ঢাকা ০৪:৫১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी
ব্রেকিং নিউজ ::
ইসরায়েল ও ইরানের সংঘাত: বাংলাদেশিদের জন্য হটলাইন সেবা চালু করা হয়েছে দুতাবাস। ইরানে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের + ৯৮৯908577368 ও + ৯৮৯১22065745 নম্বরে (হোয়াটসঅ্যাপ সহ) যোগাযোগ করতে বলেছে দূতাবাস কর্তৃপক্ষ।

মালদ্বীপের নির্বাচনে চীনপন্থি মুইজ্জুর দলের বড় জয়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০১:৫৫:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ এপ্রিল ২০২৪
  • / ৪৭৬ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মালদ্বীপের পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জুর নেতৃত্বাধীন দল পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেস (পিএনসি) বেশ বড় জয় পেয়েছে। গতকাল রোববার (২১ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল এটাই দেখাচ্ছে যে, দেশটির ভোটাররা আঞ্চলিক শক্তিধর ও ঐতিহ্যগত শুভাকাঙ্ক্ষী দেশ ভারতের বলয় থেকে বেরিয়ে এসে মুইজ্জুর চীনপন্থি নীতির প্রতি ঝুঁকে পড়ার বিষয়টিতে ব্যাপক সাড়া দিয়েছে। খবর এএফপির।

মালদ্বীপের নির্বাচন কমিশনের সরবরাহ করা প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, ৯৩ আসনের পার্লামেন্ট নির্বাচনে মুইজ্জুর দল পিএনসি দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসনে বিজয়ী হয়েছে। এ পর্যন্ত ৮৬টি আসনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে এবং এরমধ্যে পিএনসি পেয়েছে ৬৬টি আসন। আনুষ্ঠানিক বা সরকারিভাবে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করতে এক সপ্তাহ লেগে যাবে আর নতুন পার্লামেন্টের অধিবেশ শুরু হবে মে মাসের শুরুতে।

মালদ্বীপের স্থানীয় সংবাদপত্র ‘মিহারু’র প্রতিবেদন অনুসারে এই নির্বাচনে ৪১ জন নারী প্রার্থী অংশ নেয়। তবে তাদের মধ্যে কেবলমাত্র তিনজন জয়ী হয়ে আসতে পেরেছেন আর তারা মুইজ্জুর দলেরই সদস্য।

এই নির্বাচনকে চীনের সঙ্গে দেশটির ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সহযোগিতা স্থাপনে প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছিল। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ছিল বিতর্কিতভাবে পুনরুদ্ধার করা জমিতে হাজার হাজার অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণের উদ্যোগ।

গত মেয়াদে পিএনসি ও তার মিত্রদের পার্লামেন্টে আসন ছিল মাত্র আটটি। যার কারণে দলটি ছিল কোণঠাসা অবস্থায়। যদিও গত বছরের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এই জোটের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছিলেন মোহামেদ মুইজ্জু।

ফলাফল অনুসারে গত মেয়াদে ‘সুপার মেজরিটির’ তকমাধারী মালদ্বিভিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টি (এমডিপি) মাত্র ডজনখানেক আসন নিয়ে বেশ বেকায়দায়ই পড়েছে। এই দলটি ভারতপন্থি হিসেবেই বেশি পরিচিত যার নেতৃত্বে রয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ।

গতকাল রোববার প্রথম ভোটার হিসেবে রাজধানী মালের একটি কেন্দ্রে নিজের ভোট দেওয়ার পর মোহামেদ মুইজ্জু মালদ্বীপের ভোটারদের প্রতি ব্যাপকভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

বিষুবরেখা জুড়ে ৮০০ কিরোমিটার ব্যাপ্তি নিয়ে এক হাজার ১৯২টি প্রবাল দ্বীপের এই দেশটি বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার কারণে নিজের অস্তিত্বের ঝুঁকির মুখে রয়েছে।

বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও দেশটির সাবেক নির্মাণবিষয়ক মন্ত্রী মুইজ্জু বেশ কিছু উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে সরকারি জমি পুনরুদ্ধার ও দ্বীপগুলোকে উঁচু করে ফেলার মতো কাজ যার ফলে সমুদ্রের ঢেউ কোনো ক্ষতি করতে পারবে না নাগরিকদের বসবাসের ক্ষেত্রে। তবে পরিবেশবাদীরা বলছেন তার এই পরিকল্পনা বন্যার ঝুঁকিকে আরও বাড়িয়ে দেবে।

প্রাচীন সাদা বালিরর সমুদ্র সৈকত ও নিরিবিলি রিসোর্টের কারণে মালদ্বীপ অন্যতম শীর্ষ বিলাসবহুল অবকাশ গন্তব্য হিসেবে বিশেষভাবে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। তবে সাম্প্রতি সময়ে এটি অন্যতম ভূরাজনৈতিক ‘হটস্পট’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে যার প্রধান কারণ এই দ্বীপপুঞ্জের পাশ ঘিরেই রয়েছে পূর্ব ও পশ্চিমের সংযোগকারী আন্তর্জাতিক নৌবাণিজ্যের রুট।

এ মাসের নির্বাচনি প্রচার চলাকালেই মুইজ্জু চীনা রাষ্ট্রীয় কোম্পানির সঙ্গে তার হাইপ্রোফাইল অবকাঠামো নির্মাণ পরিকল্পনার বিষয়ে চুক্তি সেরে ফেলেন। তার নেতৃত্বাধীন প্রশাসন মালদ্বীপের বিশাল সমুদ্রসীমা নজরদারির কাজে নিয়োজিত ৮৯ জন ভারতীয় সৈন্যের বহরকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়েও বেশ তৎপর রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

মালদ্বীপের নির্বাচনে চীনপন্থি মুইজ্জুর দলের বড় জয়

আপডেট সময় : ০১:৫৫:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ এপ্রিল ২০২৪

মালদ্বীপের পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জুর নেতৃত্বাধীন দল পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেস (পিএনসি) বেশ বড় জয় পেয়েছে। গতকাল রোববার (২১ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল এটাই দেখাচ্ছে যে, দেশটির ভোটাররা আঞ্চলিক শক্তিধর ও ঐতিহ্যগত শুভাকাঙ্ক্ষী দেশ ভারতের বলয় থেকে বেরিয়ে এসে মুইজ্জুর চীনপন্থি নীতির প্রতি ঝুঁকে পড়ার বিষয়টিতে ব্যাপক সাড়া দিয়েছে। খবর এএফপির।

মালদ্বীপের নির্বাচন কমিশনের সরবরাহ করা প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, ৯৩ আসনের পার্লামেন্ট নির্বাচনে মুইজ্জুর দল পিএনসি দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসনে বিজয়ী হয়েছে। এ পর্যন্ত ৮৬টি আসনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে এবং এরমধ্যে পিএনসি পেয়েছে ৬৬টি আসন। আনুষ্ঠানিক বা সরকারিভাবে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করতে এক সপ্তাহ লেগে যাবে আর নতুন পার্লামেন্টের অধিবেশ শুরু হবে মে মাসের শুরুতে।

মালদ্বীপের স্থানীয় সংবাদপত্র ‘মিহারু’র প্রতিবেদন অনুসারে এই নির্বাচনে ৪১ জন নারী প্রার্থী অংশ নেয়। তবে তাদের মধ্যে কেবলমাত্র তিনজন জয়ী হয়ে আসতে পেরেছেন আর তারা মুইজ্জুর দলেরই সদস্য।

এই নির্বাচনকে চীনের সঙ্গে দেশটির ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সহযোগিতা স্থাপনে প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছিল। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ছিল বিতর্কিতভাবে পুনরুদ্ধার করা জমিতে হাজার হাজার অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণের উদ্যোগ।

গত মেয়াদে পিএনসি ও তার মিত্রদের পার্লামেন্টে আসন ছিল মাত্র আটটি। যার কারণে দলটি ছিল কোণঠাসা অবস্থায়। যদিও গত বছরের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এই জোটের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছিলেন মোহামেদ মুইজ্জু।

ফলাফল অনুসারে গত মেয়াদে ‘সুপার মেজরিটির’ তকমাধারী মালদ্বিভিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টি (এমডিপি) মাত্র ডজনখানেক আসন নিয়ে বেশ বেকায়দায়ই পড়েছে। এই দলটি ভারতপন্থি হিসেবেই বেশি পরিচিত যার নেতৃত্বে রয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ।

গতকাল রোববার প্রথম ভোটার হিসেবে রাজধানী মালের একটি কেন্দ্রে নিজের ভোট দেওয়ার পর মোহামেদ মুইজ্জু মালদ্বীপের ভোটারদের প্রতি ব্যাপকভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

বিষুবরেখা জুড়ে ৮০০ কিরোমিটার ব্যাপ্তি নিয়ে এক হাজার ১৯২টি প্রবাল দ্বীপের এই দেশটি বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার কারণে নিজের অস্তিত্বের ঝুঁকির মুখে রয়েছে।

বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও দেশটির সাবেক নির্মাণবিষয়ক মন্ত্রী মুইজ্জু বেশ কিছু উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে সরকারি জমি পুনরুদ্ধার ও দ্বীপগুলোকে উঁচু করে ফেলার মতো কাজ যার ফলে সমুদ্রের ঢেউ কোনো ক্ষতি করতে পারবে না নাগরিকদের বসবাসের ক্ষেত্রে। তবে পরিবেশবাদীরা বলছেন তার এই পরিকল্পনা বন্যার ঝুঁকিকে আরও বাড়িয়ে দেবে।

প্রাচীন সাদা বালিরর সমুদ্র সৈকত ও নিরিবিলি রিসোর্টের কারণে মালদ্বীপ অন্যতম শীর্ষ বিলাসবহুল অবকাশ গন্তব্য হিসেবে বিশেষভাবে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। তবে সাম্প্রতি সময়ে এটি অন্যতম ভূরাজনৈতিক ‘হটস্পট’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে যার প্রধান কারণ এই দ্বীপপুঞ্জের পাশ ঘিরেই রয়েছে পূর্ব ও পশ্চিমের সংযোগকারী আন্তর্জাতিক নৌবাণিজ্যের রুট।

এ মাসের নির্বাচনি প্রচার চলাকালেই মুইজ্জু চীনা রাষ্ট্রীয় কোম্পানির সঙ্গে তার হাইপ্রোফাইল অবকাঠামো নির্মাণ পরিকল্পনার বিষয়ে চুক্তি সেরে ফেলেন। তার নেতৃত্বাধীন প্রশাসন মালদ্বীপের বিশাল সমুদ্রসীমা নজরদারির কাজে নিয়োজিত ৮৯ জন ভারতীয় সৈন্যের বহরকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়েও বেশ তৎপর রয়েছে।