ফাল্গুনে দীর্ঘ সময়ের শীত, চৈত্রের বৃষ্টি আর বৈশাখের খরতাপ। এ বছর বেড়ে ওঠার প্রতিটি ধাপে প্রকৃতির বৈরিতার সম্মুখীন মধুফল আম। এবার এই ফল টিকিয়ে রাখতে চাষিদের পরিশ্রমের কমতি নেই। এতে করে উৎপাদন ব্যয়ও বাড়ছে।
জ্বলন্ত গোলকের সৌর শিখার তপ্ত বিকিরণ। তাতে অনবরত পুড়ছে সবুজ। সতেজতা হারিয়ে বাড়ন্ত আমের গুটি রুগ্নকায়। বাগান জুড়ে লু-হাওয়া শুষে খাচ্ছে মাটির আর্দ্রতা। পানি শূন্যতায় পর্যাপ্ত ফল ধরে রাখতে পারছে না আম গাছ।
রাজশাহীর ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘খরার কারণে মাটিতে রসের অভাবে দেখা দেয়। আর মাটিতে যখন রসের অভাব হয়, তখন আমের বোটায় একটা স্তর তৈরি হয়। আর এই স্তর তৈরি হলে আম বোটা থেকে পৃথক হয়ে যায়। তখন আর গাছও আম ধরে রাখতে পারে না।’
ফল গবেষক ও বাগানিদের মতে, এ বছর রাজশাহীর বাগানগুলোতে ফাল্গুনের শীতে গেল বছরের তুলনায় ৪০ শতাংশ কম মুকুল আসে। এরপর বাড়ন্ত কুশিতে চৈত্রের বৃষ্টিতে অনেক মুকুল নষ্ট হয়। আর বৈশাখের শুরু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহে আমের গুটি ঝরে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় প্রত্যাশিত ফলন পাওয়া নিয়ে সংশয়ে বাগানিরা।
এক বাগানি বলেন, ‘বৃষ্টি হলে আমটা টিকে যেতো। আর ওষুধও কম লাগতো। সবমিলিয়ে আমের ফলনও ভালো হবে না।’
এ অবস্থায় গাছে আম টিকিয়ে রাখতে সেচ দেয়া হচ্ছে। গাছের পাতা, কান্ড আর ফল টেকসই করতে ভিটামিন স্প্রে করা হচ্ছে। ফলে প্রতি হেক্টরে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা খরচ বেড়েছে
এক আম চাষি বলেন, ‘এবার তাপের কারণে আম গাছে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এজন্য বেশি সেচ দিতে হচ্ছে। আর আমাদের খরচও বেড়ে গেছে।’
গেল বছরের বাম্পার ফলনের ওপর ভিত্তি করে এবার ১৮শ' কোটি টাকার আম বেচাকেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফলন কমায় তা অর্জন সম্ভব হবে না বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন ড. মো. শফিকুল ইসলাম।
তিনি আরও বলেন, ‘সবমিলিয়ে আমাদের যে ২ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তা পূরণ হবে না। আর কতটুকু আমের ফলন হবে তাও নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন।’