চৈত্রের শেষ সপ্তাহে বেড়েছে রোদের উত্তাপ। প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস সাধারণ মানুষ। রাজধানীসহ অনেক জেলায় বইছে মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ। ঢাকাসহ দেশের ৬ বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও ৩৯ ডিগ্রির ঘরে বিরাজ করছে। এর মধ্যেই নতুন করে দুঃসংবাদ দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
সংস্থাটি জানিয়েছে, চলমান তাপপ্রবাহ বিস্তার লাভ করতে পারে। পাশাপাশি আগামী ৫ দিনে তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। তবে এই সময়ে বেশকিছু অঞ্চলে ঝরতে পারে স্বস্তির বৃষ্টি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৭২ ঘণ্টার (৩ দিন) সর্বশেষ পূর্বাভাসে এমন তথ্য জানানো হয়েছে।
আবহাওয়া অফিস বলছে, গত বছরের চেয়ে এবার পুরো বছরজুড়ে তাপমাত্রা বেশি থাকবে। এর মধ্যে এপ্রিলে গরমের তীব্রতা পৌঁছাতে পারে সর্বোচ্চ পর্যায়ে।
সংকট সমাধানে ঢাকায় দুটি বনাঞ্চল তৈরির উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) চিফ হিট অফিসার।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি হওয়ায় গরমে অস্বস্তি আরও বাড়ছে। ২০২৩ সালের তুলনায় এবছর তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।
বাংলাদেশে সাধারণত মার্চ থেকে মে মাসকে বছরের উষ্ণতম সময় ধরা হয়। এর মধ্যে এপ্রিল মাসেই সাধারণত তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি থাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বিচারে গাছ কাটা, জলাশয় ভরাট করা, এসির অত্যধিক ব্যবহারের কারণে রাজধানীর তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে।
বুশরা আফরিন বলেন, সংকট মোকাবিলায় ঢাকায় দুটি বনাঞ্চল তৈরি করা হবে। এতে করে ঢাকায় গাছের পরিমাণ বাড়বে। কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরতে পারে। রাজধানীর ফাঁকা জায়গাগুলোতে আরও বেশি গাছ লাগানো হবে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের গত কয়েকদিনের পূর্বাভাসের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে এখন বেশি তাপমাত্রা বিরাজ করছে।
এর কারণ হিসেবে আবহাওয়াবিদরা জানান, বাংলাদেশের ঐ অঞ্চলের দিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তরপ্রদেশ ইত্যাদি রাজ্যের অবস্থান। কিন্তু এইসব প্রদেশের তাপমাত্রা অনেক বেশি। এসব জায়গায় বছরের এই সময়ে তাপমাত্রা ৪২ থেকে ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মাঝে ওঠানামা করে।
এনিয়ে আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, গত বছর ভারতের ওইসব অঞ্চলের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যেহেতু ওগুলো উত্তপ্ত অঞ্চল, তাই ওখানকার গরম বাতাস চুয়াডাঙ্গা, যশোর, কুষ্টিয়া, রাজশাহী হয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এবং তা আমাদের তাপমাত্রাকে গরম করে দেয়।
এই আন্তঃমহাদেশীয় বাতাসের চলাচল ও স্থানীয় পর্যায়েও তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে দেশব্যাপী এবছর তাপপ্রবাহ তুলনামূলক বেশি থাকতে পারে বলে মনে করেন এই আবহাওয়াবিদ।
ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘বিগত বছরের বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে এটা প্রতীয়মান হচ্ছে যে ২০২৪ সাল উত্তপ্ত বছর হিসেবে যাবে। আমরা এ বছর তাপপ্রবাহের দিন এবং হার বেশি পেতে যাচ্ছি।’
আজ ঢাকাসহ দেশের ৬টি বিভাগের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ বিস্তার লাভ করতে পারে এবং পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
সংস্থাটি জানিয়েছে, রাজশাহী, খুলনা, ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে চলমান মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ দেশের অন্যত্র বিস্তার লাভ করতে পারে এবং আজ (১৩ এপ্রিল) থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে।
অন্যদিকে, আগামীকাল রোববার (১৪ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। পাশাপাশি এই সময়ে বিরাজমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। সেই সঙ্গে সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
এছাড়া আগামী সোমবার (১৫ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। তবে এই সময়েও বিরাজমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। পাশাপাশি সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এছাড়া আগামী ৫ দিনে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং দেশের পূর্বাংশে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে।