ঢাকা ১১:০৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी
ব্রেকিং নিউজ ::
ইসরায়েল ও ইরানের সংঘাত: বাংলাদেশিদের জন্য হটলাইন সেবা চালু করেছে দুতাবাস। ইরানে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের + ৯৮৯908577368 ও + ৯৮৯১22065745 নম্বরে (হোয়াটসঅ্যাপ সহ) যোগাযোগ করতে বলেছে দূতাবাস কর্তৃপক্ষ।

উত্তরের জনপদে পানির সংকট, হুমকির মুখে ৫৪ নদী

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০১:৫৩:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
  • / ৪৪৫ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

চলমান তাপপ্রবাহের সঙ্গে উত্তরের জনপদে পানির সংকট যুক্ত হয়েছে। টিউবওয়েল থাকলেও অনেক বাড়িতে সুপেয় পানি মিলছে না। মাটির নিচে গর্ত খুঁড়েও ডিজেল পাম্পে জুটছে না সেচের জল। তৃষ্ণা মেটাতে গুণতে হচ্ছে বাড়তি অর্থ।

এদিকে, ফারাক্কা বাঁধের প্রভাবে দেশের উত্তরাঞ্চলের প্রায় দুই কোটি মানুষ প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশের অন্যতম প্রধান নদী পদ্মায় শুষ্ক মৌসুমে পানি কমে যাচ্ছে। এতে পদ্মার অববাহিকায় থাকা ৫৪টি নদী হুমকির মুখে পড়েছে। এমন পরিস্থিতির জন্য কূটনৈতিক দুর্বলতাকে দায়ী করছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, এতে এ অঞ্চলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।

ভারতে ফারাক্কা বাঁধ দেওয়ার পর শুষ্ক মৌসুমে পদ্মায় পানি সংকট দেখা দেয়। ১৯৭৭ সালে গঙ্গার পানির চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে এর সমাধান খোঁজা হয়। সেখানে ৮০ ভাগ পানি পাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের, ছিল গ্যারেন্টি ক্লজ। তবে ১৯৮২ সালে বাদ দেওয়া হয় গ্যারেন্টি ক্লজ। সবশেষ ১৯৯৬ সালে ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গা চুক্তিতেও তা বাদ পড়ে। চুক্তি অনুযায়ী জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ১০ দিন পর পর ৩৫ হাজার কিউসেক পানি পাবে উভয় দেশ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, চুক্তি অনুযায়ী পানি পেলেও পদ্মার মতো বিশাল নদীর জন্য তা সামান্য। আর পরিবেশবিদেরা বলছেন, এর জন্য দায়ী কূটনৈতিক দুর্বলতা।

রাজশাহী পানি বিজ্ঞান উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোজাম্মেল হক জানান, পদ্মার মতো বড় নদীতে মাত্র ৩৫ হাজার কিউসেক পানি খুবই নগণ্য। বিশেষ করে কৃষির সেচ কাজে খুবই নগণ্য।

পানির অভাবে রুটি-রুজির কৃষিতে যোগ হচ্ছে একের পর এক চ্যালেঞ্জ। যার মধ্যে বোরো মৌসুমে জমিতে সেচের জন্য এখন বাড়তি খরচের সাথে যোগ হয়েছে দুর্ভোগ আর কষ্ট। এই যেমন ভুট্টু মিয়ার মতো কৃষকদের অনেকে মাটি খুঁড়ে ডিজেলচালিত পাম্প বসিয়ে বোরো আবাদ বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।

ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পানি না ওঠায় বছর ছয়েক আগে সংকট মোকাবিলায় নিজেদের বুদ্ধিতে মাটি খুঁড়ে মেশিন বসিয়ে পানি উত্তোলন করলেও এখন আর সম্ভব হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে তারা ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ করে সাবমার্সিবল পাম্প স্থাপন করেছে।

এক কৃষক বলেন, ‘প্রথমে পাঁচ-ছয় ফুট গভীর করে স্যালো মেশিন বসালাম। তখন পানি পেতাম, কিন্তু দিনের পর দিন পানি আর ওঠে না। বাধ্য হয়ে আমাদেরকে সাবমার্সবল পাম্প বসাতে হচ্ছে। খরচও বেশি হচ্ছে।’

সেচের পাশাপাশি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ ও নরেঙ্গাসহ আশেপাশের গ্রামগুলোর টিউবওয়েলে সুপেয় পানি পাওয়া যাচ্ছে না। টানা পাঁচ মিনিট টিউবওয়েল চাপার পর মগ ভরাতে ঘাম ঝড়াতে হয় গ্রামবাসীকে। সামর্থ্যবানরা সাবমার্সিবল পাম্প বসিয়ে পানি পেলেও খুকি ও বিউটি বেগমের মতো গরিব মানুষদের পানির ভরসা করতোয়া নদী। প্রতি বছর ফাল্গুন থেকে জৈষ্ঠ্যের শেষ সময় পর্যন্ত এমন দুর্ভোগে পড়লেও এ অঞ্চলে এবার প্রকট আকার ধারণ করেছে পানির সংকট।

গ্রামবাসীরা বলেন, ‘নদীর পানিই ব্যবহার করতে হচ্ছে। মানুষের বাড়ির থেকে কতবার পানি আনা যায়। ফাল্গুন মাস থেকেই আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে।‘

বছর বছর ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় গ্রামের পাশাপাশি গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভা, শহরতলী ছাড়াও পাশের জেলা দিনাজপুরের হাকিমপুর, বিরামপুর, নবাবগঞ্জ, ঘোড়াঘাট, জয়পুরহাটের কালাই, বগুড়ার শিবগঞ্জ এলাকাতেও প্রায় একই চিত্র।

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মুকিতুর রহমান রাফি বলেন, আয়রনমুক্ত পানি পেতে গভীর নলকূপের প্রয়োজন হচ্ছে। আমরা এ বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি।’

বগুড়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সিনিয়র কেমিস্ট আব্দুল জব্বার বলেন, ‘আসলে ভূগর্ভস্থ পানি বেশি ব্যবহার করছি। আমাদের নদীও শুকিয়ে গেছে, সেখানেও পানি পাচ্ছি না।’

পানির অপচয় রোধ করে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহারে আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমির গবেষক ফেরদৌস হোসেন খান।

দেশে প্রতি বছর ভূগর্ভ থেকে ৩০ দশমিক দুই এক ঘন কিলোমিটার পানি উত্তোলন করা হয়। যার ৮৬ শতাংশই ব্যবহার হয় সেচ কাজে। এর বাইরেও খাবার পানি, পয়ঃনিষ্কাশন এবং শিল্পক্ষেত্র ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে নদ-নদীগুলোতে পানি কমে যাওয়ায় ভূগর্ভে তেমন পানির পুনর্ভরন হচ্ছে না।

নিউজটি শেয়ার করুন

উত্তরের জনপদে পানির সংকট, হুমকির মুখে ৫৪ নদী

আপডেট সময় : ০১:৫৩:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

চলমান তাপপ্রবাহের সঙ্গে উত্তরের জনপদে পানির সংকট যুক্ত হয়েছে। টিউবওয়েল থাকলেও অনেক বাড়িতে সুপেয় পানি মিলছে না। মাটির নিচে গর্ত খুঁড়েও ডিজেল পাম্পে জুটছে না সেচের জল। তৃষ্ণা মেটাতে গুণতে হচ্ছে বাড়তি অর্থ।

এদিকে, ফারাক্কা বাঁধের প্রভাবে দেশের উত্তরাঞ্চলের প্রায় দুই কোটি মানুষ প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশের অন্যতম প্রধান নদী পদ্মায় শুষ্ক মৌসুমে পানি কমে যাচ্ছে। এতে পদ্মার অববাহিকায় থাকা ৫৪টি নদী হুমকির মুখে পড়েছে। এমন পরিস্থিতির জন্য কূটনৈতিক দুর্বলতাকে দায়ী করছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, এতে এ অঞ্চলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।

ভারতে ফারাক্কা বাঁধ দেওয়ার পর শুষ্ক মৌসুমে পদ্মায় পানি সংকট দেখা দেয়। ১৯৭৭ সালে গঙ্গার পানির চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে এর সমাধান খোঁজা হয়। সেখানে ৮০ ভাগ পানি পাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের, ছিল গ্যারেন্টি ক্লজ। তবে ১৯৮২ সালে বাদ দেওয়া হয় গ্যারেন্টি ক্লজ। সবশেষ ১৯৯৬ সালে ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গা চুক্তিতেও তা বাদ পড়ে। চুক্তি অনুযায়ী জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ১০ দিন পর পর ৩৫ হাজার কিউসেক পানি পাবে উভয় দেশ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, চুক্তি অনুযায়ী পানি পেলেও পদ্মার মতো বিশাল নদীর জন্য তা সামান্য। আর পরিবেশবিদেরা বলছেন, এর জন্য দায়ী কূটনৈতিক দুর্বলতা।

রাজশাহী পানি বিজ্ঞান উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোজাম্মেল হক জানান, পদ্মার মতো বড় নদীতে মাত্র ৩৫ হাজার কিউসেক পানি খুবই নগণ্য। বিশেষ করে কৃষির সেচ কাজে খুবই নগণ্য।

পানির অভাবে রুটি-রুজির কৃষিতে যোগ হচ্ছে একের পর এক চ্যালেঞ্জ। যার মধ্যে বোরো মৌসুমে জমিতে সেচের জন্য এখন বাড়তি খরচের সাথে যোগ হয়েছে দুর্ভোগ আর কষ্ট। এই যেমন ভুট্টু মিয়ার মতো কৃষকদের অনেকে মাটি খুঁড়ে ডিজেলচালিত পাম্প বসিয়ে বোরো আবাদ বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।

ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পানি না ওঠায় বছর ছয়েক আগে সংকট মোকাবিলায় নিজেদের বুদ্ধিতে মাটি খুঁড়ে মেশিন বসিয়ে পানি উত্তোলন করলেও এখন আর সম্ভব হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে তারা ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ করে সাবমার্সিবল পাম্প স্থাপন করেছে।

এক কৃষক বলেন, ‘প্রথমে পাঁচ-ছয় ফুট গভীর করে স্যালো মেশিন বসালাম। তখন পানি পেতাম, কিন্তু দিনের পর দিন পানি আর ওঠে না। বাধ্য হয়ে আমাদেরকে সাবমার্সবল পাম্প বসাতে হচ্ছে। খরচও বেশি হচ্ছে।’

সেচের পাশাপাশি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ ও নরেঙ্গাসহ আশেপাশের গ্রামগুলোর টিউবওয়েলে সুপেয় পানি পাওয়া যাচ্ছে না। টানা পাঁচ মিনিট টিউবওয়েল চাপার পর মগ ভরাতে ঘাম ঝড়াতে হয় গ্রামবাসীকে। সামর্থ্যবানরা সাবমার্সিবল পাম্প বসিয়ে পানি পেলেও খুকি ও বিউটি বেগমের মতো গরিব মানুষদের পানির ভরসা করতোয়া নদী। প্রতি বছর ফাল্গুন থেকে জৈষ্ঠ্যের শেষ সময় পর্যন্ত এমন দুর্ভোগে পড়লেও এ অঞ্চলে এবার প্রকট আকার ধারণ করেছে পানির সংকট।

গ্রামবাসীরা বলেন, ‘নদীর পানিই ব্যবহার করতে হচ্ছে। মানুষের বাড়ির থেকে কতবার পানি আনা যায়। ফাল্গুন মাস থেকেই আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে।‘

বছর বছর ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় গ্রামের পাশাপাশি গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভা, শহরতলী ছাড়াও পাশের জেলা দিনাজপুরের হাকিমপুর, বিরামপুর, নবাবগঞ্জ, ঘোড়াঘাট, জয়পুরহাটের কালাই, বগুড়ার শিবগঞ্জ এলাকাতেও প্রায় একই চিত্র।

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মুকিতুর রহমান রাফি বলেন, আয়রনমুক্ত পানি পেতে গভীর নলকূপের প্রয়োজন হচ্ছে। আমরা এ বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি।’

বগুড়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সিনিয়র কেমিস্ট আব্দুল জব্বার বলেন, ‘আসলে ভূগর্ভস্থ পানি বেশি ব্যবহার করছি। আমাদের নদীও শুকিয়ে গেছে, সেখানেও পানি পাচ্ছি না।’

পানির অপচয় রোধ করে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহারে আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমির গবেষক ফেরদৌস হোসেন খান।

দেশে প্রতি বছর ভূগর্ভ থেকে ৩০ দশমিক দুই এক ঘন কিলোমিটার পানি উত্তোলন করা হয়। যার ৮৬ শতাংশই ব্যবহার হয় সেচ কাজে। এর বাইরেও খাবার পানি, পয়ঃনিষ্কাশন এবং শিল্পক্ষেত্র ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে নদ-নদীগুলোতে পানি কমে যাওয়ায় ভূগর্ভে তেমন পানির পুনর্ভরন হচ্ছে না।