পবিত্র ঈদুল ফিতরের ১৯৭তম জামাতের জন্য প্রায় প্রস্তুত কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। ঈদ জামাতে অংশ নিতে আসা মুসল্লিদের নিরাপত্তায় চার স্তরে কাজ করবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পূর্বের ঘটনার বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে শোলাকিয়ায়। মুসল্লিদের সঙ্গে মোবাইল না আনার বিষয়ে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে তাছাড়া ছাতা নেওয়ার ওপর দেওয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
ঈদুল ফিতরের দিন সকাল ১০টায় শুরু হবে জামাত। জামাতে ইমামতি করবেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ।
এদিকে সোমবার (৭ এপ্রিল) শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের সার্বিক পরিস্থিতি পরিদর্শন করেন শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, র্যাব-১৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ প্রমুখ।
ঈদগাহ ময়দান ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, এবারও ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ১০টায়। শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের সকল প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। এবারের ঈদের জামাতে মাস্ক, টুপি ও জায়নামাজ ছাড়া আর কিছু সঙ্গে নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না মুসল্লিরা। আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তার স্বার্থে মোবাইল ফোন না আনার জন্য নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এ ছাড়া ছাতা নিয়ে মাঠে প্রবেশ করতে পারবেন না। তবে বৃষ্টির দিন থাকলে আগের দিন জানিয়ে দেওয়া হবে, মাঠে ছাতা নিয়ে প্রবেশ করা যাবে কি না। শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে আগত মুসল্লিদের সুবিধার্থে ঈদের দিন কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ ও ভৈরব-কিশোরগঞ্জ রুটে শোলাকিয়া এক্সপ্রেস নামে দুটি স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে বলেও জানান তিনি।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, ২০১৬ সাল থেকে আমরা সব সময় বাড়তি ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। এবারও পূর্বের সকল বিষয় মাথায় রেখে নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে শোলাকিয়ায়। তাই আমরা কিছু বাড়তি আয়োজন করেছি। এর মধ্যে ইদগাহ ময়দানকে লক্ষ্য করে চার স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটি মানুষ যখন ঈদগাহ ময়দানে আসবেন পুলিশের চারটি স্থাপনা পেরিয়ে আসতে হবে। সেটি চেকপোস্ট হোক বা পিকেট হোক। আবার কোথাও কোথাও পাঁচ থেকে ছয়টি স্থাপনা পেরিয়ে ময়দানে আসতে হবে। এখানে ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে ছয়টি। তার মধ্যে র্যাব ব্যবহার করবে দুটি আর চারটি ব্যবহার করবে পুলিশ। মাঠে চারটি ড্রোন ক্যামেরা থাকবে। এ ছাড়া থাকবে ছয়টি ভিডিও ক্যামেরা।
ময়মনসিংহ র্যাব-১৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান জানান, স্নাইপার, ড্রোন ক্যামেরা ও দুটি ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। এ নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিতে শতাধিক র্যাব সদস্য মোতায়েন থাকবে। দুই থেকে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করবেন তারা। জঙ্গি হামলার কোনো হুমকি নেই বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ২০১৬ সালের ৭ জুলাই ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য, এক নারী এবং এক জঙ্গিসহ চারজন নিহত হন। এ জঙ্গি হামলায় পুলিশসহ ১৬ মুসল্লি আহত হন। তবু এ ঈদগাহ ময়দানের ধারাবাহিক জামাত আয়োজনে ছন্দপতন ঘটেনি। কিন্তু করোনা অতিমারির কারণে দুই বছর এ ঈদগাহ ময়দানে ঈদের কোনো জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি।
এই ঈদগাহের যাত্রা শুরু ১৭৫০ সালে। তবে ১৮২৮ সালে প্রথম আনুমানিক সোয়া লাখ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করেছিলেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। সেই থেকেই এই ঈদগাহসহ পুরো এলাকার নামকরণ হয় ‘শোলাকিয়া’। ১৮২৮ সাল থেকে জামাত গণনায় এবার ১৯৭তম জামাত হবে।
দীর্ঘ দিন আগে এ মাঠে অনুষ্ঠিত এক ঈদুল ফিতরের জামাতে কাতার গণনা করে ১ লাখ ২৫ হাজার মুসল্লির উপস্থিতি মিলে। তখন থেকেই এ ঈদগাহ ময়দানটিকে সোয়া লাখিয়া ঈদগাহ ময়দান হিসেবেও লোকজন ডাকতে শুরু করেন। পরবর্তীতে উচ্চারণ বিবর্তনে এ ঈদগাহ ময়দানের নাম শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান হিসেবেই সমধিক পরিচিত হয়ে ওঠে।