০৭:৩১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশে আড়াই হাজার কোটি টাকার আইসক্রিমের বাজার

সবার শৈশবেই আইসক্রিম ফেরিওয়ালার ঘণ্টা শুনতে কান পেতে রাখা দুপুর এসেছে। শুধু মহল্লায় নয়, স্কুল গেইটের সামনে রঙ মাখানো বরফে কাঠি ওয়ালা আইসক্রিম। কোনো কোনটিতে একটু নারকেল আর দুধের মিশেল। কাঠের বাকসোর ওপর লটারি। আর ২ থেকে ৩টি আইসক্রিম জিতে বরফের টুকরোয় বন্ধুদের সম্মিলিত কামড়। সেই আনন্দে সাদা মেঘও যেন আইসক্রিম হয়ে উঠতো।

বরফের তৈরি আইসক্রিমের রকমারি রূপ আছে। প্রকৃতির উষ্ণতায় চাহিদা বাড়লেও সারা বছরই আইসক্রিম সব বয়সীর জিভে আনে জল। আর দেশেই প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার আইসক্রিমের বাজার রয়েছে।

বরফের সেই রঙিন ও মালাই আইসক্রিম, টিনের সাঁচে তৈরি কুলফি আইসক্রিমের খুব একটা দেখা মেলে না। এসেছে আধুনিক ও নানা রংয়ের আইসক্রিম। এসব আইসক্রিমে হয়তো শৈশবের আবেগ নেই তবে তাতে কি! জিভের জলের তো ভাটা পড়ছে না। বর্তমানে চাহিদার শীর্ষে রয়েছে প্যাকেটজাত আইসক্রিম। তবে কোথাও কোথাও দেখা মিলছে দেশিয় প্রযুক্তির এ পণ্য। আর এবারের গরমে যেন এর চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ।

আইসক্রিম ক্রেতারা বলেন, ‘সবাই আইসক্রিম পছন্দ করে। আর এই গরমে আইসক্রিম খাওয়ার সুযোগ হলে তো বেশিই ভালো লাগে।’

প্যাকেটজাত আইসক্রিম ইন্ডাস্ট্রির ৩টি ভিত হলো- কাপ, চকবার ও কোন। বিভিন্ন ফ্লেভারের এই পণ্যটির ৯৫ শতাংশ কাঁচামাল বিদেশ থেকে আসে। চিনিসহ বাকি ৫ শতাংশ দেশেই পাওয়া যায়। বিশ্ববাজারে এসব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারেও তার প্রভাব পড়েছে।

দেশভাগ পরবর্তী ঢাকায় প্রথম আধুনিক আইসক্রিমের প্রচলন করে বেবি আইসক্রিম। তবে বর্তমানে মোট ৭টি কোম্পানি দেশের আইসক্রিমের ৯০ শতাংশ বাজার দখল করে আছে। গত বছর দেশের বাজারে আইসক্রিম বিক্রি হয়েছে মোট প্রায় ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকার। এ বছরে যা হতে পারে ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

ইগলু আইসক্রিমের সহকারী ব্যবস্থাপক (বিপণন বিভাগ) সুমিত চক্রবর্তী বলেন, ‘এবার স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে বেশিই ছিল। এজন্য আইসক্রিমের চাহিদাও তিন থেকে চার গুণ বেড়েছে।’

মার্চ, এপ্রিল, মে এবং জুন এই ৪ মাস আইসক্রিম বিক্রির সময়। এ সময় আইসক্রিমের মোট চাহিদার ৬০ শতাংশ বিক্রি হয়। এ বছর মার্চে গরম না পড়ায় এপ্রিল থেকে এই পণ্যের চাহিদা শুরু হয়। এবারের তীব্র গরমের সঙ্গে পণ্যটির চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। রাতের পালাসহ তিন ধাপে ২৪ ঘণ্টা কাজ করার পরও আইসক্রিমের চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না।

দেশের সব জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহের সঙ্গে সঙ্গে পৌঁছে গেছে আইসক্রিম। বিদ্যুতের কারণে দোকানে দোকানে রাখা যাচ্ছে ফ্রিজ আর সঙ্গে থাকছে আইসক্রিম। এবার দেশব্যাপী সর্বোচ্চ চাহিদায় পৌঁছেছে মোড়কজাত এ পণ্যটি। এ পরিস্থিতিতে কোম্পানিগুলো পণ্যভেদে ১০ থেকে ১৫ শতাংশের মতো দাম সমন্বয় করেছে।

খুচরা আইসক্রিম বিক্রেতারা বলেন, ‘আইসক্রিমের চাহিদা অনেক বেড়েছে। তবে আমরা আইসক্রিমই পাচ্ছি না। কোম্পানি আমাদের ডেলিভারি দিতে পারছে না।’

একটু প্রশান্তি পেতে সব বয়সী মানুষ আইসক্রিমের দোকানে ভিড় করছেন। তবে আইসক্রিম সবচেয়ে বেশি পছন্দ শিশুদের কাছে।

আইসক্রিম বিপণন বিশ্লেষক মো. আব্দুল বায়েস বলেন, ‘এবার এ বাণিজ্যিক খাতে প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৫ শতাংশ হওয়ার আশা করা হচ্ছে। তবে কিছু কোম্পানির ক্ষেত্রে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আসবে বলে মনে হচ্ছে।’

শুধু দোকান, সুপারশপ কিংবা শপিংমলেই আইসক্রিমকে ঘিরে আনাগোনা বাড়েনি। রাজধানীর অভিজাত হোটেলগুলোতেও বেড়েছে আইসক্রিমের চাহিদা। বিভিন্ন হোটেল এই গরমে আইসক্রিম উৎসবের আয়োজন করেছে। যেখানে হাতে বানানোসহ নানা স্বাদ ও সৌরভের আইসক্রিম পাওয়া যাচ্ছে।

উদ্ভাবন বাড়িয়ে আমদানিমুখী খাত থেকে সরে এসে নিজস্ব কাঁচামাল ব্যবহারের মাধ্যমে এই খাতকে আরও লাভজনক করা সম্ভব বলে আশা করেন আইসক্রিম উৎপাদক ও বিপণনকারীরা।

দেশে আড়াই হাজার কোটি টাকার আইসক্রিমের বাজার

আপডেট : ০২:০০:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ মে ২০২৪

সবার শৈশবেই আইসক্রিম ফেরিওয়ালার ঘণ্টা শুনতে কান পেতে রাখা দুপুর এসেছে। শুধু মহল্লায় নয়, স্কুল গেইটের সামনে রঙ মাখানো বরফে কাঠি ওয়ালা আইসক্রিম। কোনো কোনটিতে একটু নারকেল আর দুধের মিশেল। কাঠের বাকসোর ওপর লটারি। আর ২ থেকে ৩টি আইসক্রিম জিতে বরফের টুকরোয় বন্ধুদের সম্মিলিত কামড়। সেই আনন্দে সাদা মেঘও যেন আইসক্রিম হয়ে উঠতো।

বরফের তৈরি আইসক্রিমের রকমারি রূপ আছে। প্রকৃতির উষ্ণতায় চাহিদা বাড়লেও সারা বছরই আইসক্রিম সব বয়সীর জিভে আনে জল। আর দেশেই প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার আইসক্রিমের বাজার রয়েছে।

বরফের সেই রঙিন ও মালাই আইসক্রিম, টিনের সাঁচে তৈরি কুলফি আইসক্রিমের খুব একটা দেখা মেলে না। এসেছে আধুনিক ও নানা রংয়ের আইসক্রিম। এসব আইসক্রিমে হয়তো শৈশবের আবেগ নেই তবে তাতে কি! জিভের জলের তো ভাটা পড়ছে না। বর্তমানে চাহিদার শীর্ষে রয়েছে প্যাকেটজাত আইসক্রিম। তবে কোথাও কোথাও দেখা মিলছে দেশিয় প্রযুক্তির এ পণ্য। আর এবারের গরমে যেন এর চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ।

আইসক্রিম ক্রেতারা বলেন, ‘সবাই আইসক্রিম পছন্দ করে। আর এই গরমে আইসক্রিম খাওয়ার সুযোগ হলে তো বেশিই ভালো লাগে।’

প্যাকেটজাত আইসক্রিম ইন্ডাস্ট্রির ৩টি ভিত হলো- কাপ, চকবার ও কোন। বিভিন্ন ফ্লেভারের এই পণ্যটির ৯৫ শতাংশ কাঁচামাল বিদেশ থেকে আসে। চিনিসহ বাকি ৫ শতাংশ দেশেই পাওয়া যায়। বিশ্ববাজারে এসব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারেও তার প্রভাব পড়েছে।

দেশভাগ পরবর্তী ঢাকায় প্রথম আধুনিক আইসক্রিমের প্রচলন করে বেবি আইসক্রিম। তবে বর্তমানে মোট ৭টি কোম্পানি দেশের আইসক্রিমের ৯০ শতাংশ বাজার দখল করে আছে। গত বছর দেশের বাজারে আইসক্রিম বিক্রি হয়েছে মোট প্রায় ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকার। এ বছরে যা হতে পারে ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

ইগলু আইসক্রিমের সহকারী ব্যবস্থাপক (বিপণন বিভাগ) সুমিত চক্রবর্তী বলেন, ‘এবার স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে বেশিই ছিল। এজন্য আইসক্রিমের চাহিদাও তিন থেকে চার গুণ বেড়েছে।’

মার্চ, এপ্রিল, মে এবং জুন এই ৪ মাস আইসক্রিম বিক্রির সময়। এ সময় আইসক্রিমের মোট চাহিদার ৬০ শতাংশ বিক্রি হয়। এ বছর মার্চে গরম না পড়ায় এপ্রিল থেকে এই পণ্যের চাহিদা শুরু হয়। এবারের তীব্র গরমের সঙ্গে পণ্যটির চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। রাতের পালাসহ তিন ধাপে ২৪ ঘণ্টা কাজ করার পরও আইসক্রিমের চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না।

দেশের সব জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহের সঙ্গে সঙ্গে পৌঁছে গেছে আইসক্রিম। বিদ্যুতের কারণে দোকানে দোকানে রাখা যাচ্ছে ফ্রিজ আর সঙ্গে থাকছে আইসক্রিম। এবার দেশব্যাপী সর্বোচ্চ চাহিদায় পৌঁছেছে মোড়কজাত এ পণ্যটি। এ পরিস্থিতিতে কোম্পানিগুলো পণ্যভেদে ১০ থেকে ১৫ শতাংশের মতো দাম সমন্বয় করেছে।

খুচরা আইসক্রিম বিক্রেতারা বলেন, ‘আইসক্রিমের চাহিদা অনেক বেড়েছে। তবে আমরা আইসক্রিমই পাচ্ছি না। কোম্পানি আমাদের ডেলিভারি দিতে পারছে না।’

একটু প্রশান্তি পেতে সব বয়সী মানুষ আইসক্রিমের দোকানে ভিড় করছেন। তবে আইসক্রিম সবচেয়ে বেশি পছন্দ শিশুদের কাছে।

আইসক্রিম বিপণন বিশ্লেষক মো. আব্দুল বায়েস বলেন, ‘এবার এ বাণিজ্যিক খাতে প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৫ শতাংশ হওয়ার আশা করা হচ্ছে। তবে কিছু কোম্পানির ক্ষেত্রে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আসবে বলে মনে হচ্ছে।’

শুধু দোকান, সুপারশপ কিংবা শপিংমলেই আইসক্রিমকে ঘিরে আনাগোনা বাড়েনি। রাজধানীর অভিজাত হোটেলগুলোতেও বেড়েছে আইসক্রিমের চাহিদা। বিভিন্ন হোটেল এই গরমে আইসক্রিম উৎসবের আয়োজন করেছে। যেখানে হাতে বানানোসহ নানা স্বাদ ও সৌরভের আইসক্রিম পাওয়া যাচ্ছে।

উদ্ভাবন বাড়িয়ে আমদানিমুখী খাত থেকে সরে এসে নিজস্ব কাঁচামাল ব্যবহারের মাধ্যমে এই খাতকে আরও লাভজনক করা সম্ভব বলে আশা করেন আইসক্রিম উৎপাদক ও বিপণনকারীরা।