলশান-বনানীর বিপণিবিতান জমে ওঠে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোলাহলমুক্ত পরিবেশে কেনাকাটায় যারা মগ্ন, তাদের অধিকাংশ শহরের ধনাঢ্য পরিবারের।

মাহবুবুর রশিদ, পরিবার নিয়ে ঈদের কেনাকটা করতে এসেছেন। তিন সদস্যের পরিবারে এবারের ঈদে তার বাজেট এক লাখ টাকা। ৪৫ হাজার টাকার কাপড় কেনার মাধ্যমে শুরু হলো তাদের ঈদের প্রস্তুতি। তিনি বলেন, ‘২৫ হাজার টাকা দেখছে কিন্তু কিনতে আসলে দাম বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে হয়তো ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা বাড়ে। আসলে টাকার সাথে আনন্দের হিসাব করা যাবে না, আনন্দই সবকিছুর আগে।’

গুলশানের একটি নামিদামি শো-রুমে পছন্দের কাপড় খুঁজছেন এক দম্পতি। থ্রি-পিচ, পাঞ্জাবি ও আনুষাঙ্গিক কেনাকাটার পরিমাণ ছাড়িয়েছে আড়াই লাখ টাকা। এসব শো-রুমে যারা কেনাকাটা করেন তাদের কাছে কাগজের টাকার প্রচলন নেই খুব বেশি। উৎসবের কেনাকাটায় মূখ্য বিষয় পছন্দ।

অন্যদিকে পরিবারের সদস্যদের মুখের অন্ন জোগাতেই যারা হিমশিম খাচ্ছেন তাদের একজন সাভারের নিকরাইল গ্রামের আবদুর রহিম। রিক্সা চালিয়ে সংসার চালান। চার সন্তানের জনক তিনি। দু’সন্তান বাক প্রতিবন্ধি। দু’জন স্কুলে গেলেও অভাবের কারণে তাদের স্কুলে যাওয়াও বন্ধের উপক্রম হয়েছে। সারা বছর এভাবে চললেও রমজান ও কোরবানির ঈদ উৎসবগুলো আসলে পড়ে যান বিপাকে।

মুদ্রার আরেক পিঠে রয়েছে নীল আকাশ। তীব্র রোদে দাঁড়িয়ে গার্মেন্টস কর্মী জাহাঙ্গীর, যিনি ব্যস্ত ঈদ আনন্দে ছেলে-মেয়ের পোশাক কিনতে। জাহাঙ্গীর বলেন, ‘দেড় হাজার টাকায় তিন ছেলে-মেয়ের পোশাক কিনবো। নতুন জামা-কাপড় দিলে বাচ্চারা খুশি হয়। ঘুরে ঘুরে বাজার দেখে কিনতে হচ্ছে।’

অধিকাংশের গল্পই এখানে জাহাঙ্গীরের মতো। রাস্তার দু’ধারে গড়ে ওঠা এসব বাজারে যারা ক্রেতা তাদেরও মুখ্য বিষয় পছন্দ। তবে চাওয়া-পাওয়ার হিসাব খুবই সামান্য। যেখানে যাচাই-বাছাই চলে দীর্ঘক্ষণ, পকেটে যাতে টান না পড়ে সে চিন্তা আর পছন্দের পণ্যে অপলক চেয়ে থাকা।

নিউজটি শেয়ার করুন

ঈদের কেনাকাটায় ধনী-গরিবের বৈষম্যে

আপডেট সময় : ০৩:০৯:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ এপ্রিল ২০২৪

ঈদ এমন একটি উৎসব, যেখানে ধনী-গরিব একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অংশ নেয়। তবে ঈদের কেনাকাটায় যেন বৈষম্যের শেষ নেই। উদযাপন আর আনন্দ ভাগাভাগিতে কমতি না পড়লেও শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ব্যবধান বেড়েই চলেছে। এমন বৈষম্য কমাতে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ বিশ্লেষকদের।

দেশে ধনী-গরিবের ব্যবধান ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। ঈদ উদযাপনে মানুষের যে বাড়তি আগ্রহ তা কখনোই নির্দ্দিষ্ট আয় কিংবা সীমানার গণ্ডিতে থেমে থাকেনি। সময়ের সাথে আনন্দের মাত্রায় যেমন এসেছে ভিন্নতা, তেমন বেড়েছে বৈষম্যের মাধ্যম আর সমাধানে দৈন্যতা।

সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘রাষ্ট্রে ধনী-গরিবের বৈষম্য কমিয়ে আনার বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। আর যার টাকা আছে সে যেন টাকার প্রদর্শনী করতে না পারে সেটি বিবেচনা করতে হবে। এতে করে যার টাকা নেই তার মাঝে হাহাকার তৈরি হবে না। সবাই একসঙ্গে এগিয়ে যেতে পারছে না সেটি উপলব্ধি করতে হবে। আর এর কারণগুলো বের করে সমাধানের চেষ্টাও করতে হবে।’

অনেক পরিবার আছে, যারা চেয়ে থাকে ধনীদের দিকে। তারা যদি যাকাতের কাপড় দেয়। তাদের নেই কোন বাজেট। অল্পতেই এরা খুশি। ইট পাথরের এই শহরে যান্ত্রীক জীবনে সকলেই ছুটছে টাকার পেছনে। ঈদের আনন্দ খুঁজতে ধনীরা অভিজাত এলাকায় টাকা ঢালে পছন্দের কাপড়ে। আর গরীবরা চেয়ে থাকে অন্যর দিকে।

সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে অভিজাত এলাকা খ্যাত গুলশান-বনানীর বিপণিবিতান জমে ওঠে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোলাহলমুক্ত পরিবেশে কেনাকাটায় যারা মগ্ন, তাদের অধিকাংশ শহরের ধনাঢ্য পরিবারের।

মাহবুবুর রশিদ, পরিবার নিয়ে ঈদের কেনাকটা করতে এসেছেন। তিন সদস্যের পরিবারে এবারের ঈদে তার বাজেট এক লাখ টাকা। ৪৫ হাজার টাকার কাপড় কেনার মাধ্যমে শুরু হলো তাদের ঈদের প্রস্তুতি। তিনি বলেন, ‘২৫ হাজার টাকা দেখছে কিন্তু কিনতে আসলে দাম বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে হয়তো ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা বাড়ে। আসলে টাকার সাথে আনন্দের হিসাব করা যাবে না, আনন্দই সবকিছুর আগে।’

গুলশানের একটি নামিদামি শো-রুমে পছন্দের কাপড় খুঁজছেন এক দম্পতি। থ্রি-পিচ, পাঞ্জাবি ও আনুষাঙ্গিক কেনাকাটার পরিমাণ ছাড়িয়েছে আড়াই লাখ টাকা। এসব শো-রুমে যারা কেনাকাটা করেন তাদের কাছে কাগজের টাকার প্রচলন নেই খুব বেশি। উৎসবের কেনাকাটায় মূখ্য বিষয় পছন্দ।

অন্যদিকে পরিবারের সদস্যদের মুখের অন্ন জোগাতেই যারা হিমশিম খাচ্ছেন তাদের একজন সাভারের নিকরাইল গ্রামের আবদুর রহিম। রিক্সা চালিয়ে সংসার চালান। চার সন্তানের জনক তিনি। দু’সন্তান বাক প্রতিবন্ধি। দু’জন স্কুলে গেলেও অভাবের কারণে তাদের স্কুলে যাওয়াও বন্ধের উপক্রম হয়েছে। সারা বছর এভাবে চললেও রমজান ও কোরবানির ঈদ উৎসবগুলো আসলে পড়ে যান বিপাকে।

মুদ্রার আরেক পিঠে রয়েছে নীল আকাশ। তীব্র রোদে দাঁড়িয়ে গার্মেন্টস কর্মী জাহাঙ্গীর, যিনি ব্যস্ত ঈদ আনন্দে ছেলে-মেয়ের পোশাক কিনতে। জাহাঙ্গীর বলেন, ‘দেড় হাজার টাকায় তিন ছেলে-মেয়ের পোশাক কিনবো। নতুন জামা-কাপড় দিলে বাচ্চারা খুশি হয়। ঘুরে ঘুরে বাজার দেখে কিনতে হচ্ছে।’

অধিকাংশের গল্পই এখানে জাহাঙ্গীরের মতো। রাস্তার দু’ধারে গড়ে ওঠা এসব বাজারে যারা ক্রেতা তাদেরও মুখ্য বিষয় পছন্দ। তবে চাওয়া-পাওয়ার হিসাব খুবই সামান্য। যেখানে যাচাই-বাছাই চলে দীর্ঘক্ষণ, পকেটে যাতে টান না পড়ে সে চিন্তা আর পছন্দের পণ্যে অপলক চেয়ে থাকা।