গাজায় ইসরায়েলি হামলা নিয়ে বিভক্ত মার্কিন প্রশাসন
- আপডেট সময় : ০৩:০৭:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
- / ৪০১ বার পড়া হয়েছে
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী গত ছয় মাসের বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। এ যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া অস্ত্র আন্তর্জাতিক আইন মেনে ইসরায়েল ব্যবহার করছে কি না, এ নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে মার্কিন প্রশাসন।
ইসরায়েল বলছে, তারা আন্তর্জাতিক আইন মেনে গাজায় মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করছে। তবে কিছু মার্কিন কর্মকর্তা আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে জানিয়েছেন, ইসরায়েলের এই প্রতিশ্রুতির পক্ষে তারা বিশ্বাসযোগ্য কোনো প্রমাণ পায়নি।
এ সংক্রান্ত মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি অভ্যন্তরীণ মেমো বার্তা সংস্থা রয়টার্স পেয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একটি জাতীয় নিরাপত্তা স্মারক (এনএসএম) জারি করে। সেখানে বলা হয়, গাজায় যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা অস্ত্র আন্তর্জাতিক আইন মেনে ইসরায়েল ব্যবহার করছে কি না, তা নিয়ে ব্লিঙ্কেনকে অবশ্যই 8 মে-এর মধ্যে কংগ্রেসে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।
২৪ মার্চের মধ্যে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাতটি ব্যুরো তাদের মতামতের মেমো ব্লিঙ্কেনকে পাঠান। একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘কিছু মতামত ইসরায়েলের পক্ষে গেছে। আবার কিছু ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গেছে। আবার কেউ কেউ কোনো পক্ষই নেয়নি।’
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডেমোক্রেসি হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড লেবার, পপুলেশন, রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেশন, গ্লোবাল ক্রিমিনাল জাস্টিস অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অ্যাফেয়ার্স গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে।
এই চারটি ব্যুরো জানায়, ইসরায়েলের পক্ষ থেকে তারা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন না করার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পায়নি। সেইসঙ্গে তারা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর আটটি অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাদের দাবি, এগুলোর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের সম্ভাব্য লঙ্ঘন সম্পর্কে গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপন করা যেতে পারে।
রয়টার্স দ্বারা পর্যালোচনা করা আরেকটি মেমোতে দেখা যায়, মার্কিন সামরিক সহায়তা এবং অস্ত্র স্থানান্তরের সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যুরো অফ পলিটিক্যাল অ্যান্ড মিলিটারি অ্যাফেয়ার্স ব্লিঙ্কেনকে সতর্ক বার্তা দিয়েছে। সেখানে বলা হয়, মার্কিন অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করা হলে নিজেদের আকাশসীমার বাইরে সম্ভাব্য হুমকি প্রতিরোধের ক্ষমতা ইসরায়েলের কমে যাবে। মার্কিন অস্ত্র বিক্রির যে কোনো স্থগিতাদেশ ইরান এবং জোটবদ্ধ মিলিশিয়াদের উস্কানিকে আমন্ত্রণ জানাবে। তবে এই মেমোতে ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন নিয়ে কিছু বলা হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের অফিস অব দ্য স্পেশাল এনভয় টু মনিটর কমব্যাট অ্যান্টিসেমিটিজম জানায়, তারা ইসরায়েলের প্রতিশ্রুতির বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পেয়েছে।
তবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের লিগ্যাল ব্যুরো আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন নিয়ে ইসরায়েলের প্রতিশ্রুতি নিয়ে কোনো গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান নেয়নি। এ নিয়ে দপ্তরটির মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন যে, তারা ফাঁস হওয়া নথিগুলোর বিষয়ে মন্তব্য করে না।
এর আগে বাইডেন প্রশাসন বারবারই বলেছে যে, গাজায় আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ইসরায়েল হামলা চালাচ্ছে তার প্রমাণ তারা পায়নি। এক মার্কিন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ব্লিঙ্কেন ইসরায়েল সম্পর্কে ব্যুরোর সমস্ত মূল্যায়ন দেখেছেন।
মেমো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেছেন, ‘ইসরায়েল নিজেদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সম্পূর্ণভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এর মধ্যে মার্কিন সরকারকে দেওয়া প্রতিশ্রুতিও রয়েছে।’ এ মেমো সম্পর্কে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলছে কি না, তা নিয়ে কংগ্রেসে প্রশ্ন তোলে ডেমোক্রেটিক আইনপ্রণেতারা। এরপরই একটি জাতীয় নিরাপত্তা স্মারক জারি করে বাইডেন। স্মারকলিপিতে নতুন কোনো আইনের কথা বলা হয়নি। তবে এতে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন না করার বিষয়ে মার্কিন অর্থায়নে অস্ত্রপ্রাপ্ত দেশগুলোর কাছ থেকে লিখিত প্রতিশ্রুতি নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
যদি ইসরায়েলের প্রতিশ্রুতি প্রশ্নবিদ্ধ হয় তাহলে বাইডেন যেকোনো সময় মার্কিন অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ বা এ নিয়ে শর্ত দিতে পারেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়। এরপর থেকে গাজায় বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। ছয় মাসের বেশি সময় ধরে চলা এই হামলায় এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ৭৭ হাজারের বেশি মানুষ।