পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ইউরোপের সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র গ্রোনিংগেন। ভূমিকম্পের ঝুঁকি সীমিত করার উদ্দেশ্যে সম্প্রতি নেদারল্যান্ডসের উত্তরাঞ্চলের গ্যাসক্ষেত্রটির খনন কার্যক্রম স্থায়ীভাবে বন্ধের অনুমতি দেয় দেশটির সরকার।
অবশ্য আগেই গ্রোনিংগেন থেকে উত্তোলন সীমিত করা হয়েছিল। গত অক্টোবরে পূর্ণ সক্ষমতার চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ উত্তোলন কমিয়ে আনা হয়। ভূমিকম্পের ঝুঁকি কমিয়ে আনতে কয়েক বছর ধরে এ চেষ্টা করছিল গ্রোনিংগেন কর্তৃপক্ষ। তবে গত দুই বছরের তীব্র শীত ও রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষের কারণে সৃষ্ট জ্বালানি বাজারের অস্থিতিশীলতার কারণে এতদিন গ্যাসক্ষেত্রটির ১১টি কূপ উন্মুক্ত ছিল।
চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে গ্যাসক্ষেত্রটি বন্ধ করতে একটি আইনে অনুমোদন দেয় ডাচ সিনেট। দুই সপ্তাহ আগে আইনটি পাসে প্রাথমিক পরিকল্পনায় থাকলেও অভ্যন্তরীণ গ্যাসের সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগের মুখে চূড়ান্ত ভোটাভুটি স্থগিত হয়েছিল।
ভোট স্থগিতের পর উত্তরাঞ্চলের প্রাদেশিক সরকারসহ স্থানীয় কর্মকর্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এমনকি শিগগিরই গ্রোনিংগেন গ্যাসক্ষেত্র বন্ধ করা না হলে পদত্যাগ করার ঘোষণাও দিয়েছিলেন নেদারল্যান্ডসের খনিজ সম্পদ বিষয়ক মন্ত্রী হান্স ভিজলব্রিফ। তার মতে, খনি বন্ধের বিষয়ে বেশি দেরি হলে ওই অঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য ভূমিকম্পের ঝুঁকি ক্রমাগত বাড়বে।
১৯৬৩ সালে প্রথমবার চালু হয় ইউরোপের বৃহত্তম এ গ্যাসক্ষেত্র। গত ছয় দশকের ডাচ অর্থনীতিতে মুখ্য ভূমিকা রেখে আসছিল গ্রোনিংগেন। উত্তোলন বন্ধ করে দেওয়া হলেও এখনও সাইটটিতে গ্যাসের বিশাল মজুদ রয়েছে। ১০ বছর আগেও এখান থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার কোটি ঘনমিটার গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছিল।
এদিকে নেদারল্যান্ডসের উত্তরাঞ্চলে ১৯৮৬ সাল থেকে ১ হাজার ৬০০টিরও বেশি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে। এসব প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৮৫ হাজার ভবন। তবে শুধু গ্যাস উত্তোলন বন্ধের মাধ্যমে এ অঞ্চলে ভূমিকম্প প্রতিরোধ করা সম্ভব কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ। গ্যাসক্ষেত্রের ফাঁকা কূপের কারণে ভূমিকম্পের ঝুঁকি রয়ে যাবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
এ সাইট থেকে গ্যাস উত্তোলন বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে সরকার ক্ষতিপূরণ দেবে কি না সে বিষয়ে তর্ক তৈরি হয় সম্প্রতি। ওই সময় আদালতের দ্বারস্থ হয় জ্বালানি জায়ান্ট শেল ও এক্সনের যৌথ কোম্পানি এনএএম।
গ্রোনিংগেন গ্যাসক্ষেত্র থেকে মুনাফা বাবদ নেদারল্যান্ডস সরকার ৬০ বছরের বেশি সময়ে আয় করেছে ৩৮ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। একইসময়ে শেল ও এক্সনের লাভের পরিমাণ ছিল প্রায় ৬ হাজার ৬০০ কোটি ডলার।