বিএনপি ইফতার পার্টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিএনপি তো ককটেল পার্টি করেনি, বিএনপি ইফতার পার্টি করেছে। ইফতার মাহফিল বা ইফতার পার্টি এটা হচ্ছে ধনী-গরীব নির্বিশেষে আশে-পাশের যারা মানুষ তাদেরকে নিয়ে। যুগ যুগ ধরে এই ইফতার পার্টি করা হয়েছে। এটা একটা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের রীতিতে পরিণত হয়েছে।
শুক্রবার (১২ এপ্রিল) সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
রিজভী বলেন, ‘এখানে অনেক গরীব মানুষ, ভিক্ষুক-নিঃস্ব যারা এই ইফতার পার্টিতে অংশগ্রহণ করে ক্ষুধা নিবৃত্ত করে। তাদের যে সিয়াম সাধনা, তারা যে রোজা রাখে, সারা দিন রোজার পর, না খেয়ে থাকার পর খাবার সংস্থান থাকে না। এই ইফতার মাহফিলের মধ্যদিয়ে তাদের খাবারের সংস্থান হয়। সেটিকে প্রধানমন্ত্রী ব্যাঙ্গ করছেন।
তিনি বলেন আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বিএনপি ইফতার মাহফিলের সিয়াম সাধনার মধ্যদিয়ে অনেক মানুষকে ধনী-গরীব-অসহায় মানুষকে নিয়ে ইফতার মাহফিলে বিশ্বাসী। আওয়ামী লীগ যে ককটেল পার্টিতে বিশ্বাস করে সেটিতে আমরা বিশ্বাস করি না।
রিজভী বলেন, ‘বিএনপির অনেক নেতাকর্মী যারা দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন, এই সম্প্রতি কারাগারে ছিলেন, কারাগার থেকে বেরিয়ে এসেছেন। যাদের অনেকের ব্যবসা-বানিজ্য কেড়ে নেওয়া হয়েছে, যারা পথের ফকিরে পরিণত হয়েছে, তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে দলের বিভিন্ন ইউনিট ইফতার পার্টি করার চেষ্টা করেছে। এজন্য আমরা গর্বিত।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, এবারের নাকি ঈদ স্বস্তিদায়ক হয়েছে। এবারের ঈদ স্বস্তিদায়ক সেটা ওবায়দুল কাদের সাহেবের কাছে, তার যে ক্ষমতাসীন দল তাদের কাছে স্বস্তিদায়ক। তাদের অর্থ-বিত্ত-টাকা কোনো কিছুর অভাব নেই। দেশে বিদেশে অনেক অর্থ-বিত্তের মালিক হয়েছেন তাদের কাছে ঈদ স্বস্তিদায়ক হয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে ঈদ স্বস্তিদায়ক হয়নি।
রিজভী বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে চলেছে সরকারের অপব্যবস্থাপনা। সরকারের নানা ধরনের নীতির কারণে যে হয়রানি এবং দুর্বিসহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেটা ওবায়দুল কাদের সাহেবরা হয়ত লক্ষ্য করছেন না। তিনি তো মন্ত্রীর যে গরম সেই গরমে মধ্যে উঞ্চ হয়ে আছেন। তিনি তো জনগনের দিতে তাকিয়ে দেখছেন না যে, ঈদের দিন কি হয়েছে।
তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রীর দায়িত্বে। গতকাল ঈদের দিনেই ১০ জন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। এমনকি লঞ্চে করে ঈদের দিন বাড়িতে যেতে গিয়ে লাশ হয়ে গেছেন। ঈদের দিন ভিড় কম হবে ভেবে বিল্লাহ তার পরিবার নিয়ে বাড়ি যেতে চেয়েছিলেন। বেপোরোয়া গতিতে লঞ্চের ধাক্কায় এক পরিবারের তিনজনসহ ৫ জন ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছেন। তারা ঈদের দিন বাড়ি যাচ্ছিল তারা লাশ হয়ে ফিরে আসলো। ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনার স্বস্তি থাকতে পারে, আপনার নেতাদের স্বস্তি থাকতে পারে, আপনাদের মন্ত্রীর স্বস্তি থাকতে পারে কিন্তু সাধারণ মানুষের স্তস্তি নেই, এটাই বাস্তবতা।
রিজভী আরও বলেন, রাজধানী শহর যেন আগুনের নরককুণ্ড। কিছুদিন আগে বেইলি রোডে, বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ঈদের দিনে এবং আজকেও অগ্নিদগ্ধ হয়ে ৬/৭ জন মানুষ এখন কাতরাচ্ছে। তাদের জীবন এখন আশঙ্কাজনক।
তিনি বলেন, এই তো ঈদের উপহার সরকারের পক্ষ থেকে। কারণ সরকারের অব্যবস্থাপনার কারণে, তারা চোখ অন্য দিকে ফিরিয়ে রাখার কারণে জনগনের যে দুরাবস্থা সেদিকে নজর দেননি।